র‌্যাবের সাবেক এডিজির ব্যাংক লেনদেন স্থগিত; ‘অতি উৎসাহী’ ভূমিকায় প্রাইম ব্যাংক?

প্রকাশিতঃ 5:47 am | July 04, 2022

বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো:

হঠাৎ করেই ‘অতি উৎসাহী’ ভূমিকায় দেখা গেছে দেশের বেসরকারি খাতের অন্যতম বাণিজ্যিক ব্যাংক প্রাইম ব্যাংক লিমিটেডকে। একজন গ্রাহককে নির্দিষ্ট করে কোন রকম তথ্য না জানিয়েই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে তাঁর ব্যাংক হিসাব ও ক্রেডিট কার্ডের লেনদেন।

ভুক্তভোগী এই গ্রাহক হচ্ছেন-প্রেসিডেন্ট গার্ড রেজিমেন্ট (পিজিআর) কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জাহাঙ্গীর আলম। তিনি এলিট ফোর্স র‌্যাবের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশনস) হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। কেন এবং কী কারণে তাঁর ব্যাংক হিসাব বন্ধ করা হয়েছে-এই বিষয়ে জানতে গত কয়েক মাসে তিনি দু’দফা ব্যাংক কর্তৃপক্ষের কাছে তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করেন।

কিন্তু কোন কিনারা না হওয়ায় গত ১৬ মে প্রাইম ব্যাংকের গুলশান শাখার ব্যবস্থাপক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকের বিরুদ্ধে আবেদনকারী তথ্য অধিকার আইন ২০০৯-এর বিধান অনুযায়ী প্রধান তথ্য কমিশনার বরাবর অভিযোগ করেন। এতে করে টনক নড়ে ব্যাংক কর্তৃপক্ষের। তড়িঘড়ি করে গ্রাহক জাহাঙ্গীর আলমকে একটি চিঠি ইস্যু করা হয়।

চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, তথ্য অধিকার আইনের যে ধারায় তথ্য চাওয়া হয়েছে তা দিতে ব্যাংক বাধ্য নয়। চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি ডিপার্টমেন্টের নিষেধাজ্ঞা থাকলে ওই ব্যক্তির সঙ্গে প্রাইম ব্যাংক কোনো লেনদেন করে না।

এ ঘটনায় রোববার (৩ জুলাই) তথ্য কমিশনে দায়ের করা অভিযোগ নিষ্পত্তি করতে কমিশন দুই পক্ষকে শুনানির জন্য সমন জারি করে। শুনানি শেষে প্রাইম ব্যাংকের আইনজীবী গণমাধ্যমকে এড়িয়ে গেছেন। তবে জাহাঙ্গীর আলমের আইনজীবী জানিয়েছেন, কমিশন ১৮ জুলাই রায় ঘোষণা করবে।

প্রশ্ন হচ্ছে একটি স্বাধীন-সার্বভৌম দেশের ব্যাংক কীভাবে অন্য একটি দেশের অঙ্গুলী হেলনে নিজ দেশের একজন গ্রাহককে কোন রকম অভিযোগের কথা না জানিয়েই ব্যাংক হিসাব লেনদেন বন্ধ করে দেয়? এর মাধ্যমে ব্যাংকটি মূলত কী বার্তা দিতে চেয়েছে? ‘টার্গেট’ করে দেশপ্রেমিক পুলিশ ও র‌্যাব কর্মকর্তাদের গায়ে কলঙ্ক তিলক পরিয়ে দেওয়ার মার্কিন অপপ্রয়াস প্রশ্নের মুখে পড়ার পর বাংলাদেশের প্রাইম ব্যাংক যে কান্ড ঘটিয়েছে সেটি রীতিমতো ক্ষুব্ধ করে তুলেছে দেশের সাধারণ মানুষকে।

‘অতি উৎসাহী’ হয়েই প্রাইম ব্যাংক এটি করেছে বলেও মনে করছেন র‌্যাব কর্মকর্তারা। এ বিষয়ে ইতোমধ্যেই মুখ খুলেছেন র‌্যাবের লিগ্যাল এন্ড মিডিয়া উইং’র পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। একটি গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপে তিনি বলেছেন, ‘সুনির্দিষ্ট করে এখনও বলা হয়নি কোন ঘটনার প্রেক্ষিতে র‌্যাবের বর্তমান ও সাবেক ৭ কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।

সেখানে আমার দেশে একটি ব্যাংক অবস্থান করে সে কীভাবে আমাদের দেশের ওই কর্মকর্তা বা সম্মানিত নাগরিকের অ্যাকাউন্ট ক্লোজ করে দিতে পারেন, কোন ধরণের তথ্য দেওয়া ছাড়া।’

জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ দমনে যারা সফল হয়েছেন, দেশকে নিরাপদ করেছেন মানবাধিকার রক্ষা করেছেন তাদের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের আকস্মিক নিষেধাজ্ঞা নিয়ে প্রথমবারের মতো চলতি বছরের বৃহস্পতিবার (২৭ জানুয়ারি) কঠোর সমালোচনা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দেশপ্রেমিক এসব উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাদের ওপর আমেরিকার রাগ-ক্ষোভেরও সুলুক সন্ধান করেন সরকারপ্রধান।

ওইদিন একাদশ জাতীয় সংসদে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আনীত ধন্যবাদ প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় এবং ১৬তম অধিবেশনের সমাপনী ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজের দীর্ঘ বক্তব্যে বলেছিলেন-আমেরিকা আমাদের র‌্যাবের কিছু অফিসারের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। যাদের মধ্যে সে সময় হলি আর্টিজেন বেকারীতে সন্ত্রাসী হামলার সময় র‌্যাবের মহাপরিচালক এবং বর্তমান আইজিপিও রয়েছেন। সে সময় রমজান মাসে ওই বেকারীতে মানুষকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছিল।

সে সময় বাংলাদেশে আমেরিকার রাষ্ট্রদূতের একটি ‘টুইট’ এর উদ্ধুতি তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী সেদিন আরও বলেন, ‘তিনি টুইট করেছিলেন – বাংলাদেশ এই হলি আর্টিজেনের হামলা একা সমাধান করতে পারবে না’ কিন্তু সারারাত আমরা পুলিশ, সশস্ত্র বাহিনী, র‌্যাব এবং কমান্ডোদের সাথে বৈঠক করে পরের দিন সকাল ৯ টার মধ্যে আমরা সেখান থেকে জিম্মিদের উদ্ধার এবং সন্ত্রাসিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে সফলতার সঙ্গে আক্রমন মোকাবেলায় সমর্থ হই। আর এর পর পরই আমেরিকার রাষ্ট্রদূত সেই টুইটটি সরিয়ে ফেলে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যাদেরকে তারা নিষেধাজ্ঞা দিল তাদের অধিকাংশই সেদিন সন্ত্রাস দমনে বিশেষ ভূমিকা রেখেছিল। আর এরপরে বাংলাদেশে আর কোন সন্ত্রাসী ঘটনা ঘটতে পারে নাই। সেদিন বিশেষ ভূমিকা রাখা ভাল অফিসাররা কেন আমেরিকার কাছে প্রশ্নবিদ্ধ’ জানতে চান প্রধানমন্ত্রী।’

গত বছরের ১০ ডিসেম্বর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়েন আইজিপি ও র‌্যাবের সাবেক ডিজি ড.বেনজীর আহমেদ, র‌্যাবের বর্তমান ডিজি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশনস) খান মোহাম্মদ আজাদ, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশনস) তোফায়েল মোস্তাফা সরোয়ার, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশনস) মো. জাহাঙ্গীর আলম ও সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশনস) মো. আনোয়ার লতিফ খান।

প্রধানমন্ত্রী দেশের স্বার্থে তাদের অগ্রণী ভূমিকা এবং অবদানকে ওইদিন উপস্থাপনের পাশাপাশি নিখাদ দেশপ্রেমকেও উঁচুতে তুলে ধরেছেন। এমনই একজন দেশপ্রেমিক কর্মকর্তার সঙ্গে প্রাইম ব্যাংকের রহস্যময় আচরণ নিয়ে ক্ষোভ-অসন্তোষ ঘুরছে সোশ্যাল মিডিয়া হ্যান্ডেলে। প্রশ্ন উঠেছে, প্রাইম ব্যাংক এখন কোন পথে?

কালের আলো/বিএস/এমএ

Print Friendly, PDF & Email