৯ হাজার আগুনের ঘটনাই শর্ট সার্কিট থেকে, ১ হাজার কোটি টাকার সম্পদ উদ্ধার
প্রকাশিতঃ 10:31 am | February 08, 2023

রাইসুল ইসলাম, কালের আলো:
২০২২ সালে শর্ট সার্কিট বা বৈদ্যুতিক গোলযোগ থেকেই সবচেয়ে বেশি আগুনের ঘটনা ঘটেছে। এতে মোট ঘটনার শংখ্য ৯ হাজার ২৭৫টি। যা মোট আগুনের ৩৮.৪৮ শতাংশ। এতে ক্ষতির পরিমাণ ১৩৩ কোটি ৬৭ লাখ ৪৮ হাজার ৪৯৭ টাকা। সিগারেটের জ্বলন্ত টুকরা থেকে আগুন লাগার ঘটনাও ঘটেছে ৩ হাজার ৮৭৮টি। যা মোট অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার ১৬.০৮ শতাংশ। সিগারেট-বিড়ির জ্বলন্ত টুকরার আগুনে ক্ষতি হয়েছে ৩৪ কোটি ৬৪ লাখ ৮৭ হাজার ১৬৪ টাকা। ২০২২ সালে সংঘটিত অগ্নিকান্ড নিয়ে সম্প্রতি প্রতিবেদনে এমনই তথ্য প্রকাশ করেছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর।
গত ৭ বছরের পরিসংখ্যানেও বেশিরভাগ আগুনের বড় কারণ হিসেবে চিহ্নিত বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট। নিম্নমানের তার ব্যবহারের কারণে এটি হয়ে থাকে। ফায়ার সার্ভিস সদর দপ্তরের প্রতিবেদন বলছে, ২০১৬ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত দেশে মোট অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ৯৯ হাজার ৭৫২টি। এর মধ্যে বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে আগুনের ঘটনা ৩৭ হাজার ৪০৪টি। যা মোট আগুনের ৩৭.৯২০ শতাংশ।
ফায়ার সার্ভিসের প্রতিবেদনের তথ্য মোতাবেক, গত বছর রাজধানীসহ সারা দেশে আগুনের ঘটনায় ক্ষতির পরিমাণ ৩৪২ কোটি ৫৮ লাখ ৫১ হাজার ৩৮৯ টাকা। ফায়ার সার্ভিসসহ অন্যান্যদের সহযোগিতায় ১ হাজার ৮০৮ কোটি ৩২ লাখ ৬৪ হাজার ৬৬০ টাকার সম্পদ উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইলেকট্রিক, গ্যাস ও মাটির চুলা থেকে সৃষ্ট অগ্নি দুর্ঘটনার সংখ্যা ৩ হাজার ৩৬৮, যা মোট অগ্নিকাণ্ডের ১৩.৯৮ শতাংশ। এতে ক্ষতির পরিমাণ ৮৩ কোটি ৫১ লাখ ২০ হাজার ৮২৯ টাকা। খোলা বাতির ব্যবহারে আগুনের সংখ্যা ৩২৭টি। যা মোট আগুনের ১.৩৭ শতাংশ। এছাড়া, উত্তপ্ত ছাই বা জ্বালানি থেকে আগুন ৪৮৮টি, ছোটদের আগুন নিয়ে খেলায় অগ্নিকাণ্ডের সংখ্যা ৬০২টি, যন্ত্রাংশের ঘর্ষণজনিত অগ্নিকাণ্ডের সংখ্যা ১৬৭টি, অগ্নিসংযোগ (শত্রুতামূলক ও উচ্ছৃঙ্খল জনতা কর্তৃক) ১৫৭টি, বজ্রপাত ও অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগে অগ্নিকাণ্ডের সংখ্যা ৪৮টি, বাজি ফোটানোর সময় ৯৪ অগ্নিকাণ্ড, মাত্রাতিরিক্ত তাপে ১৬৫ অগ্নিকাণ্ড, মেশিনের মিস ফায়ারে ১৬০টি, স্বতঃস্ফূর্ত প্রজ্বলনে ২৯টি, চিমনির স্ফুলিঙ্গ থেকে ১৩টি, স্থির বিদ্যুৎ থেকে ১৯টি, রাসায়নিক বিক্রিয়ায় ২৯টি, বিস্ফোরণ (সিলিন্ডার ও বয়লার) ৯৪টি, গ্যাস সরবরাহ লাইনের আগুন থেকে ৭৯৫টি, যানবাহনের দুর্ঘটনাজনিত কারণে ৩০৩টি এবং অজ্ঞাত কারণে ৪ হাজার ৯১টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।
ফায়ার সার্ভিসের ২০২১ সালের বার্ষিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালে সারা দেশে অগ্নিকাণ্ডের সংখ্যা ছিল ২১ হাজার ৬০১টি। ওই বছর বৈদ্যুতিক গোলযোগ থেকে ৭ হাজার ৯৫৫টি অগ্নি দুর্ঘটনা ঘটে। যা সে সময়কার মোট আগুনের ৩৬.৮২ শতাংশ। অপরদিকে, ২০২২ সালে রাজধানীসহ সারা দেশে আগুনের ঘটনা ঘটেছে ২৪ হাজার ১০২টি। অর্থাৎ ২০২২ সালে বৈদ্যুতিক গোলযোগে অগ্নিকাণ্ডের সংখ্যা বেড়েছে ১ হাজার ৩২০টি। একইভাবে ২০২১ সালে বিড়ি-সিগারেটের টুকরো থেকে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ছিল ৩ হাজার ১৯৩টি। সে তুলনায় ২০২২ সালে এ থেকে অগ্নিকাণ্ড বেড়েছে ৬৮৫টি।
এদিকে, অগ্নিকান্ডে ২০২২ সালে মৃত্যু ও আহতের সংখ্যা কমেছে। ২০২২ সালে ২৪ হাজার ১০২টি অগ্নি দুর্ঘটনায় ৭২ জন পুরুষ ও ১৩ জন নারী নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৩০৩ পুরুষ ও ৭৪ নারী। ২০২১ সালে নিহতের সংখ্যা ছিল পুরুষ ১১৬ জন এবং নারী ১০৩ জন। আহত হয়েছিল পুরুষ ৪১৭ জন আর নারী ১৫৩ জন।
এদিকে, আইনগত দিক থেকে অন্যান্য দেশের ন্যায় বাংলাদেশেও ফায়ার সার্ভিস বেশ শক্তিশালী। তবে শুধু ফায়ার ফাইটিং উইং শক্তিশালী করলেই হবে না এখানে প্রিভেনটিভ উইং বেশ দুর্বল। এই উইংকে শক্তিশালী করার পরামর্শ দিয়েছে ফায়ার সার্ভিস। জানতে চাইলে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক (ডিজি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিন বলেন, ‘ফায়ার সার্ভিসের প্রিভেনটিভ উইং এখনো দুর্বল। ফায়ার সার্ভিসের অর্গানোগ্রাম অনেক পুরনো। ফায়ার স্টেশন বাড়ে, লোকবলও বাড়ে। কিন্তু প্রিভেনটিভ উইং, নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট বা টানেলের উইং, মেট্রোরেল উইং কিছুই হয়নি। এগুলো করতে হবে।’
কালের আলো/একে/এমএম