ফেসবুকে প্রতারণা, ১৫ নাইজেরিয়ান গ্রেপ্তার
প্রকাশিতঃ 4:59 pm | August 28, 2020

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:
বিভিন্ন দেশের মানুষকে বোকা বানিয়ে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে আন্তর্জাতিক একটি চক্র। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে বিদেশি নারী সেনা কর্মকর্তা সেজে ভুয়া সেনা কর্মকর্তাদের ছবি দিয়ে ফেসবুক আইডি খুলে প্রথম বন্ধুত্ব। এরপর সুযোগ বুঝে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলারের উপহার পাঠানোর প্রলোভন দেখিয়ে বিপুল পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নিতেন তারা— এমন অভিযোগে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ১৫ জন নাইজেরিয়ানকে গ্রেপ্তার করেছে বাংলাদেশ পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
শুক্রবার (২৮ আগস্ট) দুপুরে রাজধানীর মালিবাগ সিইডির প্রধান কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান অতিরিক্ত ডিআইজি শেখ রেজাউল হায়দার।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন— নেজুবেচুকুউ ইউজিন দারা (৩০), চুয়াউমা জন ওকেচুকুয়ু (৪০), উচেনা দামিয়ান এমেসিয়ানি (৩০), চিসোম অ্যান্থনয় একওয়েনজে (৩৫), সাইমন ইফেচুকউডে ওকাফোর (৩০), হেনরি ওসিটা ওচেকুকউ (৩১), ইফানেয়ি জনপল চিনভেজে (৩২) পিটার (৩২), এমেকা ডোনাতাস (৪৮), গজি ওনিয়েদো (৪৭), পিটার চিকা আকপু (৪৮), ওবিনা রবিবার (৩৮), নওয়ানা ইয়ং (৩৪), জেরেমি চুকউডি ইজেবি (৩৪), স্টিফেন ওজিওমা ওবিয়াকোয়েজ (৩৪)। তারা প্রত্যেকেই নাইজেরিয়ার নাগরিক। তাদেরকে গ্রেপ্তারের সময় প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত ৯টি ল্যাপটপ, ২২ টি মোবাইল এবং ৫টি অর্জিত অর্থের হিসাবের ডায়েরি জব্দ করেছে সিআইডি।
গ্রেপ্তারের পর শুক্রবার দুপুরে তাদেরকে মালিবাগের সিআইডি কার্যালয়ে আনা হলে হই হুল্লোড় শুরু করে। তারা নানাভাবে নিজেদের নির্দোষ দাবি করার চেষ্টা করলেও সিআইডি বলছে, দীর্ঘদিন ধরে তারা মিথ্যা তথ্যে ও অসদুপায়ে ভিসা ছাড়া বাংলাদেশে অবস্থান করে ডলার বা গিফট দেয়ার নামে প্রতারণা করে আসছিল। গিফট দেয়ার নামে এ পর্যন্ত তারা বিপুল পরিমাণ টাকা আত্মসাত করেছে।
সংবাদ সম্মেলনে এডিশনাল ডিআইজি শেখ রেজাউল হায়দার বলেন, আমেরিকান নারী সেনা অফিসারের ভুয়া ফেসবুক আইডি ও হোয়াট্সঅ্যাপ ব্যবহার করে গ্রেপ্তারকৃতরা বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের মানুষের সঙ্গে তাদের ব্যবহৃত ল্যাপটপ ও মোবাইলে এসএমএসের মাধ্যমে ব্যক্তিগত আকর্ষণীয় ছবি পাঠিয়ে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি করে। পরবর্তীতে মেসেজের মাধ্যমে বলে, সে ইয়েমেন, আফগানিস্তান বা সিরিয়াতে আছে। তার কাছে কয়েক মিলিয়ন ডলার রয়েছে, কিন্তু ওই দেশে যুদ্ধ চলমান থাকায় যেকোনো সময় সেগুলো নষ্ট হতে পারে। তাই নতুন বন্ধুকে ডলার বা এই মূল্যমান সম্পদ গিফট করতে চায়। যদি বেঁচে থাকে তাহলে এগুলো পরে ফেরত নেবে বলেও জানায়।
তিনি বলেন, এমন প্রলোভন দিয়ে প্রথমে বন্ধুদের ঠিকানাসহ মোবাইল নম্বর নেয় এবং ওই ঠিকানায় বন্ধুদের ফেসবুক মেসেঞ্জারে ও হোয়াট্স অ্যাপে গিফট প্যাকেটের ছবি পাঠায়। পরবর্তী মেসেজে যেকোনো একটি এয়ারলাইনসে গিফট প্যাকেটটি বুকিং দেয়া হয়েছে এরকম রশিদের ছবি পাঠায়। ঠিক দুই দিন পর বন্ধুর (ভুক্তভোগীর) মোবাইলে ফোন করে ভিডিওকলে এয়ারপোর্ট কাস্টমস অফিসে থাকা গিফট প্যাকেট দেখায় এবং কাস্টমসের ভ্যাট বাবদ বিভিন্ন ধাপে টাকা নিতে থাকে। এভাবে এক সরকারি চাকরিজীবীসহ অসংখ্য লোকের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে। ওই সরকারি চাকরিজীবীর কাছ থেকেই হাতিয়ে নিয়েছে সোয়া ৫ লাখ টাকা।
রেজাউল হায়দার আরো জানান, ওই ভুক্তভোগী পরবর্তীতে এ বিষয়ে জানতে পেরে আর টাকা না পাঠিয়ে সিআইডিকে জানান। পরবর্তীতে আবার টাকা চেয়ে ফোন করলে সিআইডির একটি দল হাতেনাতে কাস্টমস কর্মকর্তা পরিচয় দানকারী মোবাইল, ল্যাপটপসহ বিপুল পরিমাণ আলামত জব্দ করে তাদেরকে গ্রেফতার করে।
তিনি বলেন, এ পর্যন্ত আমারা যে তথ্য পেয়েছি এতে দেখা যায়, তারা ভারত, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, দুবাই, ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়াসহ বিভিন্ন দেশের মানুষকে বোকা বানিয়ে গিফট দেয়ার নামে প্রতারণামূলকভাবে নিজ নিজ দেশের সহযোগী ও ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। তারা একটি আন্তর্জাতিক প্রতারক চক্র। তাদের সহযোগীরা উল্লেখিত প্রত্যেকটি দেশে অবস্থান করছে। এর আগে সিআইডি প্রায় একই কায়দায় প্রতারণা করায় গত ২ জুলাই ৩ জন ও ২১ জুলাই ১৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের সাথে গতকাল গ্রেপ্তার ১৫ জন প্রত্যেকটা ঘটনায় প্রতারণার টাকা গ্রহণে ব্যবহৃত একটা বা একাধিক ব্যাংক অ্যাকাউন্ট হোল্ডারের নাম মিলে যাচ্ছে। তাদের বিশদ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ড চেয়ে দুপুরে ঢাকা মহানগর আদালতে সোপর্দ করা হবে। এরা বাংলাদেশ বিভিন্ন স্থানে থাকলেও মূলত একই সংঘবদ্ধ একটি চক্র বলে জানান রেজাউল হায়দার।
তাদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে পল্লবী থানায় একটি মামলা করা হয়েছে।
কালের আলো/এমএ/বিএসকে