কলসিন্দুর নাশকতার রহস্য উন্মোচনের দাবি এলাকাবাসীর

প্রকাশিতঃ 10:40 am | May 15, 2019

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:

বিদ্যালয়ের অফিস কক্ষে রহস্যময় আগুনে পুড়ে গেছে দেশের নারী ফুটবলের গর্বের প্রতীক সাজেদা, শামসুন্নাহারদের সনদপত্র ও মেডেল। নারী ফুটবলকে দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশের মাটিতেও উঁচুতে নিয়ে যাওয়া ফুটবলকন্যাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এমন ঘটনা ঘটবে, কল্পনাতেও আসেনি কলসিন্দুর উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও এলাকাবাসীর।

গারো পাহাড়ের পাদদেশের প্রত্যন্ত গ্রামে ফুটবল খেলে দেশের নারী ফুটবলে একের পর এক সাফল্য এনে গোটা গ্রামকে বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত করেছেন তারা। বিশ্ব মানচিত্রেও কলসিন্দুরের নাম উজ্জ্বল করতে প্রমীলা ফুটবলাররা কী প্রাণান্তকর চেষ্টাই না চালিয়ে যাচ্ছেন!

কিন্তু সেই সাজেদা, শামসুন্নাহার জুনিয়র ও রোজিনাদের বহু শ্রম-ঘামে অর্জন করা সনদপত্র ও মেডেল কেউ পুড়িয়ে দিতে পারে, বিদ্যালয়ে আগুন দিতে পারে- এমন বাস্তবতার মুখোমুখি কলসিন্দুরবাসীর আবেগে তাই প্রচণ্ড ধাক্কা লেগেছে। তারা দ্রুত এ নাশকতার রহস্য উন্মোচনের দাবি জানিয়েছেন।

উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়টির কলেজ শাখার শিক্ষকরাও পুরো ঘটনায় হতবাক। এ ঘটনায় সাধারণ ডায়েরি না মামলা, কোনটি মঙ্গল, এমন প্রশ্নে সিদ্ধান্তহীনতায় রয়েছেন তারা। ফলে মঙ্গলবার (১৪ মে) রাতে ধোবাউড়া থানায় গিয়েও কোনো অভিযোগ না দিয়েই ফিরে এসেছেন তারা।

তবে বুধবার (১৫ মে) ম্যানেজিং কমিটি, শিক্ষক ও স্টাফদের সভায় সিদ্ধান্তের পর পরই আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কালের আলো’কে এমনটাই জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট শিক্ষকরা।

এর আগে, মঙ্গলবার (১৪ মে) ভোরে কলসিন্দুর উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয়তলার অফিস কক্ষের তালা ভেঙে সেখানে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। আগুনে ফুটবলকন্যাদের খেলার সনদপত্র, শিক্ষকদের সনদপত্র, রেজ্যুলেশন বই, মেডেলসহ মূল্যবান কাগজপত্র পুড়ে যায়।

রমজান মাস উপলক্ষে নয়দিন আগে বন্ধ হওয়া বিদ্যালয়টিতে গণিত ও ইংরেজি বিষয়ে পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের বিশেষ ক্লাস নিতে ওইদিন সকালে বিদ্যালয়ে যান শিক্ষক উজ্জল চন্দ্র পাল। আগুনের বিষয়টি প্রথমে তারই নজরে আসে। পরে একে একে সব শিক্ষকদের মধ্যে বিষয়টি জানাজানি হয়।

শামসুন্নাহার জুনিয়র ও সাজেদাদের উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে এমন ‘রহস্যময় আগুন’ হতভম্ব করে দিয়েছে এলাকাবাসীদেরও।

নিজেদের অবারিত ভালোবাসা আর সমর্থনে কলসিন্দুরের ফুটবলকন্যারা দেশবাসীকে গর্বিত করলেও তাদের প্রতিষ্ঠানকেই কেন টার্গেট করা হলো, সে চিন্তাতেই অস্থির স্থানীয়রা।

কলসিন্দুর উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের কলেজ শাখার সহকারী অধ্যাপক ও কলসিন্দুর নারী ফুটবল টিমের ম্যানেজার মালা রাণী সরকার বলেন, অবহেলিত একটি জনপদকে আলোকিত করেছে কলসিন্দুরের অদম্য ফুটবলাররা। তাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে শত্রুতা করে সুস্থ মস্তিষ্কের কেউ এমন করতে পারে, তা ভাবনাতেই আসেনি।

একই ধরনের কথা বলেন গামারিতলা ইউনিয়নের ব্যবসায়ী আজিজুল ইসলাম (৩৫)।

স্থানীয় এ বাসিন্দা বলেন, দেশ ও এলাকার জন্য কলসিন্দুরের মেয়েরা একের পর এক বিজয় ছিনিয়ে এনেছে। তাদের শিক্ষাঙ্গনে আগুনের সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতারের জোর দাবি জানাচ্ছি।

এদিকে, বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে পুলিশ সাধারণ ডায়েরির (জিডি) পরিবর্তে মামলা করার পরামর্শ দেওয়ায় সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছেন শিক্ষকরা।

কলসিন্দুর উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের কলেজ শাখার সহকারী অধ্যাপক মালা রাণী সরকার বলেন, ম্যানেজিং কমিটি ও স্টাফদের সিদ্ধান্ত মোতাবেক আমরা সাধারণ ডায়েরি করতে চেয়েছিলাম। এখন মামলা করতে হলে আবার ম্যানেজিং কমিটির সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এজন্য শেষ মুহুর্তে জিডি না করে আমরা ফিরে এসেছি।

ধোবাউড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলী আহাম্মদ বলেন, শিক্ষকরা ম্যানেজিং কমিটির সঙ্গে আলোচনা করে অভিযোগ দাখিল করবেন বলে জানিয়ে গেছেন। তবে প্রাথমিকভাবে আগুনের ঘটনাটি আমাদের কাছে রহস্যজনকই মনে হয়েছে। নিচতলার কলাপসিবল গেইটে তালা থাকলেও দ্বিতীয়তলার অফিস কক্ষের তালা ভেঙে দুর্বৃত্তরা কীভাবে ভেতরে প্রবেশ করলো- এসব খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

কালের আলো/এএ