‘মব’ একটি আওয়ামী ন্যারেটিভ: ফয়েজ আহম্মদ

প্রকাশিতঃ 5:32 pm | July 05, 2025

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক, কালের আলো:

প্রতিবাদ, ছোট খাটো ঘটনা সবকিছুকে ‘মব’ বলা ব্যক্তিদের অধিকাংশই সফট আওয়ামী লীগার বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টার সিনিয়র সহকারী প্রেস সচিব ফয়েজ আহম্মদ।

শনিবার (৫ জুলাই) ফয়েজ আহম্মদ তার ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে এ মন্তব্য করেন।

‘মব’ একটি আওয়ামী ন্যারেটিভ- শিরোনামে দেওয়া তার ফেসবুক পোস্টটি হুবহু তুলে ধরা হলো।

‘মব’ একটি আওয়ামী ন্যারেটিভ। কখনো কখনো প্রতিবাদকে ‘মব’ বলা হচ্ছে, আবার কখনো কখনো ছোট খাটো সংঘাতকেও ‘মব’ বলা হচ্ছে। সবকিছুকে এভাবে ‘মব’ বলা ব্যক্তিদের অধিকাংশই সফট আওয়ামী লীগার।

মাথায় রাখবেন আওয়ামী লীগ তার শাসনামলে বিপুল সংখ্যক মানুষকে বিনা বিচারে হত্যা করেছে। তারা যে বিচারহীনতা এবং জনমানুষের হৃদয়ে ক্ষতের সৃষ্টি করেছে তা প্রায়শই প্রকাশ পায়। আবার কখনো কখনো সুযোগ সন্ধানী কিছু মহল পরিবর্তিত পরিস্থিতির সুযোগ নেয়। সবাই বেমালুম ভুলে যায় আওয়ামী লীগের ছাত্র ও যুব সংগঠন নিরস্ত্র মানুষের ওপর ব্যাপক হামলা চালিয়েছে। বুয়েটের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যা করেছে, দর্জি বিশ্বজিৎকে কুপিয়ে হত্যা করেছে। জুলাই অভ্যুত্থানের সময় নারী শিক্ষার্থীদের ওপর কতটা সহিংস হয়েছ এই তাণ্ডববাজরা তা আমাদের স্মৃতিপটে এখনো তাজা।

‘মব’ শব্দটি যখন ব্যবহার করা হয়, তখন তা কেবল সহিংস জনতার এক অনিয়ন্ত্রিত আচরণকেই বোঝায় না, বরং রাজনৈতিকভাবে তার একটি মূল্যায়নও তৈরি করে। কোনো সংগঠিত বা রাজনৈতিক প্রতিবাদকে ‘মব’ বললে সেটি অব্যবস্থাপনা, হঠকারী উচ্ছৃঙ্খলতা এবং আইনের প্রতি অবজ্ঞা হিসেবে পরিগণিত হয়। এ শব্দচয়ন কৌশলটি ব্যবহার করে আওয়ামী ঘরানার বিশ্লেষকেরা প্রতিপক্ষের প্রতিরোধকে ‘অন্যায়’ হিসেবে দেখাতে চান।

যারা নিজেদের নিরপেক্ষ বলে দাবি করেন, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে আওয়ামী বয়ানকেই নানাভাবে সমর্থন করেন, তাদের বলা যায় ‘সফট আওয়ামী লীগার’। এরাই বেশিরভাগ সময় ‘মব’ শব্দের অপব্যবহারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। তারা হয়তো সরাসরি আওয়ামী লীগের পক্ষে স্লোগান দেন না, কিন্তু রাজনৈতিক প্রতিবাদ দেখলেই আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েন এবং সেটিকে “জনগণের ক্ষোভ নয়, বরং অশিক্ষিত জনতার সহিংসতা” বলে চিত্রিত করেন। এমনকি কখনো কখনো ছোটখাটো সংঘর্ষ, ট্রাফিক জ্যামে চিৎকার বা কোনো মিছিলের উল্লাসকেও “মব বিহেভিয়ার” বলে উল্লেখ করেন।

রাজপথে সাধারণ আন্দোলনকারীদের ওপর ছাত্রলীগ-যুবলীগের হামলা, পিটুনি, এমনকি গুলি—এগুলোকে ‘প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা’ বলে চালানো হয়, অথচ বিরোধীদের কোনো প্রতিক্রিয়া হলেই ‘মব’ তকমা লেগে যায়।

আইন ও সালিশ কেন্দ্রের দেওয়া তথ্যমতে ২০২৩ সালে দেশে মবের হাতে খুন হন ৫১ জন মানুষ, ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত আরও ৩২ জন মানুষ। এখন যারা ‘মব’ বলে ফেনা তুলে ফেলছেন তারা সে সময় টু শব্দও করেননি।

কোনো অবস্থাতেই কোনো বেআইনি কর্মকাণ্ড গ্রহণযোগ্য নয়। তবে এটাও পরিষ্কার ‘মব’ এর কথা বলে একটি চক্র জুলাইয়ের রক্তক্ষয়ী অভ্যুত্থানকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করছে।

কালের আলো/এএএন