ফায়ার সার্ভিসকে আরও যুগোপযোগী করতে চান প্রধানমন্ত্রী
প্রকাশিতঃ 1:44 pm | November 15, 2022

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাকর্মযজ্ঞের সূচনা হয়েছে তাঁর হাত ধরেই। বেড়েছে সকল সদস্যের উৎসাহ ও মনোবল। অধিদপ্তরটির সক্ষমতা বাড়াতে নানামুখী কার্যক্রমের ফলে সূচনা হয়েছে নব দিগন্তের। দীর্ঘ ৬ বছর পর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সপ্তাহের উদ্বোধন করে সংস্থাটিকে আরও যুগোপযোগী করে গড়ে তোলার দৃঢ় অঙ্গীকারের কথা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আরও পড়ুন: দু:সময়ের বন্ধু ফায়ার সার্ভিস
দেশের যেকোন দুর্যোগ দুর্বিপাকে সব সময় ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা সবার আগে ছুটে যান-এমন প্রশংসা বাণীও উচ্চারণ করেছেন সরকারপ্রধান। বলেছেন, ‘তাদের আরও যুগোপযোগী করা এটা একান্তভাবে প্রয়োজন। আর সেই পদক্ষেপটা আমরা নিয়েছি। এর সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য এবং সেবার ক্ষেত্রটা আরও সম্প্রসারণ করার বিভিন্ন পদক্ষেপ আমরা গ্রহণ করেছি। ফায়ার সার্ভিস সম্পূর্ণ সক্ষমতার এবং উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানে যাতে রূপান্তরিত হয়, সেই ব্যবস্থাই আমরা গ্রহণ করেছি।’
নিজের দীর্ঘ বক্তব্যে ২০৪১ সালের উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলার নিজের দৃঢ় প্রতিজ্ঞা, প্রত্যয় ও লক্ষ্যের কথাও পুনর্ব্যক্ত করেন বঙ্গবন্ধুকন্যা।
আরও পড়ুন: প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা বিনির্মাণে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ফায়ার সার্ভিস ডিজি
মঙ্গলবার (১৫ নভেম্বর) সকালে চলতি বছরের ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সপ্তাহ’র উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে গণভবন প্রান্ত থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির ভাষণে এসব কথা বলেন সরকারপ্রধান। এবারের ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সপ্তাহ’র প্রতিপাদ্য নির্ধারিত হয়েছে- ‘দুর্ঘটনা ও দুর্যোগ হ্রাস করি, বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ি’।
অনুষ্ঠানে রাজধানীর মিরপুরে ফায়ার সার্ভিস ট্রেনিং কমপ্লেক্সের প্যারেড গ্রাউন্ডে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি বেনজীর আহমেদ। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিন। বক্তব্য রাখেন সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব মো. আবদুল্লাহ আল মাসুদ চৌধুরী।
আরও পড়ুন: প্রধানমন্ত্রীর দিকনির্দেশনায় আরও গতিশীল হবে ফায়ার সার্ভিসের কার্যক্রম : সচিব
প্যারেড কমান্ডার আনোয়ারুল হকের নেতৃত্বে প্রধানমন্ত্রীকে এ সময় রাষ্ট্রীয় সালাম প্রদান করা হয়। অনুষ্ঠানে বীরত্বপূর্ণ অবদান রাখায় চার ক্যাটাগরিতে ৪৫ ফায়ার ফাইটারকে পদক দেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে তাদের হাতে পদক তুলে দেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল।

৩০ হাজার জনবল ও আজীবন রেশন প্রদান
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সদস্যদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি মনে করি যেকোনো ঝুঁকি হ্রাস করা, মানুষের নিরাপত্তা দেয়া, সেই সঙ্গে উন্নয়নের কাজগুলো দ্রুত, ত্বরান্বিত করা, মানসম্মত করা। এটাই হচ্ছে আমাদের সবার প্রচেষ্টা। কাজেই আমরা চাই আমাদের দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাক। দেশ যত এগিয়ে যাবে, এ দেশের মানুষ তত ভালো থাকবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি জানি, সারা জীবন আগুন-ধোঁয়ায় কাজ করতে হয় বিধায় প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা অবসর বয়সে নানা রকম ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে যায়। এ কারণে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের আজীবন রেশন প্রদানের পরিকল্পনাও আমাদের রয়েছে। আমরা সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করব। এই প্রতিষ্ঠানের জনবল ৩০ হাজারে উন্নীত করার কাজও হাতে নেয়া হয়েছে।’
প্রতি উপজেলায় ফায়ার স্টেশন ও বঙ্গবন্ধু ফায়ার একাডেমি
প্রতিটি উপজেলায় ফায়ার স্টেশন নির্মাণের যে ঘোষণা সরকার দিয়েছিল, তা বাস্তবায়ন শেষ পর্যায়ে রয়েছে বলেও জানান সরকারপ্রধান। তিনি বলেন, ‘আমরা চাই, যারা এ কাজে সম্পৃক্ত হচ্ছেন তারা যেন উন্নত মানের প্রশিক্ষণ পান। কাজেই সেদিকে লক্ষ্য রেখে আমরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ফায়ার একাডেমি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছি।’
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ১ হাজার ১৮৪ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিদেশে পাঠিয়ে পেশাগত বিষয়ে উন্নত প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘ফায়ার সার্ভিসের জনবল ৬ হাজার ১৭৫ জন থেকে বৃদ্ধি করে ১৪ হাজার ৪৪৩ জনে উন্নীত করেছি। ফায়ার স্টেশন এখন ৪৯১টি। আরও ৫২টি নতুন স্টেশন চালু হবে।’

সেবার সক্ষমতা বাড়াতে ফায়ার সার্ভিসের বহরে বিভিন্ন উচ্চতার মই-সংবলিত ২৬টি গাড়ি যুক্ত হয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিশ্বের সর্বাধিক উচ্চতা ৬৮ মিটারের ল্যাডার-সংবলিত টিটিএল গাড়ি ফায়ার সার্ভিসের বহরে যোগ হয়েছে। ৬৮ মিটারের ৫টি গাড়ি কেনা হয়েছে।’
এই অর্থবছরে আরও কিছু আধুনিক যন্ত্র কেনার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলে জানান সরকারপ্রধান। লিঙ্গ সমতা নিশ্চিত করে ট্রান্স জেন্ডারদেরও যাতে নিয়োগ দেয়া যায় সে জন্য ‘ফায়ারম্যান’ পদের নাম পরিবর্তন করে ‘ফায়ার ফাইটার’ করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
সরকারপ্রধান বলেন, ‘নিজের জীবন বাজি রেখে মানুষের কল্যাণ করা, মানুষকে উদ্ধার করা-একটা মহৎ কাজে তারা নিয়োজিত রয়েছেন। কাজেই ফায়ার সার্ভিসের প্রতি সদস্য দু:সময়ের বন্ধু হিসেবেই মানুষের কাছে প্রতীয়মান।’ ‘ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টে আমরা ২০ কোটি টাকা অনুদান দিয়েছি। আমি মনে করি যেহেতু সংখ্যা বেড়ে গেছে এখানে আরও ২০ কোটি টাকা আমি অনুদান দেব’-যোগ করেন বঙ্গবন্ধুকন্যা।
তিনি বলেন, ‘গত ১০ বছরে এই প্রতিষ্ঠানের সদস্যরা ১ লাখ ৯২ হাজার ৮৭টি অগ্নি-দুর্ঘটনায় অংশ নিয়ে ১৬ হাজার ৩০৩ কোটি ৬০ লাখ টাকার সম্পদ রক্ষা করতে সক্ষম হয়েছে এই প্রতিষ্ঠান। এই সময়ের প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা ১ লাখ ২৯ হাজার ৭৯৯টি অ্যাম্বুলেন্স কলের মাধ্যমে ১ লাখ ২৬ হাজার ৮৩৯ জন রোগী হাসপাতালে পৌঁছে দিয়েছেন।’
বাংলাদেশের অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রা কেউ থামাতে পারবে না
বাংলাদেশের অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রা কেউ থামাতে পারবে না জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আমরা এগিয়ে যাব। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব আমাদের স্বাধীনতা দিয়ে গেছেন। তার বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষ সুন্দরভাবে বাঁচবে, উন্নত জীবন পাবে, শিক্ষায়-দীক্ষায় উন্নত হবে, সেই লক্ষ্য ইনশাআল্লাহ আমরা বাস্তবায়ন করব।’

তিনি বলেন, ‘আমরা এগিয়ে যাবো। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো আমাদের উন্নয়নের যে গতি, তা কিছুটা হলেও শ্লথ হয়ে গেছে। এর মূল কারণ হলো একদিকে করোনাভাইরাসের অভিঘাত, অন্যদিকে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে নিষেধাজ্ঞার বিপরীতে নিষেধাজ্ঞা। যার ফলে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিয়েছে। এই মন্দা মোকাবিলার জন্য এখন থেকে আমাদেরও প্রস্তুতি নিতে হবে।
চারবারের এই সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমি আহ্বান করেছি, যার যেখানে কর্মস্থান, সারা বাংলাদেশে এত আমরা ফায়ার সার্ভিস স্টেশন করে দিয়েছি, প্রত্যেকে যার যার যেখানে জমি আছে, যা পারেন তরকারি, ফলমূল যা পারেন, আপনারা বৃক্ষরোপণ করবেন, প্রতিটি জায়গায় কিছু না কিছু উৎপাদন করবেন। নিজেদের যে চাহিদা পূরণ করবার, নিজেরাই চেষ্টা করবেন। বিশ্বের এই মন্দার ধাক্কাটা যেন আমাদের দেশে না পড়ে। তার জন্য সবাইকে একযোগে কাজ করার জন্য আমি আহ্বান জানাচ্ছি।’
কালের আলো/পিএম/এনএল