ছাত্র রাজনীতি করলেও কখনো বড় পোস্ট চাইনি : প্রধানমন্ত্রী
প্রকাশিতঃ 3:40 pm | May 17, 2019

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:
প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, স্কুল জীবন থেকেই রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলাম। তারপর কলেজে গিয়ে.. তারপর ইউনিভার্সিটিতে তখনো ছাত্রলীগেরই সদস্য ছিলাম। আমার রাজনীতি ছাত্র রাজনীতি থেকেই শুরু। তবে কখনো কোনো বড় পোস্টে ছিলাম না, পোস্ট চাইওনি কখনো।
শুক্রবার (১৭ মে) প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ৩৯তম স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে দলীয় নেতাকর্মীরা গণভবনে তাকে শুভেচ্ছা জানাতে এলে তিনি এসব কথা বলেন।
আরো পড়ুনঃ গণতান্ত্রিক ধারা ফিরিয়ে আনতেই দেশে ফিরে আসি: প্রধানমন্ত্রী
তিনি বলেন, যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কমিটির একজন সদস্য ছিলাম। কখনো পদ নিয়ে চিন্তা করিনি, পদ চাইওনি। আমরা পদ সৃষ্টি করে এবং সবাইকে পদে বসানো এই দায়িত্বটাই পালন করতাম।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে বঙ্গবন্ধু নিহত হওয়ার পর বিদেশে নির্বাসিত অবস্থায় আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার কথা উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, ৭৫ এর এত বড় দায়িত্ব আমাকে নিতে হবে এটা কখনো আমি ভাবিনি, চাইওনি, এটা চিন্তাও ছিল না।

এসময় শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশে যখন ফিরেছিলাম (১৯৮১ সালের ১৭ মে), সেদিন আকাশ মেঘে ঢাকা ছিল। প্রচণ্ড ঝড়-বৃষ্টি হচ্ছিল। বিমানটি বাংলার মাটি ছুঁয়েছে, ট্রাকে করে আমাদের নিয়ে আসা হচ্ছে। ওই সময় ঝড়-বৃষ্টি উপেক্ষা করে হাজার হাজার মানুষ এসেছিল। এয়ারপোর্ট থেকে সংসদ ভবন পর্যন্ত এত মানুষের ঢল যে এইটুকু পথ আসতে প্রায় চার ঘণ্টা সময় লেগে গিয়েছিল।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার সেই নির্মম ঘটনার স্মরণ করে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, মাত্র ১৫ দিন আগে, জুলাই মাসের ৩০ তারিখে ছোট বোন রেহানাকে নিয়ে আমি জার্মানিতে গিয়েছিলাম। রেহানা পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। কলেজে গেলাম। সবাইকে রেখে গিয়েছিলাম, কামাল, জামাল, রাসেল…। মাত্র ১৫ দিনের মাথায় শুনলাম, আমাদের কেউ নেই, আমরা নিঃস্ব। আমাদের দেশেও আসতে দেওয়া হলো না। একপর্যায়ে চাচা এসে আমাদের নিয়ে যায়।
দেশের জন্য কিছু করার তাগিদ থেকেই ফিরে এসেছিলেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি সিদ্ধান্ত নিলাম দেশে আসব। আমি জানি না কী করব, কোথায় থাকব, কই যাব। অনেক বাধা, অনেক বিপত্তি। তবু সিদ্ধান্ত নিলাম, আমাকে আসতেই হবে।

বঙ্গবন্ধুই রাজনৈতিক আদর্শ ছিলেন উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, রাজনীতির কাজ করে যেতাম আব্বার আদর্শ নিয়ে। তিনি দেশের জন্য কাজ করেছেন। বছরের পর বছর জেল খেটেছেন। আমরা কখনো টানা দুই বছরও আব্বাকে জেলের বাইরে পাইনি। এ নিয়ে আমাদের কোনো হা-হুতাশ ছিল না। আমার মা খুব চিন্তাশীল ছিলেন, তিনি বাসাও দেখতেন, বাইরেও দেখতেন। সাংসারিক কোনো ঝামেলা তিনি আব্বাকে দিতে চাইতেন না। আমাদের দাদা-দাদী, চাচারা পারস্পরিক সহযোগিতা করতেন। কাজেই এমন একটি পরিবেশ থেকে আমরা উঠে এসেছি, যে মাথাতেই ছিল দেশের জন্য কিছু একটা করে যেতে হবে।
দেশের ফেরার পরের প্রতিকূল পরিস্থিতির কথা তুলে ধরেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। তিনি বলেন, দেশে ফেরার পর থেকেই পদে পদে বাধা। যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস করে না, তারাই তখন ক্ষমতায়। ১৯৭৫ সাল থেকে ১৯৮২ সাল পর্যন্ত ১৯টি ক্যু হয়েছিল। এক সামরিক শাসকের মৃত্যুর পর আরেক সামরিক শাসক আসলো। আমরা আওয়ামী লীগ কিন্তু গণতন্ত্রের জন্য একটার পর একটা সংগ্রাম করেই গেছি। কারণ আমরা বিশ্বাস করি, গণতান্ত্রিক ধারা আর ব্যবস্থা ছাড়া দেশের উন্নয়ন করা সম্ভব না।

পঁচাত্তর পরবর্তী সময় ছাড়াও ২০০১ সালের পর থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত হাজার হাজার নেতাকর্মীকে নির্যাতন করা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা। তা সত্ত্বেও দলকে টিকিয়ে রাখতে যারা অবদান রেখেছেন, তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ ঠিক যেভাবে গড়ে উঠেছিল, ঠিক সেভাবেই আজ বাংলাদেশের এক নম্বর পলিটিক্যাল পার্টি। যেভাবে মানুষের আস্থা, বিশ্বাস আমরা অর্জন করেছি তা আমরা দেখতে পাই এবারের নির্বাচনে। আজ বাংলাদেশ সারাবিশ্বে সম্মানের সঙ্গে দাঁড়িয়ে আছে। মানুষ বলে, বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল। আমি জানি না, যখনই একটা কাজ সফলভাবে করি, তখন শুধু আমার এটাই মনে হয়— নিশ্চয় আমার আব্বা-আম্মা বেহেশত থেকে দেখছেন।
কালের আলো/এএ/এমএইচএ