জাতিসংঘে মিয়ানমার ইস্যুতে রেজুল্যুশন গৃহীত

প্রকাশিতঃ 10:52 am | December 22, 2022

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:

জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে প্রথমবারের মতো ‘মিয়ানমারের পরিস্থিতি’ বিষয়ক একটি রেজুল্যুশন গৃহীত হয়ে‌ছে। মিয়ানমারের বিদ্যমান রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, জরুরি অবস্থা, বন্দিদের মুক্তিসহ বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরে রেজুল্যুশনে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের বিষয়টিকে প্রাধান্য দেওয়া হয়ে‌ছে।

স্থানীয় সময় বুধবার (২১‌ ডি‌সেম্বর) নিউইয়র্কে জাতিসংঘে ভোটাভুটির মাধ্যমে রেজুল্যুশনটি গৃহীত হয়।

রেজুল্যুশনটির উপর ভোট আহবান করা হলে তা ১২-০ ভোটে অনুমোদিত হয়। ভোটাভুটি পর্বে এই প্রস্তাবনার বিপক্ষে কোন সদস্য ভোট অথবা ভেটো প্রদান করেনি। চীন, ভারত ও রাশিয়া ভোটদানে বিরত ছিল।

ভোটদান শেষে সংযুক্ত আরব আমিরাত, ফ্রান্স, মেক্সিকো, গ্যাবন এবং নরওয়ে তাদের বক্তব্যে রেজুল্যুশনটিতে রোহিঙ্গা সংকটের বিষয়টি অন্তর্ভুক্তি করণের প্রশংসা করে এই সমস্যা সমাধানে নিরাপত্তা পরিষদের জোরালো ভূমিকার দাবি জানান।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার বক্তব্যে রেজুল্যুশনটি উত্থাপন করার জন্য যুক্তরাজ্যকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে। বলা বাহুল্য, এই রেজুল্যুশনটি রোহিঙ্গা বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের অবস্থানের প্রতি জাতিসংঘের সবচেয়ে ক্ষমতাধর অঙ্গটির শক্তিশালি সমর্থনেরই বহিঃপ্রকাশ।

রাশিয়া-ইউক্রেন সংকটসহ অন্যান্য বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জের প্রেক্ষাপটে গৃহীত রেজল্যুশনটি রোহিঙ্গা সংকটের প্রতি বিশ্ব সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আরো সুসংহত করতে সহায়ক হবে বলে আশা করা যায়। মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের অমানবিক নির্যাতনের স্বীকার হয়ে ২০১৭ সালে ৮ লক্ষাধিক রোহিঙ্গাসহ এ পর্যন্ত ১.২ মিলিয়নের অধিক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মানবিক কারণে তাদের অস্থায়ীভাবে বাংলাদেশে আশ্রয় প্রদান করেন এবং শুরু থেকেই তাদের মাতৃভূমি মিয়ানমারে নিরাপদ, টেকসই ও মর্যাদাপূর্ণ প্রতাবসনের নিমিত্ত্ব বিশ্ব নেতৃবৃন্দের কাছে জোরালো দাবি উত্থাপন করে আসছেন। এই প্রস্তাবনা অনুমোদিত হওয়ার ফলে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানের বিষয়টি নিরাপত্তা পরিষদের নিয়মিত কার্যকলাপের অংশ হয়ে গেল।

একই সাথে এটি রোহিঙ্গা সমস্যার দ্রুত ও স্থায়ী সমাধানে বাংলাদেশের এতদসংক্রান্ত অব্যাহত প্রচেষ্টাকে আরো শক্তিশালি ও ত্বরান্বিত করবে। রেজুল্যুশনটিতে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয়, নিরাপত্তা ও মানবিক সহযোগিতা প্রদানের জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রশংসা করা হয়। পরিষদ রোহিঙ্গা সঙ্কটের মূল কারণগুলো চিহ্নিত করে তাদের নিরাপদ, টেকসই ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবসনের নিমিত্ত্ব অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টির জন্য মিয়ানমার কর্তৃপক্ষকে আহবান জানায়। মিয়ানমারের বর্তমান রাজনৈতিক অস্থিরতা যে রোহিঙ্গাদের তাদের নিজ বাসভূমি মিয়ানমারে প্রত্যাবসনের ওপর নেতিবাচক প্রভাব বিস্তার করবে এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তাকে ঝুঁকিতে ফেলবে, সে বিষয়টি দৃঢ়ভাবে তুলে ধরা হয়।

এছাড়া, এ সমস্যার সমাধানে আসিয়ানের সদস্য রাষ্ট্রসমূহের ২০২১ সালে গৃহীত পাঁচ দফা ঐক্যমত্যের দ্রুত ও পূর্ণবাস্তবায়নের উপর গুরুত্বারোপ করা হয় এবং এর বাস্তবায়নে জাতিসংঘের কোন সহযোগিতার প্রয়োজন হবে কিনা সে বিষয়ে জাতিসংঘ মহাসচিব এবং জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন মিয়ানমার বিষয়ক বিশেষ দূতকে আগামি ১৫ মার্চের মধ্যে নিরাপত্তা পরিষদে একটি প্রতিবেদন পেশ করার জন্য অনুরোধ করা হয়। জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন রেজল্যুশনটিতে বাংলাদেশের স্বার্থ সংরক্ষণে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে।

বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ আব্দুল মুহিত নিরাপত্তা পরিষদের গুরুত্বপূর্ণ স্থায়ী ও অস্থায়ী বিভিন্ন সদস্য রাষ্ট্রের সাথে প্রয়োজনীয় দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন এবং বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো যাতে রেজল্যুশনে অন্তর্ভুক্ত হয়, সে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

উল্লেখ্য, রেজুল্যুশনটির পেন হোল্ডার (মূল স্পন্সর) পরিষদের অন্যতম স্থায়ী সদস্য যুক্তরাজ্য। বিগত তিনমাস ধরে রেজুল্যুশনটির নেগোশিয়েশন শেষে এটি নিরাপত্তা পরিষদে গৃহীত হয়। নিরাপত্তা পরিষদের ডিসেম্বর ২০২২ এর সভাপতি ভারত এবং তাদের সভাপতি থাকাকালীন সময়েই রেজুল্যুশনটি নিরাপত্তা পরিষদে গৃহীত হল। এর ফলে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে বহুপাক্ষিক কূটনীতিতে এক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রচেষ্টায় সফল হল বাংলাদেশ।

কালের আলো/এনএল/বিএসপি

Print Friendly, PDF & Email