পরীক্ষা দিচ্ছে সহপাঠিরা, শুধু নুসরাতের আসনটি ফাঁকা

প্রকাশিতঃ 1:39 pm | April 11, 2019

কালের আলো প্রতিবেদক:

ফেনীর সোনাগাজী ইসলামীয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসা কেন্দ্রের ৮ নম্বর কক্ষে আজ বৃহস্পতিবার(১১ এপ্রিল) ফিকহ্ ২য় পত্রের পরীক্ষা চলছে।

সবাই পরীক্ষা দিচ্ছেন, শুধু নেই নুসরাত জাহান রাফি। খালি পড়ে রয়েছে তার সিটটি। নুসরাতের রোল নম্বর ১৪৯৬১৪। এই আসনে বসে আর পরীক্ষা দেওয়া হবে না তার।

এর আগে বুধবার (১০ এপ্রিল) রাত সাড়ে ৯টায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সবাইকে কাঁদিয়ে চলে গেছেন নুসরাত।

সোনাগাজী ইসলামীয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসা কেন্দ্রের সচিব নুরুল আফছার ফারুক জানান, আজ সকালে পরীক্ষা দিয়ে এসে কান্নায় ভেঙে পড়েন রাফির সহপাঠীরা। কোনোভাবেই তারা রাফির এই মৃত্যুকে মেনে নিতে পারছেন না। পরীক্ষার্থীদের মতো আমরাও তার প্রয়াণ মেনে নিতে পারছি না।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নূর আমিন বলেন, আমরা খোঁজ নিয়ে জেনেছি রাফি অন্যায়ের প্রতিবাদী ও মেধাবী একজন ছাত্রী তার এই মৃত্যুতে আমরা প্রচন্ড শোকাহত।

উল্লেখ্য, গত শনিবার সকালে আলিম পরীক্ষা দিতে সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসায় যান নুসরাত জাহান রাফি নামের ওই ছাত্রী। মাদরাসার এক ছাত্রী তার বান্ধবী নিশাতকে ছাদের উপর কেউ মারধর করছে- এমন সংবাদ দিলে রাফি ওই বিল্ডিংয়ের চার তলায় যান।

সেখানে মুখোশ পরা চার-পাঁচ ছাত্রী তাকে অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলার বিরুদ্ধে মামলা ও অভিযোগ তুলে নিতে চাপ দেয়। রাফি অস্বীকৃতি জানালে তারা তার গায়ে আগুন দিয়ে পালিয়ে যায়। এতে নুসরাতের শরীরের ৭৫ শতাংশ পুড়ে যায়। বর্তমানে ওই মাদ্রাসাছাত্রীকে ঢামেকের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন। তাকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছে।

এর আগে গত ২৭ এপ্রিল ওই ছাত্রীকে নিজ কক্ষে নিয়ে শ্লীলতাহানির অভিযোগে মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাকে আটক করে পুলিশ। ওই ঘটনার পর থেকে তিনি কারাগারে। এ ঘটনায় ওই ছাত্রীর মা শিরিন আক্তার বাদী হয়ে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা করেন।

এ ঘটনায় রোববার থেকে আগামী ১৭ এপ্রিল পর্যন্ত মাদরাসার স্বাভাবিক কার্যক্রম ও অনির্দিষ্টকালের জন্য হোস্টেল বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয় কর্তৃপক্ষ।

এদিকে মাদ্রাসাছাত্রীকে পুড়িয়ে হত্যাচেষ্টার ঘটনার তিনদিন পর থানায় মামলা হয়। সোমবার (৮ এপ্রিল) বিকালে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলাটি করেন ভিকটিমের বড় ভাই মাহমুদুল হাসান। মামলার সংশোধিত এজাহারে অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলাকে প্রধান আসামি করা হয়। এছাড়া মুখোশধারী চারজন এবং তাদের সহযোগীদের আসামি করা হয়। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে এ পর্যন্ত মোট নয়জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

কালের আলো/এমএইচএ