বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সঙ্কট এবং বাংলাদেশ

প্রকাশিতঃ 10:21 am | August 05, 2022

অধ্যাপক ড. আতিউর রহমান:

২০২২ সাল, বাংলাদেশের অর্থনীতি কোভিড সংকট কাটিয়ে নতুন করে পুনর্জাগরণের জন্য তৈরি হচ্ছিল। সারা বিশ্বের কেন্দ্রীয় ব্যাংক এবং সরকার মহামারির কারণে যাতে অর্থনীতি নিস্তেজ না হয়ে যায় সেটি খেয়াল করছিল। তাই বিপুল পরিমাণ তারল্য পাম্প করতে থাকে তারা তাদের অর্থনীতিতে।

আমরাও জিডিপির প্রায় ছয় শতাংশের মতো প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় সস্তায় ঋণ দেওয়ার উদ্যোগ নেই। স্বাস্থ্য ও সামাজিক নিরাপত্তা খাতে অর্থ ঢালতে সরকার ন্যায্যতই দ্বিধা করেনি। এমন বাস্তবতায় সারা বিশ্ব জুড়েই মূল্যস্ফীতি ছিল বাড়ন্ত। মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা হিসেবে প্রায় পাঁচ মাস আগে হঠাৎ করেই শুরু হয়ে যায় ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ।

এই যুদ্ধের ফলে বিশ্ব সরবরাহ চেইন আরও ভেঙে পড়ে। ইউক্রেন-রাশিয়া-বেলারুশ অঞ্চল থেকে গম, ভোজ্যতেল, সার, তেল, গ্যাস সরবরাহ প্রায় বন্ধই হয়ে যায়। এই প্রেক্ষাপটে খাদ্য মূল্যস্ফীতিসহ সার্বিক মূল্যস্ফীতি সারা বিশ্বেই বেড়ে গেছে।

বাণিজ্যিক স্যাঙ্কশনের অংশ হিসেবে বিশ্ব লেনদেন ব্যবস্থা সুইফট বন্ধ করে দেয় পশ্চিমা বিশ্ব। গত পাঁচ মাস ধরে বিশ্ব বাণিজ্য এক অর্থে ‘রোলার কোস্টার’র মধ্য দিয়েই গেছে। একদিকে তারল্যের ছড়াছড়ি, অন্যদিকে সরবরাহে ঘাটতি। দুইয়ে মিলে মূল্যস্ফীতি এখন প্রায় উড়ন্ত। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপসহ পশ্চিমে মূল্যস্ফীতি এখন নয় শতাংশেরও বেশি।

বাংলাদেশও আমদানিজনিত এই মূল্যস্ফীতির আক্রমণের শিকার। এখন বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতি সাড়ে সাত শতাংশেরও বেশি। এর মধ্যে বন্যা ও খরা—দুইই আঘাত হেনেছে বাংলাদেশে। তেলের দাম বাড়ন্ত থাকায় জ্বালানি-নির্ভর বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সরবরাহে লাগাম টানতে হচ্ছে। এর প্রভাবে জন-জীবন বা ব্যবসা-বাণিজ্য চাপে যে পড়ছে সেই কথা তো মানতেই হবে।

সবচেয়ে বড় কথা প্রায় তেরো লক্ষ সেচ পাম্পের এক বিরাট অংশেও বিদ্যুৎ সরবরাহে সমস্যা তৈরি হচ্ছে। এই নিয়ন্ত্রিত বিদ্যুৎ সরবরাহের প্রভাব কৃষি উৎপাদনের ওপর যে পড়বে তা অস্বীকার করার উপায় নেই। সারের দাম খুবই সামান্য বাড়িয়েছে। এখনো তেলের দাম বাড়ায়নি। সেজন্য বিপুল পরিমাণে ভর্তুকি গুণতে হচ্ছে বিপিসিকে। কেননা খাদ্য উৎপাদন অক্ষুণ্ন রাখা গেলে খাদ্য আমদানি কম হবে।

দেশের ভেতরে আমরা নানামাত্রিক উদ্যোগ নিয়ে আমাদের অর্থনীতি ও সমাজকে স্থিতিশীল রাখতে পারলেও বড় আক্রমণ আসে বাইরে থেকে। হঠাৎ করে আমদানি করা পণ্যের দাম এতটা বেড়ে যায় যে বাণিজ্য ঘাটতি বাড়তে থাকে।

সরকার দ্রুত সাশ্রয়ী বেশকিছু উদ্যোগ নিয়ে মুদ্রা ও রাজস্ব নীতিকে এই সংকট মোকাবিলায় দক্ষতার সাথে কাজে লাগাবার আপ্রাণ চেষ্টা করে চলেছে। প্রশাসনিক খরচে লাগাম টানা হচ্ছে, কম দরকারি উন্নয়ন প্রকল্পের বাস্তবায়ন হয় স্থগিত অথবা পেছনে ঠেলে দেওয়া হয়েছে, বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ কমাতে বেশকিছু নিয়ন্ত্রণমূলক উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে এবং একই সঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ২৭টি বিলাস ও প্রয়োজনীয় পণ্যের আমদানি কমাতে এলসি মার্জিন বাড়িয়েছে।

বাংলাদেশও আমদানিজনিত এই মূল্যস্ফীতির আক্রমণের শিকার। এখন বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতি সাড়ে সাত শতাংশেরও বেশি। এর মধ্যে বন্যা ও খরা—দুইই আঘাত হেনেছে বাংলাদেশে।

সরকারও এসব পণ্যের ওপর শুল্ক হার বাড়িয়ে দিয়েছে। পাশাপাশি ডলার-টাকার মূল্যমান নমনীয় করে বাজার-নির্ভর করার উদ্যোগও বাংলাদেশ ব্যাংক নিয়েছে। বিনিময় হার এখনো পুরোপুরি স্থিতিশীল না হলেও পরিস্থিতি আগের চেয়ে ভালোর দিকেই এগোচ্ছে।

অর্থবছর শেষে খবর পাচ্ছি যে, জুলাই মাসে আমদানির মূল্য ৫.৫ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে। জুনেও এর পরিমাণ ছিল ৭.৯৬ বিলিয়ন ডলার। জুলাই মাসে প্রবাসী আয় এসেছে গত দু’বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ ২.০৯ বিলিয়ন ডলার। জুনে এসেছিল ১.৮৩ বিলিয়ন ডলার।

আমার ধারণা বিশ্ব সরবরাহ চেইনে বড় ধরনের কোনো ওলটপালট না হলে আমাদের আমদানির পরিমাণ আরও দ্রুত কমে আসবে। অন্যদিকে বিনিময় হারকে যদি আরেকটু প্রকৃত হারের কাছাকাছি নিয়ে যেতে পারি তাহলে প্রবাসী আয় ও রপ্তানি আয় দুইই আরও বাড়বে।

ধীরে ধীরে ম্যাক্রো-অর্থনীতির স্বস্তির দিকে হাঁটলেও আমরা যে এখনো বাণিজ্য ও চলতি লেনদেনের হিসেবে বেশ চ্যালেঞ্জের মধ্যে আছি সেই কথা ভুললে চলবে না। অর্থবছর শেষে বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, আমাদের মোট বাণিজ্যিক ঘাটতি (আমদানি ও রপ্তানির পার্থক্য) ছিল ৩৩.২ বিলিয়ন ডলার।

গত অর্থ বছরে প্রবাসী আয়ও ছিল আগের অর্থবছরের চেয়ে খানিকটা শ্লথ। ফলে বৈদেশিক মুদ্রার চাহিদা ও সরবরাহের ভেতর যে ভারসাম্যহীনতা তৈরি হয় তা বাগিয়ে আনতে বাংলাদেশ ব্যাংক বিনিময় হারকে বাজারমুখী করতে তার ওপর থেকে নিয়ন্ত্রণ খানিকটা শিথিল করে। ফলে টাকার মানের বড় ধরনের অবমূল্যায়ন হয়।

শুধু বাংলাদেশ কেন বিপুল রিজার্ভের অধিকারী হয়েও ভারত তার রুপির অবমূল্যায়ন ঠেকাতে পারেনি। উন্নত দেশসমূহের মুদ্রার মানের চেয়েও ডলারের দাম বিপুলভাবে বেড়ে গেছে। ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল ডলার ইনডেক্সের (১৬টি প্রধান প্রধান মুদ্রা মানের সমাহারে তৈরি) মতে বিগত এক বছরে ১৩ শতাংশ বেড়ে গেছে ডলারের মূল্যমান।

যুক্তরাষ্ট্রের মূল্যস্ফীতি যেহেতু এখন নয় শতাংশেরও বেশি তাই তার কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেড আক্রমণাত্মক হারে তার মৌলিক সুদের হার বাড়িয়ে চলেছে। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বন্ডের চাহিদা বাড়ছে। আরও বেশি করে বিকাশমান বাজার থেকে ডলারে করা বিনিয়োগ যুক্তরাষ্ট্রের বাজারের দিকে ছুটছে।

উল্লেখ্য, এক বছরে ৩৮ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ বিকাশমান বাজার ছেড়ে যুক্তরাষ্ট্রে চলে গেছে। এর সাথে তাল মেলাতে গিয়ে ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকও ২০১১ সালের পর এই প্রথম বার মৌলিক সুদের হার বাড়িয়েছে। ব্যাংক অব ইংল্যান্ড তো আগে থেকেই তা বাড়াচ্ছিল। কেননা যুক্তরাজ্যে, মূল্যস্ফীতি আরও বেশি। জাপান এখনো শূন্য সুদের কৌশল থেকে বের হয়নি। বাদ বাকি সব দেশেই সুদের হার বাড়ানো হচ্ছে। ভারতও বাড়িয়েছে।

বাংলাদেশও তার মৌলিক রেট তথা রেপো রেট বাড়িয়েছে। কিন্তু এই রেট বৃদ্ধি আর্থিক বাজারে তেমন প্রভাব ফেলতে পারছে না সুদের হার সর্বোচ্চ সীমা বেঁধে দেওয়ার কারণে।

যিনি ক্ষুদে উদ্যোক্তা তিনিও সর্বোচ্চ নয় শতাংশে ব্যাংক থেকে ঋণ নিচ্ছেন, আবার যিনি মার্সিডিজ গাড়ি কিনছেন তিনিও একই হারে ঋণ পাচ্ছেন। ফলে মূল্যস্ফীতি কমানোর যে কৌশল সুদের অস্ত্রের মাধ্যমে ব্যবহার করার কথা তা অনেকটাই অকেজো হয়ে আছে। তবে সরকার এবং বাংলাদেশ ব্যাংক প্রণোদনা প্যাকেজের মাধ্যমে ক্ষুদে ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের চার-পাঁচ শতাংশ সুদে ঋণ দেওয়ার জন্য উদ্যোগ নিয়েছে।

সর্বশেষ বাংলাদেশ ব্যাংক পঁচিশ হাজার কোটি টাকার একটি উপযুক্ত রিফাইনান্সিং তহবিল চালু করেছে কুটির, ক্ষুদ্র ও মধ্যম উদ্যোক্তাদের জন্য। এর সাথে সহসাই যুক্ত হচ্ছে ক্রেডিট গ্যারান্টি স্কিম। এই স্কিমের আওতায় এই ধরনের ঋণের ৭০ শতাংশের গ্যারান্টি দিবে বাংলাদেশ ব্যাংক।

বৈদেশিক মুদ্রা বাজারের এই অস্থিরতার সুযোগ নিয়ে আমাদের স্বনামধন্য কিছু বিশেষজ্ঞ বলতে চাইছেন যে, ২০২৪-২৬ সাল নাগাদ বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কার মতো ঋণ সংকটে পড়তে যাচ্ছে….

দুইয়ে মিলে ছোট ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের ঋণ দিতে ব্যাংকগুলোকে স্বস্তি ও সাহস জোগাবে। কিন্তু পুরো বাজারকে চাহিদা ও সরবরাহের কাঠামোতে সচল না করা গেলে বিশ্ব অর্থনৈতিক এই সংকটকালে এই সব উদ্যোগ সত্ত্বেও অর্থনীতিতে টানাপোড়েন লেগেই থাকে।

বিশেষ করে বৈদেশিক মুদ্রার বাজারকে গতিশীল করতে হলে মুদ্রার বিনিময় হার ও সুদের হারকে নমনীয় রেখে বাজারভিত্তিক বাস্তবতার সাথে খাপ খাওয়ানো খুবই জরুরি হয়ে পড়ে। বিদেশি মুদ্রা বাজারকে স্থিতিশীল করতে হলে আন্তব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রা বাজারকে খুবই গতিশীল রাখতেই হবে।

এখন বাংলাদেশ ব্যাংক যে হার বেঁধে দিচ্ছে সেই হারে রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো সরকারি আমদানি এলসির দায় মেটাতে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ডলার কিনতে পারে। কিন্তু অন্যান্য ব্যাংক এই হারে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ডলার সেভাবে কিনতে পারে না।

বিদেশি বা দেশি এক্সচেঞ্জ হাউসগুলো প্রবাসীদের কাছ থেকে কেনা বৈদেশিক মুদ্রার বিপরীতে টাকায় অনুরূপ দাম হাঁকে। তাই অসুস্থ প্রতিযোগিতায় ডলারের দাম অস্থিতিশীল হয়ে থাকে। সেজন্যেই আন্তব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হারের একটি ভিত্তিরেখা বা বেঞ্চমার্ক তৈরি করা খুব জরুরি। এই হারের আশেপাশেই যেন থাকে ডলারের দাম সেটিই কাম্য।

ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই হার নির্ধারণে সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে। একটি পোর্টালে সকল ব্যাংককেই ডলারের সম্ভাব্য বিনিময় হার উল্লেখ করতে বলে আরবিআই। দিনের শেষে সব উদ্ধৃতি দেখে কেন্দ্রীয় ব্যাংক একটি গড়পড়তা রেট স্থির করে। সেটিই পরের দিন গ্রহণযোগ্য রেট হিসেবে চালু হয়ে যায়। এটিই হয়ে যায় বেঞ্চমার্ক রেট।

আরেকটি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে। কার্ব মার্কেটের আকার কিন্তু মোট বিদেশি মুদ্রার বাজারের দুই শতাংশের বেশি হবে না। কোভিডের পরে অনেকেই বিদেশে যাচ্ছেন, চিকিৎসা ও শিক্ষার জন্য অনেক তরুণ বাইরে যাচ্ছে। তাই নগদ ডলারের চাহিদা বেড়েছে। মানি-চেঞ্জারদের কারসাজিও আছে। সব মিলেই এই মার্কেটে বিনিময় হার বেশি করে ওঠা নামা করছে। যেহেতু এইটা মূল বাজার নয় তাই তাকে নিয়ে গণমাধ্যমের এই মাতামাতি মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়। আর এদের কারসাজি ঠেকাতে বাংলাদেশ ব্যাংক দ্রুত ব্যবস্থাও নিয়েছে। নিচ্ছে।

বৈদেশিক মুদ্রা বাজারের এই অস্থিরতার সুযোগ নিয়ে আমাদের স্বনামধন্য কিছু বিশেষজ্ঞ বলতে চাইছেন যে, ২০২৪-২৬ সাল নাগাদ বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কার মতো ঋণ সংকটে পড়তে যাচ্ছে। অথচ বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণ-জিডিপি অনুপাত ২০ শতাংশের কম, আর শ্রীলঙ্কার তা ১০৪ শতাংশ।

এমন আতঙ্ক যারা ছড়াচ্ছেন তারা কিন্তু কোনো গ্রহণযোগ্য তথ্য বা ক্যাশফ্লো বিশ্লেষণ দিচ্ছেন না। আগামী দুই বছর কি তাহলে বাংলাদেশের অর্থনীতি ঘুমিয়ে থাকবে? আমাদের রপ্তানি বা প্রবাসী আয় কি আর বাড়বে না? আমাদের রিজার্ভ এই ক’দিনে পুরোপুরি উবে যাবে? তাহলে মুডি’স বা আইএমএফ কেন বলছে বাংলাদেশের ‘ডিফল্ট রিস্ক’ নেই।

যে দেশের বেশিরভাগ ঋণই আন্তর্জাতিক সংস্থা থেকে নেওয়া, যে ঋণের সুদ সামান্য, যার শোধের সময় সীমা তিরিশ বছরেরও বেশি, যে দেশ গত বছরই আট বিলিয়ন ডলারের এমন ঋণ ছাড় করতে পেরেছে, যার দৃশ্যমান মেগা প্রকল্পগুলো বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের সৃজনে লক্ষ্যভেদী, যার কৃষি ও ম্যানুফেকচারিং শিল্পের প্রবৃদ্ধি চোখ ধাঁধানো, যে দেশের দারিদ্র্য কমতির দিকে, দম্পতি প্রতি গড় সন্তান সংখ্যা দুই, সাক্ষরতার হার ৭৮ শতাংশ, মাথাপিছু বিদ্যুৎ প্রাপ্তি ৩০০ মেগাওয়াট আওয়ার, যে দেশে রয়েছে আর্থিক অন্তর্ভুক্তির অনন্য সাফল্যের ইতিহাস—সেই দেশ নিয়ে এমন করে আতঙ্ক ছড়ানো কি উচিত হচ্ছে?

তার মানে এই নয় যে আমাদের সমস্যা নেই। নিশ্চয় আছে অনিয়ম, দুর্নীতি, প্রকল্পের শ্লথ বাস্তবায়ন এবং বৈষম্য। কিন্তু একথাও স্বীকার করতে হবে যে বিপর্যয় মোকাবিলার ইতিহাসও আমাদের সমৃদ্ধ। এই পরিস্থিতিতে হতাশা না ছড়িয়ে আসুন আমরা সবাই বিশ্ব অর্থনৈতিক এই সংকটকালে ঐক্যবদ্ধভাবে চিন্তা ও কর্মের সমাবেশ ঘটাই।

রবীন্দ্রনাথের ভাষায় জাহাজের খোলের নোংরা পানি সিচে ফেলাটাই উত্তম। সমুদ্রের পানির চাপের তীব্রতা তাহলে বরং কমবে। বঙ্গোপসাগরে সুনামি হলে কক্সবাজারের সমুদ্র সৈকতে উঁচু ঢেউ আছড়ে পড়বেই। ভয় না পেয়ে নিজেদের ঘরকে সুদৃঢ় করাই শ্রেয় এমন সময়ে।

রবীন্দ্রনাথ আরও বলেছেন, দেশে জন্মালেই দেশ আপন হয় না। তাকে জানতে হয়। তাকে ভালোবাসতে হয়। সেই দৃষ্টিকোণ থেকেই বলছি আসুন যার যার অবস্থান থেকে স্বদেশকে চলমান বিশ্ব অর্থনৈতিক সংকট থেকে সুরক্ষা দেওয়ার চেষ্টা করি। সংকট মোকাবিলায় আমাদের যে ‘রেজিলিয়েন্স’ বা টিকে থাকার সক্ষমতার প্রমাণ অতীতে দিয়েছি এবারেও তার ব্যত্যয় ঘটবে না বলে আমার বিশ্বাস।

লেখক: উন্নয়ন সমন্বয়ের সভাপতি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর

Print Friendly, PDF & Email