৪৯ দিন পর চলছে দূরপাল্লার বাস, ট্রেন ও লঞ্চ
প্রকাশিতঃ 10:27 am | May 24, 2021

নিজস্ব সংবাদদাতা, কালের আলো:
করোনাভাইরাসের কারণে দেড় মাসেরও বেশি সময় বন্ধ থাকার পর আজ থেকে মহাসড়কে দূরপাল্লার বাস চলাচল শুরু হয়েছে। এছাড়া যাত্রীবাহী ট্রেন ও লঞ্চ চলাচলও শুরু হয়েছে আজ।
সোমবার(২৪ মে) সকাল থেকে অর্ধেক আসনে যাত্রী নিয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে গন্তব্যে ছুটছে দূরপাল্লার এসব গণপরিবহন।
রাজধানীর গাবতলী বাস টার্মিনাল, কল্যাণপুর, মহাখালী, আব্দুল্লাপুর, যাত্রাবাড়ী এলাকায় গিয়ে বাস চলাচল করতে দেখা গেছে। প্রায় দেড় মাস পর মানুষের আনাগোনায় মুখর হয়ে উঠেছে বাস টার্মিনালগুলো।
কল্যাণপুরে গিয়ে দেখা গেছে, উত্তরাঞ্চলে যেসব বাস যাচ্ছে সেগুলো স্বাস্থ্যবিধি মেনে ছেড়ে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে সরকার নির্দেশিত স্বাস্থ্যবিধি মেনে ও অর্ধেক আসন ফাঁকা রাখা হচ্ছে। তবে প্রথমদিনে সকালে যাত্রীসংখ্যা খুব বেশি দেখা যায়নি। সময় বাড়ার সঙ্গে যাত্রী সংখ্যা বাড়বে বলে মনে করছেন বাস কর্তৃপক্ষ।
এছাড়া ৪৯ দিন বন্ধ থাকার পর সোমবার (২৪ মে) ভোর থেকে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে। সরকার ঘোষিত নির্দেশনা অনুযায়ী, অর্ধেক আসনে যাত্রী নিয়ে ট্রেন চলাচল করছে।
কমলাপুর রেল স্টেশনের ম্যানেজার মাসুদ সারোয়ার বলেন, সোমবার (২৪ মে) ভোর ৬টা ২০ মিনিটে ঢাকা-সিলেট রুটে পারাবত এক্সপ্রেস ছেড়ে গেছে। এর আগে লোকাল ট্রেন বলাকা এক্সপ্রেস ছেড়ে যায়।
এদিকে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে দীর্ঘ ৪৯ দিন বন্ধ থাকার পর বাংলাবাজার-শিমুলিয়া নৌরুটে সোমবার (২৪ মে) ভোর থেকে লঞ্চ চলাচল শুরু হয়েছে। এদিন ভোর ৬টা থেকে ঢাকাগামী যাত্রীরা লঞ্চে পার হতে শুরু করেছেন।
এর আগে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ বাড়লে ৫ এপ্রিল থেকে লঞ্চ চলাচল বন্ধ রাখে কর্তৃপক্ষ। এই সময়ে নৌরুটে শুধুমাত্র ফেরি চলাচল স্বাভাবিক ছিল। বিকল্প নৌযান না থাকায় যাত্রীদের চরম ভোগান্তি মাথায় নিয়ে ঈদে বাড়ি ফিরতে হয়েছে একইসঙ্গে ঈদের পর ঢাকায় ফিরতে হচ্ছে।
এদিকে লঞ্চ চলাচল শুরু করায় স্বস্তি দেখা দিয়েছে যাত্রীদের মধ্যে।
বাংলাবাজার ঘাট সূত্রে জানা গেছে, সোমবার সকাল থেকে লঞ্চ চলাচল শুরু করায় যাত্রীরা ফেরির পাশাপাশি লঞ্চে পদ্মা নদী পার হচ্ছেন। ফলে ফেরিতে কমে এসেছে যাত্রীচাপ আর গাদাগাদি। তবে লঞ্চে স্বল্প সংখ্যক যাত্রী পারাপারের নির্দেশনা থাকলেও তার কার্যকারিতা তেমন দেখা যায়নি।
লঞ্চ কর্তৃপক্ষ দাবি করছেন, তারা ঘাটে দাঁড়িয়ে থেকে স্বাস্থ্যবিধি মোতাবেক যাত্রী উঠাচ্ছেন লঞ্চে।
দীর্ঘদিন পরে লঞ্চ চালু হওয়ায় লঞ্চ মালিক-শ্রমিকদের মাঝেও স্বস্তি দেখা দিয়েছে।
দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হলে ২০২০ সালের ২১ মার্চ থেকে সবধরনের যান চলাচল বন্ধ করে দেয় সরকার। দুই মাসের বেশি সময় বন্ধ থাকার পর গেলো বছরের ১ জুন থেকে স্বাস্থ্যবিধি মানার শর্ত সাপেক্ষে অর্ধেক যাত্রী নিয়ে গণপরিবহন চলাচলের অনুমতি দেয় সরকার। তখন ৬০ শতাংশ ভাড়া বাড়ানো হয়।
গত বছরের ৩০ নভেম্বরের পর থেকে এ বছরের ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি পর্যন্ত সংক্রমণ ধীরে ধীরে কমছিল। কিন্তু মার্চের শুরু থেকে তা উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছে যাওয়ায় এপ্রিলে শুরুর দিকে সব ধরনের জনসমাগম সীমিত করাসহ ১৮ দফা নির্দেশনা জারি করে সরকার।
সেখানে বলা হয়, গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে এবং ধারণক্ষমতার ৫০ শতাংশের বেশি যাত্রী পরিবহন করা যাবে না।
করোনার সংক্রমণ উদ্বেগজনকহারে বাড়তে থাকায় গত ৫ এপ্রিল সকাল ছয়টা থেকে বিধিনিষেধ জারি করা হয়। তখন থেকেই দূরপাল্লার বাস, লঞ্চ ও ট্রেন বন্ধ আছে। ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত ঢিলেঢালা লকডাউন হলেও সংক্রমণ আরও বেড়ে যাওয়ায় ১৪ এপ্রিল থেকে ‘কঠোর লকডাউন’ ঘোষণা করে সরকার। পরে সিটি করপোরেশন এলাকায় গণপরিবহন চলাচলের অনুমতি দেওয়া হলেও দূরপাল্লার বাস, লঞ্চ এবং ট্রেন চলাচল বন্ধ ছিল। ঈদেও লঞ্চ-ট্রেন এবং দূরপাল্লার বাস বন্ধ রাখা হয়েছিল। বন্ধের দেড় মাসেরও বেশি সময় পর গতকাল বাস-ট্রেন চলাচলের অনুমতি দেয়া সরকার।
রবিবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে জারি করা প্রজ্ঞাপনে লকডাউনের সময় ৩০ মে পর্যন্ত বাড়ানো হলেও আন্ত:জেলা সব ধরনের গণপরিবহন চলাচলের অনুমতি দেয়া হয়। ফলে দূরপাল্লার বাস, লঞ্চ, ট্রেন চলতে আর কোনো বাধা নেই। তবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে নিতে হবে অর্ধেক যাত্রী। যাত্রীদের পরতে হবে মাস্ক।
কালের আলো/এসকে/এমএইচএ