দেশের বাজারে আমদানি-নির্ভর নিত্যপণ্যের ‘পর্যাপ্ত মজুত’ আছে : ভোক্তা ডিজি

প্রকাশিতঃ 9:54 am | February 27, 2023

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) এ.এইচ.এম. সফিকুজ্জামান বলেছেন, পণ্যের কোনও ঘাটতি নেই, বাজার ব্যবস্থাপনার ঘাটতি রয়েছে। চিনি, ছোলা, তেলসহ সব নিত্যপণ্যের পর্যাপ্ত মজুত আছে। সংকটের যে কথা বলা হচ্ছে— তা কৃত্রিম ও এটা বাজার অস্থির করার পাঁয়তারা।

রবিবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর কাওরান বাজারে অধিদফতরের সভা কক্ষে রমজান মাস উপলক্ষে নিত্যপণ্যের মূল্য স্থিতিশীল ও সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে অংশীজন ও ঢাকা সিটির অধীনে সব বাজার কমিটির অংশগ্রহণে মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা বলেন।

ব্যবসায়ীদের একে-অপরকে দোষারোপের অপসংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে সফিকুজ্জামান বলেন, ‘আমাদের দেশে মানুষের মধ্যে একটা বিষয় কাজ করে, রমজান এলেই দাম বাড়ে। আর এ বিষয়টার সুযোগ নেয় অসাধুরা। এই বিষয়টা বাজারে দাম বৃদ্ধি উসকে দেয়। এছাড়া দাম বৃদ্ধির বিষয়ে উৎপাদক, আমদানিকারক, পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা একে-অপরকে দোষারোপ করেন। এই বিষয়টা থেকেও বেরিয়ে আসতে হবে।’

তিনি জানান, আসন্ন রমজান মাস সামনে রেখে এবার বাজার মনিটরিংয়ে অধিদফতর ও মন্ত্রণালয়ের ৫০টি দল কাজ করবে। এছাড়া মনিটরিংয়ে দোকান মালিক সমিতি, বাজার কমিটিও থাকবে। এবার রমজানে কোনও বাজারে অস্থিরতা তৈরি হলে বাজার কমিটিকে দায় নিতে হবে।

সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি বলেন, ‘রমজান মাসে মানুষের প্রত্যাশা বেশি থাকে। এছাড়া বাজারে দোষারোপের বাজে খেলা তো আছেই। তবে মুক্তবাজার অর্থনীতিতে দাম বেঁধে দেওয়ার কথা নয়। পৃথিবীর বেশিরভাগ দেশ এই পদ্ধতিতে চলছে। অনেকে চেষ্টা করেছিল সরকার থেকে সবকিছুর দাম বেঁধে দিয়ে বা সরকার উৎপাদনশীল কাজ করবে। সেটা ব্যর্থ হয়ে গেছে। এখন ব্যক্তি স্বাধীনতা ও ব্যক্তি উদ্যোগের যুগ, মুক্তবাজার অর্থনীতির যুগ।’

বাণিজ্য সচিব বলেন, ‘মুক্তবাজার অর্থনীতিতে তো একটা নিয়ম আছে। সেই নিয়ম অনুযায়ী, উৎপাদন খরচ বা আমদানি খরচের সঙ্গে পরিবহন খরচ যোগ করে যা হয়, তা নিতে হবে। সেটা না নিয়ে যখন বিচ্যুতি দেখা যায়— তখনই সরকারের হস্তক্ষেপের প্রশ্ন আসে। যতটুকু লাভ করা প্রয়োজন, সেটুকু করলেই সরকারের হস্তক্ষেপ দরকার হয় না।’

বাজারে গরুর গোশত ও ডিম নিয়ে অস্থিরতার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘গরুর মাংস ও ডিম আমদানি খুলে দিলে এসবের দাম কমবে। কিন্তু বৃহৎ স্বার্থে তা আমদানি বন্ধ রাখা হয়েছে। এখন যদি গরু আমদানি করা হয়. তবে খামারিরা বিপদে পরবে। লাখো মানুষের কর্মসংস্থান ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’

সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত হয়ে এফবিসিসিআই সভাপতি জসিম উদ্দিন বলেন, ‘দুই-একজন অসাধু ব্যবসায়ীর জন্য সবার সুনাম নষ্ট হয়। রমজান আসলে বিশ্বের অনেক দেশে বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে অনেক দ্রব্যের দাম কমানো হয়। বিশেষ ছাড়ও দেওয়া হয়। সেখানে ছাড় দেওয়ার প্রতিযোগিতা চলে। কিন্তু আমাদের দেশে সেটা উল্টো। আমরাও এবার রমজানে সেই ধরনের কালচার তৈরি করতে চাই। চাইলেই তা সম্ভব।’

কনজুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, ‘কেউ যদি কৃত্রিম সংকট বা দাম বাড়িয়ে ব্যবসা করে, তাহলে তার বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। আমাদের এখানে বেশি অভিযান হয় খুচরা ব্যবসায়ীদের ওপর। কিন্তু যারা আমদানি করেন, উৎপাদন করেন এবং সংকট সৃষ্টি করে, তাদের প্রতিও দৃষ্টি দেওয়া দরকার।’

তিনি বলেন, ‘এছাড়া বাজারে যে অসুস্থ প্রতিযোগিতা চলছে তা বন্ধ করতে হবে। এজন্য প্রতিযোগিতা কমিশনকে আরও সোচ্চার হতে হবে। বাজারে যদি সুস্থ প্রতিযোগিতা থাকে, তবে পণ্যের মান ভালো হয়। ব্যবসায়ী, বিক্রেতা ও ভোক্তা সবাই লাভবান হয়।’

দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে দায়িত্ব নিতে হবে। যেন ডলারের দাম না বাড়ে। তাহলে আমরা রমজানের ৫-৬টি পণের দায়িত্ব নেবো।’

এস আলম গ্রুপের সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজার কাজী সালাউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আইন অনুযায়ী নির্ধারিত মূল্যেই আমরা বিক্রি করি। মিলারদের মধ্যে প্রতিযোগিতা হয়। সরকার নির্ধারিত যে মূল্য তার থেকে অনেক কম মূল্যে আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলো বিক্রি করে। আমরা কাউকে দোষারোপ করতে চাই না।’

ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (সিসিবি) এর চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আরিফুল হাসান রমজান মাসে ভোক্তাদের সংযমী হতে আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘এ মাসে টিসিবির ভর্তুকি মূল্যে পণ্য বিক্রির কার্যক্রম আরও গতিশীল হবে।’

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বাণিজ্য সংগঠন অনুবিভাগের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) মো. হাফিজুর রহমান ভোক্তাদের মিতব্যয়ী হতে এবং ব্যবসায়ীদের কম লাভ করে যৌক্তিক মূল্যে পণ্য বিক্রি করার অনুরোধ জানান।

বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের চেয়ারপারসন প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী সরকারের বিভিন্ন দফতরের সঙ্গে ব্যবসায়ী ও সংশ্লিষ্ট সংগঠনের সমন্বয় করে কাজ করার সংস্কৃতি তৈরির বিষয়ে পরামর্শ দেন।

এসময় বিভিন্ন বাজারের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা মুক্ত আলোচনায় তাদের মতামত জানান।

সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন অধিদফতরের পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ারসহ প্রধান কার্যালয়, ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয় এবং ঢাকা জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক ও সহকারী পরিচালকরা।

কালের আলো/বিএএ/এমএম