বিচ্ছিন্ন নয় ঐক্যবদ্ধ থাকা ইসলামের শিক্ষা

প্রকাশিতঃ 10:41 am | October 21, 2022

মাহমুদ আহমদ:

বিভেদ বা সংঘাত নয়, সত্য প্রতিষ্ঠা এবং একক নেতৃত্বের অধীনে থেকে জীবন অতিবাহিত করার শিক্ষাই পবিত্র কুরআন ও হাদিসে বার বার তাগিদ দেওয়া হয়েছে। ইসলাম শান্তি ও ঐক্যের ধর্ম। ঐক্য প্রতিষ্ঠাই ইসলামের মূল লক্ষ্য। আজ আমরা লক্ষ্য করছি মুসলমানরা শতধা বিভক্ত, তাদের মাঝে নেই ঐক্য। অথচ ইসলামি একক নেতৃত্ব যে মানুষকে প্রকৃত সুখ-শান্তি আর নিরাপত্তা দিতে পারে এই ব্যাপারে যদিও সবাই আজ একমত কিন্তু এটি সম্ভব হয়ে উঠছে না।

আল্লাহপাক বলেন, ‘হে ইমানদারগণ! আল্লাহকে যেমন ভয় করা উচিত ঠিক তেমনিভাবে ভয় করতে থাক এবং অবশ্যই মুসলমান না হয়ে মৃত্যুবরণ করোনা। আর তোমরা আল্লাহর রজ্জুকে সুদৃঢ় হস্তে ধারণ করোনা; পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না’ (সুরা আলে ইমরান)।

ইসলাম শান্তির ধর্ম। এই ধর্মের অনুসারী সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে এবং তারা যেন বিচ্ছিন্ন না হয়। তাই ইসলাম মানুষের মনে অসাধারণ গুণের ও মাহত্বের উন্মেষ ঘটাবে এটাই স্বাভাবিক। প্রকৃতপক্ষে বাস্তবে ঘটেছেও তাই। আমরা ইতিহাস পাঠে জানতে পারি, প্রথম যুগের ইসলাম অনুসারীদের মাঝে দেখা গেছে বহু অসাধারণ গুণের ও মাহত্বের সমবেশ।

একনিষ্ঠ ইসলামের অনুসারীরা হয়েছে সকল অসাধারণ মানবিক, নৈতিক ও মহৎ গুণের অধিকারী। এ জন্যই ইসলামের অনুসারী মুসলমানরা সর্বক্ষেত্রে অতি আশ্চর্যজনক সাফল্য লাভ ও সুমহান কীর্তি স্থাপন করে সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছে এক অতি গৌরবোজ্জল ঐতিহ্য। তাদের সে সাফল্য প্রকৃতই অতীব বিস্ময়কর। মুসলমানেরা হয়েছিল বিশ্বের অর্ধেকের মালিক। তারা প্রবল প্রতাপ ও শানশওকতের সঙ্গে শাসন করেছে অর্ধজাহান। শৌর্য-বীর্য, জ্ঞান-বিজ্ঞান, অর্থনীতি- সকল ক্ষেত্রেই তাদের সাফল্য ছিল অতীব চমকপ্রদ। কোন ক্ষেত্রেই কোন জাতিই ছিল না তাদের সমকক্ষে দাঁড়াতে।

বিজ্ঞাপন

মুসলমানেরা বিশ্বে সকল ক্ষেত্রেই ছিল শীর্ষস্থানীয়, নেতৃস্থানীয়। যুদ্ধ হতে শুরু করে জীবনের সকল ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জনে সক্ষম হওয়ায় তাদের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছিল বিশ্বব্যাপী। সে যুগে মুসলমানেরাই দিয়েছিল বিশ্বনেতৃত্ব। অসাধারণ জাতিরূপে, শ্রেষ্ঠতম জাতিরূপে মুসলমানেরাই লাভ করেছিল প্রতিষ্ঠা। বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাদের সাফল্য ও খ্যাতি এতই অসাধারণ ছিল যে তারা আখ্যায়িত হয়েছেন বহু আলংকারিক বিশ্লেষণে, প্রসংশিত হয়েছেন উচ্ছ্বসিতভাবে পাশ্চাত্য ও প্রাচ্যের বড় বড় মনীষীগণ কর্তৃক।

বহু অসাধারণ বৈশিষ্ট্যের অধিকারী হওয়ায় মুসলমানেরা উন্নতির শীর্ষে পৌঁছেছিল সত্য, তবে একথা বলাই বাহুল্য যে পরবর্তীকালে সময়ের সঙ্গে তাল রেখে আরও এগিয়ে যেতে, নিজেদের সে প্রতাপ, প্রতিপত্তি, প্রাধান্য ও বিশ্ব নেতৃত্ব বজায় রাখতে তারা হয়েছিল ব্যর্থ। এর কারণ কি? শ্রেষ্ঠ জাতি হিসেবে এবং অর্ধ জাহান শাসনের বিশ্বনেতৃত্ব যাদের গৌরবময় ঐতিহ্য, তা আজ কোথায় গেল?

আজ এত এত মুসলমান দেশ থাকা সত্ত্বেও কেন পারছে না মুসলমান বিশ্বনেতৃত্ব দান করতে? কেন পারছে না বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নির্যাতিত মুসলমানদের সাহায্য করতে? মিয়ানমারে লাখ লাখ মুসলিম নির্যাতনের বিরুদ্ধে মুসলমান হিসেবে আমরা কি করেছি? মুসলমানারা বিভিন্ন দেশে নির্যাতিত হচ্ছে অথচ আমরা কিছুই করতে পারছি না, এর মূল কারণ হলো-মুসলিম জাতির আজ কোন ঐশী নেতা নেই।

সমগ্র মুসলিম জাহান আজ চরম বিপর্যয়ের সম্মুখীন। শ্রেষ্ঠ নবীর (সা.) অনুসারী মুসলমানরা আজ নির্যাতিত। এর কারণ কী? আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানে মনে হয় এর মূল কারণ হচ্ছে, মুসলমানদের মাঝে আজ ঐক্যের বড়ই অভাব। মুসলমান আজ পবিত্র কুরআনের আদেশ ও শ্রেষ্ঠ নবীর শিক্ষার ওপর আমল করা ছেড়ে দিয়েছে, যার ফলেই বিভিন্ন দেশে মুসলমানদের ওপর অত্যাচার করা হচ্ছে। মুসলমানদের মাঝে আজ নেই ইসলামের প্রকৃত আদর্শ। মুসলমান শুধু আজ নামে আর লেবাসেই বিদ্যমান। সমগ্র বিশ্বে মুসলমানদের যে অবস্থা আজ আমরা দেখছি তা শ্রেষ্ঠ নবীর শ্রেষ্ঠ উম্মতের জন্য কখনই কাম্য ছিল না।

মুসলমানরা আজ শতধা বিভক্ত। তাদের মাঝে নেই কোন ঐশী ইমাম বা নেতা। যেহেতু তাদের মাঝে কোন ঐশী ইমাম নেই, তাই অধঃপতিত মুসলমানরা আজ আল্লাহপাকের নেয়ামত থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে। সমস্ত মুসলিম আজ শত দলে উপদলে বিভক্ত হওয়ার কারণে পরস্পরের মাঝেও ঝগড়া বিবাদে লিপ্ত হয়ে পড়ছে। আর মুসলমানদের এই অনৈক্যের কারণেই ভ্রাতৃঘাতী দ্বন্দ্ব সংঘাতে লিপ্ত হয়ে পড়তেও দ্বিধাবোধ করছে না।

পবিত্র কুরআন অনুসারে আমরা যদি জীবন পরিচালনা করি, তা হলে আমাদের মাঝে আজ যে মতভেদ, পরস্পর বিভক্তি, তা দূর হবে। আমাদের মাঝে ঐক্য প্রতিষ্ঠিত থাকবে। জাতীয় ও ধর্মীয় ঐক্য সুপ্রতিষ্ঠিত থাকবে। আর এই ঐক্যই আমাদেরকে এক উম্মতে পরিণত হওয়ার নিশ্চয়তা প্রদান করবে, যার ফলে আমরা এক শক্তিশালী জাতিতে পরিণত হতে পারব।

আর এর জন্য আমাদের উচিত হবে আল্লাহর রজ্জুকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরে মহানবি ও শ্রেষ্ঠনবির (সা.) পরিপূর্ণ অনুসরণ করা, তার শিক্ষানুসারে জীবন পরিচালনা করা। সৃষ্টিকর্তা আমাদের সবাইকে শান্তি, সৌহার্দ্য ও ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ করুন এবং ধর্মীয় বিভেদ দূর করে বিশ্বময় শান্তির সুবাতাস প্রবাহিত করুন।

লেখক: গবেষক, ধর্মীয় চিন্তাবিদ।

Print Friendly, PDF & Email