নতুন ভাড়ায় চলছে পরিবহণ, নানা অভিযোগ যাত্রীদের
প্রকাশিতঃ 10:18 am | November 08, 2021

নিজস্ব সংবাদদাতা, কালের আলো:
সম্প্রতি জ্বালানি তেলের দাম প্রতি লিটারে ১৫ টাকা বৃদ্ধি করায় সারা দেশে পরিবহন ধর্মঘট ডেকেছিল মালিক, শ্রমিকরা। গনপরিবহনের সাথে লঞ্চ মালিকরাও ধর্মঘটের ডাক দিয়েছিলো। টানা তিন দিন সারা দেশে পরিবহন ধর্মঘটের পর সারকারের সাথে বৈঠক করে পরিবহনের ভাড়া বৃদ্ধি করে চালু হয়েছে গণপরিবহন।
বিরতির পর গণপরিবহনের চাকা ঘুরলেও ভাড়া বৃদ্ধি করায় অনেকটা অস্বস্তি বোধ করছে যাত্রীরা। নিরুপায় হয়েই গুনতে হচ্ছে অধিক ভাড়া। পরিবহন মালিক- শ্রমিকরা স্বস্তি বোধ করলেও মলিন মুখে যাত্রীরা।
সোমবার (৮ নভেম্বর) রাজধানী ঢাকার গাবতলী, কল্যানপুর, মোহাম্মদপুর এলাকার বাস টার্মিনাল ঘুরে এমন চিত্র দেখা যায়।
কোনো কোনো পরিবহণ নতুন নির্ধারিত ভাড়ার চেয়েও বাড়তি ভাড়া আদায় করছে বলে অভিযোগ অনেক যাত্রীর। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সাধারণ যাত্রীরা।
যাত্রীরা বলছেন, তেলের দাম লিটারে ১৫ টাকা বাড়িয়ে দিয়েছে সরকার। এটি অযৌক্তিক। লিটারে ৫ টাকা করে বাড়ালে সাধারণ মানুষের জন্য ভালো হতো। সব মিলিয়ে সাধারণ মানুষের ওপর ভয়াবহ চাপ তৈরি হয়েছে।
এদিকে লঞ্চের ভাড়া পুনর্নির্ধারণের পর রাত থেকে শুরু হয়েছে লঞ্চ চলাচলও। রাজধানী সদরঘাটসহ বিভিন্ন ঘাট থেকে রাতেই বিভিন্ন গন্তব্যের উদ্দেশে ছেড়ে যায় লঞ্চগুলো। সকালে এসব লঞ্চ নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছায়। লঞ্চের নতুন ভাড়াকেও অস্বাভাবিক বলে উল্লেখ করেছেন যাত্রীরা।
বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করেন সালাহউদ্দিন, নারায়ণগঞ্জ থেকে উৎসব পরিবহণে গুলিস্তানে যাচ্ছেন তিনি। ভাড়া বাড়ানোর বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, গুলিস্তানে যেতে আগে ৩৫ টাকা ভাড়া লাগত; তবে নতুন ভাড়ায় এখন ৫০ টাকা গুনতে হচ্ছে।
এ বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, আমাদের বেতন তো আগের মতোই আছে; তবে নতুন বাড়তি ভাড়ার টাকা আসবে কোত্থেকে।
বাঙলা কলেজ থেকে বসুন্ধরাগামী যাত্রী রাবেয়া জানান, আগে এই পথের ভাড়া ছিল ২৫ টাকা; এখন ৩৫ টাকা লাগছে।
তিনি বলেন, চাকরিজীবী মানুষের যে বেতন বাড়ছে না, সেটি নিয়ে কেউ কথা বলে না। এমনিতেই নিত্যপ্রয়োজনীয় সব পণ্যের দাম নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। তার ওপর আবার যানবাহনের ভাড়া বৃদ্ধি ২৭ শতাংশ।
সোনারগাঁওয়ের মুগড়াপাড়ার চৌরাস্তা থেকে গুলিস্তানগামী যাত্রী সাদ্দাম জানান, আগে এ রুটে ভাড়া ছিল ৪৩ টাকা; এখন দিতে হচ্ছে ৫৫ টাকা। অযথা সাধারণ মানুষের ওপর বোঝা চাপিয়ে দেওয়া হলো। সীমিত আয়ের যারা, তাদের জন্য অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছেছে এ ভাড়া।
যাত্রী আবুল কালাম বলেন, সদরঘাট থেকে কুড়িল বিশ্ব রোড আগে বাস ভাড়া ছিল ৩০ টাকা, তবে আজ গুলিস্তান থেকে আমাকে ৪০ টাকা ভাড়ায় বসুন্ধরায় যেতে হলো। অথচ ১০ কিলোমিটার রাস্তায় ভাড়া হওয়ার কথা ২২ টাকা।
তিনি বলেন, আমাদের মতো সাধারণ জনগণের কথা কে শুনবে? এ দেশে জন্ম নেওয়াই আমাদের অপরাধ।
এর মধ্যে শনিবার বিকেল থেকে লঞ্চ চলাচলও বন্ধ করে দেন মালিকেরা। তবে গতকাল রোববার রাজধানীর মতিঝিলের বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহণ কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) কার্যালয়ে লঞ্চ মালিকদের বৈঠকে ভাড়া বাড়ানো ও ধর্মঘট প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত হয়।
ডিজেল ও কেরোসিনের দাম শতকরা ২৩ ভাগ বাড়ানোর পরিপ্রেক্ষিতে এবার লঞ্চভাড়া ৩৫ দশমিক ২৯ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। ভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হওয়ার পর লঞ্চ ধর্মঘট প্রত্যাহার করা হয়।
সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, লঞ্চ ভাড়া ১০০ কিলোমিটার পর্যন্ত এক টাকা ৭০ পয়সার পরিবর্তে দুই টাকা ৩০ পয়সা করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে ৬০ পয়সা বেড়েছে।
১০০ কিলোমিটারের বেশির ক্ষেত্রে এক টাকা ৪০ পয়সা থেকে বাড়িয়ে দুই টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রেও ৬০ পয়সা করে বেড়েছে।
এ ছাড়া জনপ্রতি সর্বনিম্ন ভাড়া ১৮ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩০ টাকা করা হয়েছে বলে জানিয়েছে বিআইডব্লিউটিএ।
কালের আলো/এসবি/এমএইচএ