মহাসড়কে ডাকাতি রোধে সারাদেশে র্যাবের টহল জোরদার
প্রকাশিতঃ 4:16 pm | August 13, 2022

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:
সম্প্রতি মহাসড়কে বেশ কিছু ডাকাতির ঘটনার জেরে সারাদেশের মহাসড়কে গোয়েন্দা নজরদারি ও টহল জোরদার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
শনিবার (১৩ আগস্ট) দুপুরে কারওয়ান বাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
তিনি বলেন, সম্প্রতি প্রিন্ট, ইলেকট্রনিক ও অনলাইন মিডিয়ায় গুরুত্বের সঙ্গে তথ্যবহুল বেশকিছু সংবাদ প্রকাশিত হয়। মহাসড়কে ডাকাতি বন্ধ হওয়া জনগণের গণদাবিতে পরিণত হয়েছে। র্যাবের জনবল সীমিত। এরপরেও র্যাব সারাদেশে মহাসড়কে টহল জোরদার করেছে। পাশাপশি র্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখাও কাজ করে চলেছে।
আগে যারা ডাকাতি করে গ্রেফতার হয়েছে, যাদের বিরুদ্ধে ডাকাতির মামলা রয়েছে, তারা এখন কোন অবস্থানে রয়েছে, কোন পেশায় রয়েছে তাদের বিষয়েও একাধিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি র্যাবও বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত নিয়ে কাজ করছে। এছাড়া ব্যাটালিয়ন পর্যায়ে ডাকাতি রোধে বিভিন্ন কার্যক্রম চলমান। আমরা ভুক্তভোগীদেরও অনুরোধ করবো ডাকাতির খবর পেলে তারাও যেন আমাদের তথ্য দেন।
ডাকাতির সমাধানের কথা উল্লেখ করে র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, ডাকাতি রোধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি সমাজের সব স্তরের মানুষের সহযোগিতা প্রয়োজন। ডাকাতদের যদি পুনর্বাসন করা যায় তাহলে ডাকাতি কমে যাবে। এরই মধ্যে কক্সবাজার ও সুন্দরবনসহ সারাদেশে ৪০৫ জন ডাকাত র্যাবের কাছে আত্মসমর্পণ করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসেছেন।
এদিকে বিভিন্ন মহাসড়কে নিয়মিতভাবে ডাকাতি করে আসা ১০-১২ জনের ডাকাত চক্রের ছয় জনকে গ্রেফতার করেছে র্যাব।

র্যাব জানিয়েছে, শুক্রবার (১২ আগস্ট) রাতে র্যাব সদর দফতরের গোয়েন্দা শাখা ও র্যাব-১১ এর একটি আভিযানিক দল নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ ও বন্দর থানা এলাকার মহাসড়ক থেকে তাদের গ্রেফতার করেছে। গ্রেফতারদের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। এর আগেও তারা বিভিন্ন সময় কারাভোগ করেছে এবং জামিনে বের হয়ে আবার একই ধরনের কাজে জড়িয়ে পড়েছে।
গ্রেফতারকৃতরা হলো, মূসা আলী (৪০), নাঈম মিয়া (২৪), শামীম (৩৫), রনি (২৬), আবু সুফিয়ান (২০), মামুন (২৪)।
গ্রেফতারের সময় তাদের কাছ থেকে দুইটি চাপাতি, একটি চাইনিজ কুড়াল, একটি ছোরা ও ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত একটি বাস জব্দ করা হয়। উদ্ধার করা হয় ডাকাতির শিকার দুই জন ভিকটিমসহ পণ্যবাহী পিকআপ।
খন্দকার আল মঈন বলেন, মূলত চক্রটি ঢাকা-চট্টগ্রাম এবং ঢাকা সিলেট মহাসড়কে পণ্যবাহী কাভার্ডভ্যানে ডাকাতি করতো। তারা তিনটি গ্রুপে ভাগ হয়ে এই ডাকাতি সম্পন্ন করে থাকে। ডাকাতির কাজে একটি বাস ব্যবহার করে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, গ্রেফতারকৃত মুসার নির্দেশে প্রথম গ্রুপটি ডাকাতির জন্য বিভিন্ন গার্মেন্টস এর পণ্যবাহী ট্রাক ও মহাসড়কে চলাচলকারী পণ্যবাহী যানবাহন সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করে এবং ডাকাতির জন্য সম্ভ্যাব্য স্থান নির্ধারণ করে। এই দলের সদস্যরা পেশায় গার্মেন্টস কর্মী, ড্রাইভার, হেলপার আবার কেউ রাজমিস্ত্রী ও কাপড়ের দোকানের কাটিং মাস্টার।
তিনি বলেন, দ্বিতীয় দলটি বাস নিয়ে মহাসড়কে সুবিধাজনক স্থানে অবস্থান নিয়ে ডাকাতিতে অংশগ্রহণ করে। তারা মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে ডাকাতির জন্য টার্গেটকৃত পণ্যবাহী যানবাহনটির পিছু নেয়। পরবর্তী সময়ে সুবিধাজনক স্থানে টার্গেট করা পণ্যবাহী গাড়ীটিকে বাস দিয়ে গতিরোধ করে এবং দ্রুত পণ্যবাহী গাড়ির চালক ও হেলপারকে এলোপাথারি মারপিট করে হাত-পা ও চোখ-মুখ বেঁধে বাসে তুলে নেয়। পরে পণ্যবাহী গাড়ির চালক ও হেলপারকে জিম্মি করে বাসে নিয়ে অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যায় ও তাদের মারপিট করে মুক্তিপণ দাবি করে এবং ডাকাতি শেষে পরবর্তীতে তাদের হাত-পা ও চোখ-মুখ বাধাঁ অবস্থায় মহাসড়কের নির্জন স্থানে ফেলে দেয়।
আর তৃতীয় দলটির নেতৃত্বে থাকা ডাকাত দলের প্রধান মুসা ডাকাতিকৃত পণ্যবাহী গাড়িটি চালিয়ে ডাকাতিকৃত পণ্য বিক্রি করার জন্য পূর্ব নির্ধারিত স্থানে নিয়ে যায় এবং মালামাল আনলোড করে বলেও জানান খন্দকার মঈন।
এছাড়াও, ডাকাত দলটি পণ্যবাহী গাড়িটি সুবিধাজনক স্থানে বিক্রি করে দেওয়ার চেষ্টা করে অথবা ব্যর্থ হলে পরিত্যাক্ত অবস্থায় কোনও নির্জন স্থানে ফেলে যায়। বিগত এক বছর ধরে যুব কল্যাণ এক্সপ্রেস লিমিটেডের বাসটি দিয়ে তারা বেশ কয়েকটি ডাকাতিতে অংশ নিয়েছে। আগে তারা অন্য বাস অথবা পিকআপ দিয়ে ডাকাতিতে অংশ নিতো।
কালের আলো/ডিএস/এমএম