আমি বেঁচে রইলাম, সবাই মরলাম না কেন? গাজার তরুণীর প্রশ্ন
প্রকাশিতঃ 7:19 pm | November 08, 2023
আন্তর্জাতিক ডেস্ক, কালের আলো:
১৮ বছর বয়সী দিমা আল-লামদানি ইসরায়েলের বিমান হামলায় পরিবারের সব সদস্যকে হারিয়েছেন
ফিলিস্তিনের গাজায় এখনো একান্নবর্তী পরিবারের দেখা মেলে। মা-বাবা, ভাই-বোন, দাদা-দাদী এমনকি চাচা-চাচিরাও একই বাড়িতে একই সঙ্গে বসবাস করেন।
হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে গত ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া যুদ্ধের পর গাজার এমন অসংখ্য একান্নবর্তী পরিবার পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। আবার ভাগ্যক্রমে কিছু পরিবারের দুই বা একজন সদস্য বেঁচে গেছেন। ইসরায়েলিদের নির্বিচার বিমান হামলায় মুহূর্তের মধ্যেই এসব পরিবার পৃথিবীর বুক থেকে হারিয়ে গেছে।
ইসরায়েলের এমন বর্বরতার শিকার হওয়াদের একজন হলেন ১৮ বছর বয়সী দিমা আল-লামদানি। গাজার এই তরুণী— এক ভাই ও দুই চাচাত ভাই-বোন ছাড়া পরিবারের সব সদস্যকে ইসরায়েলের বোমা হামলায় হারিয়েছেন।
তিনি পরিবারের সঙ্গে উপকূলীয় শাতি শরণার্থী ক্যাম্পে থাকতেন। যখন ইসরায়েল বোমা হামলা শুরু করে এবং গাজাবাসীকে নিরাপত্তার জন্য দক্ষিণ দিকে সরে যেতে বলে— তখন পরিবারের সব সদস্যকে নিয়ে দিমা-আল-লামদানির বাবা দক্ষিণ দিকের খান ইউনিসে চলে আসেন। কিন্তু সেখানেও বিমান হামলা চালায় দখলদার ইসরায়েলি বাহিনী। এতে পরিবারের সব সদস্যকে হারান এ তরুণী। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে এ তরুণী আক্ষেপ করে বলেছেন, পরিবারের সবাই মারা গেলেও; তিনি কেন বেঁচে রইলেন।
দিমা-আল-লামদানি গার্ডিয়ানকে বলেছেন, গত ১৩ অক্টোবর যখন ইসরায়েল নির্দেশ দিল সবাইকে দক্ষিণ দিকে চলে যেতে হবে। তখন তার বাবা তার ভাইসহ সবাইকে ডেকে বললেন তাদের দক্ষিণ দিকে চলে যাওয়া উচিত। সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, সবাইকে নিয়ে এক বন্ধুর বাড়িতে আশ্রয় নেন তারা। জেনারেটর সচল রেখে যেন মোবাইলগুলো চার্জ দেওয়া যায় ও বাতিগুলো জ্বালানো যায় সেজন্য নিজেদের সঙ্গে পর্যাপ্ত জ্বালানি নিয়ে নেন তারা।
দুইদিন পর ভোরে নিজের আন্টির সঙ্গে বসে কফি খাচ্ছিলেন দিমা। তখনই তাদের বাড়ির ওপর হামলা চালানো হয়। হামলার পর তিনি জ্ঞান হারান। যখন তার জ্ঞান ফেরে তখন দেখতে পান তাকে ধ্বংসস্তূপ থেকে বাঁচানোর চেষ্টা চলছে।
হামলার সময় ওই বাড়িতে দিমার পরিবারের ১৭ জন সদস্যসহ ৫০ জন মানুষ ছিলেন। তার ভাই, দুই চাচাত-ভাইবোনই শুধুমাত্র ওই হামলায় বেঁচে যান।
এরপর নিজের মৃত বাবা-মা বোন ও অন্যান্য আত্মীয়দের শনাক্ত করতে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এই তরুণী জানিয়েছেন, হামলায় তার পরিবারের সদস্যদের মরদেহ এতটাই বিকৃত হয়ে যায় যে— তিনি তাদের চিনতে পারছিলেন না।ইসরায়েলের বোমা হামলায় সব হারানো এই তরুণী জানিয়েছেন, তিনি এখন স্বপ্ন দেখাও ভুলে গেছেন। তার জীবনে এখন আর কিছুই নেই। উল্টো তিনি ভাবছেন, ছোট ভাই-বোনগুলোকে কিভাবে তিনি এখন আগলে রাখবেন।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী দক্ষিণ দিকে নিরাপদ আশ্রয়ের কথা বলে তাদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান
কালের আলো/এসএমআর