সাবেক এমপি বেনজীর আহমেদের ৫ ফ্ল্যাট-প্লট ও জমি জব্দ
প্রকাশিতঃ 5:25 pm | June 25, 2025

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য বেনজীর আহমেদের পাঁচটি ফ্ল্যাট, প্লট ও ১৯৩ শতাংশ জমি জব্দ এবং তিনটি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার, একটি মোটরযান ও নয়টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধের আদেশ দিয়েছে আদালত।
এছাড়া তার স্ত্রী সাহিনা বেগমের একটি কোম্পানির শেয়ার, একটি আমানত ও দুইটি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধের আদেশ দেওয়া হয়েছে।
দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদকের আলাদা দুটি আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বুধবার ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মো. জাকির হোসেন গালিব এ আদেশ দেন।
সংস্থার সহকারী পরিচালক (জনসংযোগ) মো. তানজির আহমেদ এ তথ্য দিয়ে বলেছেন, সংস্থার তরফে উপ সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ জুলফিকার আবেদন দুটি করেছেন।
দুদকের আবেদনে আদালত ঢাকা-২০ (ধামরাই) আসনের সাবেক এই এমপির রাজধানীর ইস্কাটন, ধানমন্ডি ও ঢাকার ধামরাইয়ের ৪টি ফ্ল্যাট ও পূর্বাঞ্চলের ১০ কাঠার একটি প্লটসহ মোট ১৯৩ শতাংশ জমি জব্দের আদেশ দিয়েছে।
বেনজীরের জব্দ সম্পদের আনুমানিক মূল্য ১৪ কোটি ৮০ লাখ ৪৫ হাজার ২৮০ টাকা।
এছাড়া তার শেয়ার, মোটরযান ও ৯ ব্যাংক হিসাবে থাকা অর্থ মিলিয়ে এক কোটি ৫৮ লাখ ৪৯ হাজার ২৮৬ টাকার সম্পদ অবরুদ্ধের তালিকায় রয়েছে।
অন্যদিকে, তার স্ত্রী সাহিনার আমানত ও ব্যাংক হিসাবে এক কোটি ২০ লাখ ৮৬ হাজার ৫৯৩ টাকা থাকার কথা বলা হয়েছে আবেদনে।
দুদকের আবেদনে বলা হয়েছে, সাবেক এমপি বেনজীর ‘অসৎ উদ্দেশ্যে অপরাধমূলক অসদাচরণ ও ক্ষমতার অপব্যবহারের’ মাধ্যমে ‘জ্ঞাত আয়ের উৎসের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ’ ১৭ কোটি ৯৯ লাখ ৫২ হাজার ৯৬১ টাকা মূল্যর স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ অর্জন করেছেন।
তার স্বার্থ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নামে থাকা ১১টি ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে ৪২ কোটি ৪৬ লাখ ৯৭ হাজার ৯৮৯ টাকা জমা এবং ৪১ কোটি ৯৫ লাখ ১০ হাজার ২৬৬ টাকা উত্তোলনসহ মোট ৮৪ কোটি ৪২ লাখ ৮ হাজার ২৫৫ টাকার ‘সন্দেহজনক’ লেনদেন করেছেন।
‘দুর্নীতি ও ঘুষ’ গ্রহণের মাধ্যমে এসব অর্থ বা সম্পত্তি স্থানান্তর, রূপান্তর ও হস্তান্তর করেছেন। এ কারণে তার বিরুদ্ধে দুদক আইনে মামলা দায়ের করা হয়।
মামলার তদন্তকালে জানা যায়, বেনজীর তার ‘অবৈধ সম্পদ অন্যত্র বিক্রয় বা হস্তান্তর, স্থানান্তর বা বেহাত’ করার চেষ্টা করছেন। এ কারণে তার স্থাবর সম্পদ জব্দ এবং অস্থাবর সম্পদ অবরুদ্ধ করা প্রয়োজন বলে দুদক মনে করছে।
সাহিনা বেগমের সম্পদ জব্দের আবেদনে বলা হয়, জ্ঞাত আয়ের উৎসের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ’ ৯৭ কোটি ৪৭ লাখ ৩৮৫ টাকার সম্পদের মালিকানা অর্জন করেছেন তিনি। এতে সহযোগিতা করেছেন তার স্বামী বেনজীর। এ অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।
মামলা তদন্তকালে জানা যায়, এসব সম্পদ তারা ‘অন্যত্র বিক্রয় বা হস্তান্তর, স্থানান্তর বা বেহাত’ করার চেষ্টা করছেন। এ কারণে আসামির ব্যাংক হিসাবসহ অস্থাবর সম্পদ অবরুদ্ধ করা প্রয়োজন বলে দুদক মনে করছে। তা নাহলে বিচারকালে তা রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করা সম্ভব হবে না এবং রাষ্ট্রের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
১৭ এপ্রিল ‘অবৈধ সম্পদ’ অর্জনের অভিযোগে বেনজীর ও তার স্ত্রী সাহিনার দুটি মামলা করেছে দুদক।
সাবেক এই এমপিকে দুটি মামলাতেই আসামি করা হয়েছে। একটিতে আসামি করা হয়েছে তার স্ত্রীকে।
ক্ষমতার পালাবদলের পর থেকে বেনজীর আত্মগোপনে রয়েছেন। এর আগে ২০২৩ সালের অগাস্টে মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর নামে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে বেনজীর আহমেদসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করে দুদক।
এছাড়া গত ১১ মার্চ মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর ঘটনায় এক হাজার ১২৮ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ৩২ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। সেই মামলাতেও আসামির তালিকায় নাম রয়েছে বেনজীরের।
কালের আলো/এমডিএইচ