নতুন বছরে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের ১৮টি সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা

প্রকাশিতঃ 3:58 pm | January 17, 2019

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:

নতুন বছরে নিজস্ব গোয়েন্দা নেটওয়ার্ক তৈরিসহ ১৮টি সুনির্দিষ্ট কাজ করার অঙ্গীকার করেছেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের মহাপরিচালক (ডিজি) মো. জামাল উদ্দিন আহমেদ। এসবের বাইরে মাদক বিক্রি ও সরবরাহের সঙ্গে জড়িত অন্তত ৫০ জন গডফাদারকে গ্রেফতার করা হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

ডিজি বলেন, ‘গত বছর মাদক বিক্রেতাদের গ্রেফতারের পাশাপাশি অন্তত ৫০ জন গডফাদারকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। আমাদের অভিযান চলছে, চলবে। এ বছরও মাদক নির্মূলে কাজ করা হবে।’

তিনি বলেন, ‘গত বছরে যা কিছু অর্জন হয়েছে, তার ধারাবাহিকতা রক্ষায় নতুন বছরেও সুনির্দিষ্ট কিছু কাজ করতে চাই। এ ব্ছর নতুন জনবল কাঠামো তৈরি, নতুন আইন তৈরি, নতুন নিয়োগ বিধি প্রণয়ন, আরও তিনটি বিধিমালা প্রণয়ন, সবার জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা, অস্ত্র সংযোজন করা, নতুন ভবনে প্রধান কার্যালয় স্থাপন ও প্রতিটি জেলার জন্য ন্যূনতম একটি করে গাড়ি দেওয়ার ব্যবস্থা করতে চাই। এছাড়া, দেশজুড়ে ওয়্যারলেস নেটওয়ার্ক তৈরি, ডিজি থেকে সিপাহী— সবার জন্য পোশাকের ব্যবস্থা করা এবং বিভাগীয় শহরগুলোতে পঞ্চাশ শয্যার নিরাময় কেন্দ্র স্থাপনের কাজও এ বছরই করতে চাই।’

ডিজি জানান, চার বিভাগে চারটি কেমিক্যাল ল্যাব স্থাপন, নতুন ডিটেকটিং মেশিন সংগ্রহ করা, প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানের নির্মাণ শুরু ও নিজস্ব গোয়েন্দা নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার কাজ করবে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর। আর অধিদফতরের ৩৭টি সেবা অনলাইনে সহজলভ্য করার পাশাপাশি আটটি বিভাগীয় শহরে ডিজিটাল প্রচারণার ব্যবস্থা করার কথাও জানান ডিজি জামাল উদ্দিন।

ডিজি বলেন, ‘গত জানুয়ারিতে কাজের একটি তালিকা করেছিলাম। নতুন জনবল কাঠামো চূড়ান্ত হওয়ার পথে। গত ২৭ বছরে জনবল দাঁড়িয়েছিল ১ হাজার ৭০৬ জনে। গত এক বছরের প্রচেষ্টায় নতুন আরও ১ হাজার ৫৯৪টি নতুন পদ সংযোজিত হতে যাচ্ছে। সচিব কমিটির অনুমোদন শেষ পর্যায়ে রয়েছে। মোট কাজের অগ্রগতি ৯৫ শতাংশ।’

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের মহাপরিচালক (ডিজি) মো. জামাল উদ্দিন আহমেদ।

ডিজি জানান, নতুন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১৮ এরই মধ্যে জারি হয়েছে। এ ক্ষেত্রে অগ্রগতি শতভাগ। এর বাইরে নতুন নিয়োগবিধি প্রস্তুত করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে, যা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে বিবেচনাধীন। জনবলের কারণে অস্ত্র সংযোজন সম্ভব হয়নি। ২৭ বছরে অধিদফতরের যানবাহন দাঁড়িয়েছিল ৫২টি। গত এক বছরের প্রচেষ্টায় ৪৯টি গাড়ির অনুমোদন পাওয়া গেছে।

দেশের সব জেলাতে ওয়্যারলেস সেট সরবরাহ করে ব্যবহার শুরু হলেও ন্যাশনওয়াইড কানেকটিভিটি প্রস্তুত করা সম্ভব হয়নি বলে জানান ডিজি। এর জন্য সময় দরকার বলে জানান তিনি। বলেন, তবে অধিদফতরের জনবল কাঠামোর প্রতিটি ক্ষেত্রে পোশাক সংযোজনের বিধিমালা সংশোধন করা হয়েছে। এ বিধিমালা এখন মন্ত্রণালয়ে বিবেচনাধীন। এতে সিপাহী থেকে ইনসপেক্টর পর্যন্ত পোশাক বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

জামাল উদ্দিন বলেন, গতবছর উল্লেখ করার মতো অনেক কাজ হয়েছে। যেমন— কর্মচারীদের রেশনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আগামী মাস থেকেই কর্মীরা রেশন পাবে।

মাদকদ্রব্য ও পুলিশ সদর দফতর থেকে জানা যায়, ২০১০ সালে ২৯ হাজার ৬৬২টি, ২০১১ সালে ৩৭ হাজার ২৪৫টি, ২০১২ সালে ৪৩ হাজার ৭১৭টি, ২০১৩ সালে ৪০ হাজার ২৫০টি, ২০১৪ সালে ৫১ হাজার ৮০১টি, ২০১৫ সালে ৫৭ হাজার ১৩৪টি, ২০১৬ সালে ৬৯ হাজার ৭৩৯ টি ও ২০১৭ সালে ১ লাখ ৬৫ হাজার ৫৩৬টি মামলা করেছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর। আর সবচেয়ে বেশি মামলা হয়েছে ২০১৮ সালে, বছরটিতে দায়ের করা মামলার সংখ্যা প্রায় ২ লাখ। কোকেন, ফেনসিডিল, ইয়াবা, হেরোইন, চোলাই মদ, গাঁজা ও বিভিন্ন ধরনের ইনজেকশন জব্দের ঘটনায় এসব মামলা হয়েছে। মামলাগুলোতে আসামির সংখ্যা প্রায় তিন লাখ। তবে বেশিরভাগ আসামিই জামিনে মুক্তি পেয়েছেন।

এদিকে, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর, পুলিশ, বর্ডার গার্ড, র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব), কোস্টগার্ড ২০০৯ সাল থেকে ২০১৮ পর্যন্ত ১০ বছরের অভিযানে ৫ লাখ ৫৯ হাজার ৩৯৮টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় আসামির সংখ্যা ৭ লাখ ২ হাজার ৩৯৯ জন। অভিযানে জব্দ করা মাদকের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পাওয়া গেছে ইয়াবা। এর পরিমাণ ১৬ কোটি ১২ লাখ ৩৭ হাজার পিস। এই ইয়াবা আবার সবচেয়ে বেশি আটক হয়েছে ২০১৮ সালে— ৫ কোটি ৮০ লাখ ৩৮ হাজার ৭৫১ পিস।

এ ছাড়া অভিযানে হেরোইন আটক হয়েছে ১৮০৫ কেজি। সবচেয়ে বেশি আটক হয় ২০১৭ সালে— ৪০১ কেজি। অভিযানে ৪০ কেজি কোকেন, ১৪৪ কেজি আফিম, ৪ লাখ ৫৫ হাজার ৪৭৭ কেজি গাঁজা, ৭৯ লাখ ৮ আজার ৯৭৮ বোতল ফেনসিডিল, ১৮ লাখ ৪৮ হাজার ১১০ বোতল বিদেশি মদ, ৯ লাখ ৯০ হাজার ২৬৩ ক্যান বিয়ার ও ১১ লাখ ৯৮ হাজার ৯৭৯টি অ্যাম্পুল ইনজেকটিং ড্রাগ আটক হয়েছে।

মহাপরিচালক মো. জামাল উদ্দিন বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে প্রতিদিনই মাদক বিক্রেতা আটক হলেও থামছে না এর বিস্তার। কারণ মাদক বিক্রি সিন্ডিকেট পরিচালিত হয় পরিবারকেন্দ্রিক। এখন নতুন আইন হয়েছে। বিদ্যমান নতুন আইনে মাদকের বিস্তার ঠেকানোর জন্য অনেক কিছুই করা সম্ভব।’

কালের আলো/এএ/এমএইচএ

Print Friendly, PDF & Email