দৃঢ় প্রত্যয়ী সেনাপ্রধানের প্রজ্ঞা-বিচক্ষণতায় নির্বাচনমুখী দেশ

প্রকাশিতঃ 6:58 pm | October 03, 2025

এম.আব্দুল্লাহ আল মামুন খান, অ্যাকটিং এডিটর:

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে সেনা-ছাত্র-জনতা এক কাতারে শামিল হয়ে নতুন এক আবহ তৈরি করেছিল বাংলাদেশে। গত বছরের ৫ আগস্টের আগে তাঁর বাহিনীকে ‘নো ফায়ার’ কার্যকর নির্দেশনা বদলে দিয়েছিল দৃশ্যপট। যার ফলশ্রুতিতেই নিজের জীবদ্দশায় ইতিহাসের বাঁক পরিবর্তনের কাণ্ডারি হিসেবে আবির্ভূত করেছিলেন নিজেকে। বারবার তিনি বলে দিয়েছিলেন রাজনীতি নিয়ে তাঁর কোন উচ্চাকাঙ্ক্ষা নেই। রাজনীতিকদের বিকল্প কেবলই রাজনীতিক, সেনাবাহিনী নয়। কথার সঙ্গে মিল রেখে তিনি কাজ করে চলেছেন অহর্নিশ। অন্তর্বর্তী সরকারকে সহযোগিতা ও সেনাবাহিনীর নিরপেক্ষতা বজায় রাখার নীতি কাগজে-কলমেও প্রমাণ দিয়েছেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। সুন্দর আগামীর পথনকশা অঙ্কনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। নিজের নেতৃত্বের ক্যারিশমা, বিচক্ষণতা ও প্রজ্ঞায় নির্বাচনমুখী করেছেন দেশকে।

  • নিজের জীবদ্দশায় ইতিহাসের বাঁক পরিবর্তনের কাণ্ডারি
  • নেতৃত্বের ম্যাজিকে প্রতিহত করেছেন স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব বিরোধী চক্রান্ত
  • ১৬ বছর পর আবারও নির্বাচনী দায়িত্বে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী হিসেবে সশস্ত্র বাহিনীকে অন্তর্ভুক্ত
  • ভোটের মাঠে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর হিসেবে বিবেচিত হবে সেনাবাহিনীর ভূমিকা

সর্বোচ্চ পেশাদার, দক্ষ ও দৃঢ় প্রত্যয়ী সেনাপ্রধান গণতন্ত্র, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব বিরোধী যেকোন চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র প্রতিহত করেছেন নিজ নেতৃত্বের ম্যাজিকে। যেভাবে নিশ্চিত রক্তপাত থেকে দেশকে রক্ষা করে পথের দিশা দিয়েছিলেন ৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের আগে। গত ১১ মাসে দেশ ও দেশের বাইরে থেকে নানা উসকানি ও বাড়বাড়ন্ত গুজবের মধ্যেও নিজের বাহিনীর উঁচু মনোবল অটুট রেখেছেন জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। পরতে পরতে ধৈর্য্য, সংযম ও মানবিকতার সারি সারি চিত্রপট রচনা করেছেন। আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিতব্য ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে মাঠ প্রস্তুত করছে সেনাবাহিনী। এই নির্বাচনের মাধ্যমে রাজনৈতিক সরকার দায়িত্ব গ্রহণের সঙ্গে সঙ্গেই সেনাবাহিনী ব্যারাকে ফিরে যাবে বলেও আশাব্যঞ্জক বার্তা দিয়েছেন বহুবার। ম্যাজিষ্ট্রেসি ক্ষমতা নিয়ে সেনাবাহিনী এবার মাঠে থাকায় অনেক সমূহ বিপদ থেকে রক্ষা পেয়েছে দেশ। দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব অক্ষুণ্ন রাখার পাশাপাশি জননিরাপত্তা ও জনশৃঙ্খলা রক্ষার সমান্তরালে অনাকাঙ্ক্ষিত সব নৈরাজ্য-সহিংসতা প্রতিরোধ, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্টের অশুভ তৎপরতা তাঁরা রুখে দিয়েছে সর্বোচ্চ পেশাদারিত্বের মানদণ্ডে উত্তীর্ণ হয়েই। এই দীর্ঘ সময়ে দেশের বিভিন্ন শিল্পাঞ্চলে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে সচল রাখা, সড়ক-মহাসড়কে বাধামুক্ত রাখা বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিশৃঙ্খলার পরিস্থিতি মোকাবিলার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ ফয়সালাও করেছেন সেনাপ্রধান।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিভিন্ন সময়ে আহতদের সুচিকিৎসার ব্যবস্থাও করেছে সেনাবাহিনী। দেশের বিভিন্ন সিএমএইচে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়। গুরুতর আহত কয়েক জনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশেও পাঠিয়েছে। মব ভায়োলেন্স শক্ত হাতে প্রতিরোধে সেনাবাহিনীকে সোচ্চার রেখেছেন এই চার তারকা জেনারেল। দেশের বিরাজমান পরিস্থিতিতে সশস্ত্র বাহিনী দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা, জনগণের জানমাল এবং রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ ও স্থাপনার নিরাপত্তা প্রদানসহ সার্বিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখতে নিরলসভাবে কাজ করে চলেছে। সশস্ত্র বাহিনী মাঠে না থাকলে কঠিন এই পরিস্থিতি মোকাবিলা ছিল একেবারেই অসম্ভব। অবৈধ অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধারে সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা করে ভোটের মাঠে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডও তাঁরা নিশ্চিত করছে একদিন-প্রতিদিন।

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড.মুহাম্মদ ইউনূস’র ঘোষণার পরপরই ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে সব শঙ্কা-অনিশ্চয়তা দূর হয়েছে। আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় এই নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য করতে চলছে নানা সমীকরণ। প্রধান উপদেষ্টা ক’দিন আগে জাতিসংঘ সফরকালে নিউইয়র্কে বিশিষ্ট মানবাধিকার রক্ষাকারীদের একটি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠকে জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে বাংলাদেশ এক ‘গুরুত্বপূর্ণ সময়’ অতিক্রম করছে বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, ‘কিছু আন্তর্জাতিক মহল নির্বাচনপ্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করছে।’ তবে যেকোনভাবে নির্বাচনে ভোটদান নির্বিঘ্ন ও উৎসবমুখর করতে চায় অন্তর্বর্তী সরকার। পাশাপাশি নির্বাচনকে প্রতিযোগিতামূলক করতে জনপ্রশাসনের ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর হিসেবে বিবেচিত হবে সেনাবাহিনীর ভূমিকা।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, বাংলাদেশে বেশিরভাগ নির্বাচনই কম নির্বাচন গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। ১৯৯১ সালের পঞ্চম, ১৯৯৬ সালের সপ্তম, ২০০১ সালের অষ্টম এবং ২০০৮ সালের নবম- এই চারটি নির্বাচনই অংশগ্রহণমূলক ছিল। রাজনীতির মাঠে নানা কথা থাকতে পারে কিন্তু নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে সেই রকম বড় কোনো প্রশ্ন নেই। তবে পতিত আওয়ামী লীগ ও তার মিত্রদের বর্জন করা ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ষষ্ঠ, বিএনপি ও তার মিত্রদের বর্জন করা ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম, ২০১৮ সালের রাতের ভোটের একাদশ ও ২০২৪ সালের সালের ৭ জানুয়ারির ‘ডামি ভোট’ হিসেবে পরিচিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদের একতরফা নির্বাচন দেশ-বিদেশে কোথাও গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। এসব নির্বাচনে ভোটারের ন্যূনতম উপস্থিতি ছিল না বললেই চলে। এবার সব থেকে সেরা একটি জাতীয় নির্বাচন উপহার দিতে নিজের দৃঢ় অঙ্গীকারের কথা জানিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।

সবচেয়ে আশার বিষয় হচ্ছে এবারের নির্বাচনে হারানো ক্ষমতা ফিরে পাচ্ছে সেনাবাহিনী। দীর্ঘ ১৬ বছর পর আবারও নির্বাচনী দায়িত্বে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী হিসেবে সশস্ত্র বাহিনীকে অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। নির্বাচন কমিশনের (ইসি) প্রস্তাবিত আরপিও (গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ) সংশোধনীতে সেনাবাহিনীকে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সংজ্ঞায় ফের যুক্ত করা হয়েছে। ২০০১ সালের সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সংশোধিত আরপিওতে সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীকে পুলিশ কর্মকর্তার মতোই ক্ষমতা দেওয়া হয়েছিল, যাতে তারা নির্বাচনী অপরাধে বিনা পরোয়ানায় গ্রেপ্তার করতে পারে। তবে ২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে এই ক্ষমতা প্রত্যাহার করে। এর ফলে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ, র‌্যাব, আনসার, বিজিবি ও কোস্টগার্ডের মতো কর্তৃত্ব তখন আর সেনাবাহিনীর ছিল না। তবে এবার আর তেমনটি ঘটার সুযোগ নেই। বিশ্লেষকরা মনে করেন, সেনাবাহিনী স্বমহিমায় আইন প্রয়োগকারী সংস্থা হিসেবে দায়িত্ব ফিরে আসায় দেশের সাধারণ মানুষও আশান্বিত হয়েছেন। তাঁরা সরকারের এই সময়োপযোগী সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী সম্প্রতি জানিয়েছেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পুলিশ ও আনসারের পাশাপাশি সেনাবাহিনীর ৮০ হাজারেরও বেশি সদস্য মোতায়েন করা হবে।

কালের আলো/এমএএএমকে