পুনর্মিলনীতে স্মৃতি রোমন্থনে জুড়ায় প্রাণ, উন্নয়ন-অগ্রগতির ধারাপাত সেনাপ্রধানের কন্ঠে

প্রকাশিতঃ 9:21 pm | February 03, 2023

বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো:

বর্ণিল এক সাজ। সাবেক শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখর সবুজ চত্বর। বয়সকে হার মানিয়ে কৈশোরের মধুমাখা দিনগুলোতে কয়েক মুহুর্তের জন্য হারিয়ে যাওয়া। তারুণ্যের দুরন্তপনার সঙ্গীদের সঙ্গে নির্ভার আড্ডা, আনন্দধারায় মেতে ওঠা। গল্প আর স্মৃতি রোমন্থনে যেন ফিরে আসে অতীত। পুরোনো বন্ধু, সতীর্থ, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের দীর্ঘ সময় পর পেয়ে দু:খ-সুখের আলাপে জুড়িয়েছে প্রাণ। হালের ট্র্যান্ড সেলফি তোলায় নিমগ্ন প্রত্যেকে, বন্দি একে অপর।

আবেগ-স্মৃতিচারণায় ছুঁয়ে যায় পাবনা ক্যাডেট কলেজ চত্বর। পাবনা ক্যাডেট কলেজের অষ্টম পুনর্মিলনী উৎসব তাই যেন পুনর্মিলন নয় এক মহামিলনের সূত্রপাত করেছে। যেখানে আবেগ-বাস্তবতার সিক্যুয়েন্সে ২৮ বছর আগের স্মৃতিকাতরতায় আচ্ছন্ন হয়েছেন স্বয়ং বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ড.এস এম শফিউদ্দিন আহমেদও। গানের সেই কলির মতো প্রাণ জুড়িয়েছে তাঁরও।

অস্ফুটে হয়তো তাঁর মনও ফিরে গেছে রংধনু আঁকা সেইক্ষণে। বঙ্গবন্ধুকন্যা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের উন্নয়নের গতিময় অভিযাত্রায় তিনি অনুভব করেছেন পাবনা ক্যাডেট কলেজের ঠিক ২৮ বছর আগের-পরের চিত্রপট। নিজের জবানীতে তুলে এনেছেন সেই কথা। বলেছেন, ‘আমি এই ক্যাডেট কলেজে ১৯৯৫ সালে একবার এসেছিলাম। আজ লক্ষ্য করেছি অনেক ইতিবাচক পরিবর্তন। এই পরিবর্তন অবশ্যই অভূতপূর্ব উন্নয়ন-অগ্রগতির পরিবর্তন।’

স্বাধীনতার রূপকার বঙ্গবন্ধুর মহিমান্বিত স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা
সাপ্তাহিক ছুটির দিনে শুক্রবার (৩ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে পাবনা ক্যাডেট কলেজের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের অষ্টম পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সেনাপ্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ বাঙালির অনন্ত প্রেরণার উৎস, মহান জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ ও মহিমান্বিত স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করে বলেন, ‘আমরা এখানে আসতাম না যদি না বাংলাদেশ স্বাধীন হতো।

আমি শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করতে চাই আমাদের স্বাধীনতার মূল নায়ক হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। আমি গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করতে চাই ৩০ লাখ শহীদকে যাদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমরা এই দেশ পেয়েছি। বিশেষভাবে শ্রদ্ধা জানাতে চাই বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও সশস্ত্রবাহিনীর সেসব সদস্যদের যারা স্বাধীনতা যুদ্ধ ও দেশে-বিদেশে আমাদের জন্য প্রাণ দিয়েছে।’

মাতৃভাষার জন্য প্রাণ দেওয়া অনন্য এক উদাহরণ
ভাষা আন্দোলনের পথ বেয়েই মুক্তিযুদ্ধ অত:পর স্বাধীনতা। মায়ের ভাষার অধিকার আদায়ে একমাত্র প্রাণ দিয়েছে বাঙালি জাতিই। একুশের প্রেরণা আজও পথ দেখায় বাঙালিকে। একুশের চেতনা বুকে লালন করে মাতৃভাষায় আবেগ উচ্ছ্বসিত প্রাণে গৌরব ও আত্মত্যাগের ভাষার মাসে সেনাপ্রধান শ্রদ্ধাবনতচিত্তে স্মরণ করেন ভাষা শহীদদের।

তিনি বলেন, ‘আজ আমরা মাতৃভাষায় বাংলায় কথা বলছি। পৃথিবীতে অনন্য উদাহরণ ভাষার জন্য আন্দোলন করে মানুষ প্রাণ দিয়েছে এবং মাতৃভাষাকে প্রতিষ্ঠিত করে গেছে। এমন গৌরবের মাসে ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে চাই।’ তাঁর বক্তব্যেও স্পষ্ট বুকের রক্ত দেওয়ার গৌরবময় শোকের ঐতিহ্য রূপান্তরিত হয়েছে বিশ্বজনীন আনন্দে। অর্জিত হয়েছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের মর্যাদা।

ক্যাডেটদের সঙ্গে সম্পর্কিত আগামীর বাংলাদেশ
ক্যাডেটদের সঙ্গে আগামীর বাংলাদেশ সম্পর্কিত বলেও মন্তব্য করেন সেনাপ্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, ‘সরকার ক্যাডেটদের দক্ষ করে গড়ে তুলতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। ক্যাডেট কলেজগুলোতে ব্যাপক উন্নয়ন করা হয়েছে। পাবনা ক্যাডেট কলেজেও ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে।’

ক্যাডেটদের সুনাগরিক হিসেবে গড়ে উঠার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, ‘ক্যাডেট কলেজ ক্যাডেটদের জন্য বড় একটা সুযোগ। কারণ এখানে সবাই সুযোগ পায় না। সরকার ক্যাডেটদের জন্য প্রচুর অর্থ খরচ করে। এটাকে কাজে লাগাতে হবে। কেননা এটা জীবনের মূল এবং গুরুত্বপূর্ণ অংশ।’

আন্ত:বাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানায়, সকালে সেনাবাহিনী প্রধান ক্যাডেট কলেজ প্রাঙ্গনে পৌঁছালে প্রাক্তন এবং বর্তমান ক্যাডেটের নিয়ে গঠিত একটি দল মনোজ্ঞ কুচকাওয়াজের মাধ্যমে তাঁকে অভিবাদন জানান। তিনি ক্যাডেটদের জন্য নবনির্মিত তিনটি হাউসের শুভ উদ্বোধন করেন। পুনর্মিলনীতে আগত প্রাক্তন ছাত্রদের সাথে মতবিনিময় ছাড়াও পুনর্মিলনী উপলক্ষে আয়োজিত মধ্যাহ্নভোজ, বৃক্ষরোপণ এবং দিনব্যাপী বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালাতে অংশগ্রহণ করেন জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ।

পুনর্মিলনী প্যারেডে মুগ্ধতা
ক্যাডেট কলেজের পুনর্মিলনীকে ঐতিহ্যবাহী অনুষ্ঠান বলেও উল্লেখ করেন সেনাপ্রধান। পাবনা ক্যাডেট কলেজের পুনর্মিলনী প্যারেডে নিজের মুগ্ধতার কথা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘আজকের প্যারেড দেখে আমি মুগ্ধ। এখানে নানান বয়সের নানান পেশার এক্স ক্যাডেটরা একত্রিত হয়েছেন, যেভাবে সুশৃঙ্খলভাবে দাঁড়িয়েছেন আমি সত্যিই বিমোহিত। বিভিন্ন এক্স ক্যাডেটদের আগমন নিজেদের বন্ধনকে দৃঢ় করে। এই বন্ধন ভবিষ্যতে ব্যক্তিগত ও সামগ্রিকভাবে দেশের কাজেও অবদান রাখবে। বর্তমান ও প্রাক্তন ক্যাডেটদের মিলনমেলায় নতুনরা বড় ভাইদের কাছে শিখতে পারবে ডিসিপ্লিন জীবনের শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত কতো গুরুত্বপূর্ণ।’

অনুষ্ঠানে জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার (এনএসআই) মহাপরিচালক (ডিজি) মেজর জেনারেল টি এম জোবায়ের, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অ্যাডজুটেন্ট জেনারেল (এজি) মেজর জেনারেল মো. নজরুল ইসলাম, ১০ পদাতিক ডিভিশনের জেনারেল অফিসার কমান্ডিং (জিওসি) ও কক্সবাজারের এরিয়া কমান্ডার মেজর জেনারেল মো. ফখরুল আহসান, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মাস্টার জেনারেল অব অর্ডন্যান্স মেজর জেনারেল মো. জহিরুল ইসলাম, ১১ পদাতিক ডিভিশনের জেনারেল অফিসার কমান্ডিং (জিওসি) ও বগুড়ার এরিয়া কমান্ডার মেজর জেনারেল মো. খালেদ-আল-মামুন, ডিফেন্স সার্ভিসেস কমান্ড অ্যান্ড স্টাফ কলেজের কমান্ড্যান্ট মেজর জেনারেল মো. ফয়জুর রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

কালের আলো/এমএএএমকে

Print Friendly, PDF & Email