মসিকে ‘নৌকার মাঝি’ টিটু, ব্রহ্মপুত্র পাড়ে উচ্ছ্বাস
প্রকাশিতঃ 1:44 am | April 06, 2019

বিশেষ প্রতিবেদক, কালের আলো:
তিনি ময়মনসিংহ পৌরসভার শেষ মেয়র। ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনেরও (মসিক) প্রথম প্রশাসক। এবার তিনিই আগামী ৫ মে ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের (মসিক) প্রথম ভোটে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের ‘নৌকার মাঝি’ হয়েছেন।
বিতর্কমুক্ত, জনপ্রিয়, গ্রহণযোগ্য এবং অভিজ্ঞ প্রার্থী হিসেবেই তাকে বেছে নিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিএনপি ভোটে না থাকলেও নৌকা প্রতীক নিয়ে ‘গণজোয়ার’ তৈরি করতে সক্ষম এই প্রার্থীর নাম মো. ইকরামুল হক টিটু।
শুক্রবার (০৫ এপ্রিল) সন্ধ্যায় গণভবনে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় ইকরামুল হক টিটুকেই আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেছেন দলটির সভানেত্রী শেখ হাসিনা। ফলে নৌকা প্রতীক নিয়ে এখন ভোটের লড়াইয়ে নামবেন ময়মনসিংহ মহানগর আওয়ামী লীগের এই সহ-সভাপতি।
এদিকে, ইকরামুল হক টিটু’র মনোনয়ন প্রাপ্তির খবর নগরীতে ছড়িয়ে পড়তেই বাঁধভাঙা আনন্দের জোয়ার তৈরি হয়েছে ব্রহ্মপুত্র পাড়ে। আনন্দে উদ্বেল ইকরামুল হক টিটু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর দল আওয়ামী লীগের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
কালের আলোকে তিনি বলেন, ‘আমি নেত্রীর প্রতি প্রতি চির কৃতজ্ঞ। তিনি আমাকে দলীয় প্রার্থী করেছেন। আমি যদি নির্বাচিত হই অবশ্যই প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্ন এবং ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নে সবাইকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবো। আমি ময়মনসিংহবাসীর সার্বিক সহযোগিতা কামনা করছি। আশা করি অতীতের মতোই তাঁরা ভবিষ্যতেও আমার পাশে থাকবেন।’
এর আগে গত বছরের পহেলা এপ্রিল দেশের দ্বাদশ সিটি করপোরেশন হিসেবে ঘোষণা করা হয় ময়মনসিংহকে। ওইদিনই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাস-সংক্রান্ত জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির (নিকার) বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয়।
এরপর ওই বছরের ১৪ অক্টোবর ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের গেজেট প্রকাশিত হয়। ১৬ অক্টোবর প্রথম প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ পান ময়মনসিংহ পৌরসভার শেষ মেয়র মো. ইকরামুল হক টিটু।
গত ২৫ মার্চ সিটি নির্বাচনের ঘোষিত তফসিল মোতাবেক, ভোটগ্রহণের তারিখ ৫ মে। মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ তারিখ ৮ এপ্রিল, বাছাই ১০ এপ্রিল এবং প্রত্যাহারের শেষ দিন ১৭ এপ্রিল। মোট ১৩০ টি কেন্দ্রেই ভোট হবে ইভিএমে।
নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর পরই মনোনয়ন প্রত্যাশায় দৌড়ঝাঁপ শুরু করেন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। মহানগর আওয়ামী লীগ কেন্দ্রের নির্দেশ মোতাবেক বর্ধিত সভা করে একক প্রার্থী বাছাইয়ে ব্যর্থ হয়। পরে তাঁরা সাবেক মেয়র ইকরামুল হক টিটুসহ ৬ প্রার্থীর নাম পাঠায়।
এদিকে, মনোনয়নের খবর নগরীতে ছড়িয়ে পড়লে আওয়ামী লীগসহ অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা আনন্দ মিছিল করেন। একই সঙ্গে মডেল ময়মনসিংহ গড়তে আওয়ামী লীগ প্রার্থীকে ভোটে জয়ী করতে নগরবাসীর প্রতি আহবান জানান।
এই বিষয়ে ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট জহিরুল হক খোকা বলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্তই নেন। আবারো তিনি এটা প্রমাণ করেছেন। আমরা তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞ। ময়মনসিংহবাসী তাঁর এই সিদ্ধান্তের মূল্যায়ন করবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত সাড়ে ৯ বছরে ময়মনসিংহ পৌরসভার মেয়র হিসেবে ইকরামুল হক টিটু কাঙ্খিত নাগরিক সেবা নিশ্চিতের পাশাপাশি ‘সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন ময়মনসিংহ’ ভিশন নিয়ে উন্নয়ন ও অগ্রগতির সোপানে নিয়ে যান নগরীকে। পৌরসভার নাগরিকদের সঙ্গে স্থাপন করেন ‘ওয়ান টু ওয়ান’ রিলেশন’।
দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে নিরবিচ্ছিন্ন যোগাযোগের পাশাপাশি সাংগঠনিক ভিত্তিকেও মজবুত করতে নিরলস পরিশ্রম করেন। সৎ, যোগ্য ও পরিচ্ছন্ন ইমেজের কারণে স্থানীয় ভোটারদেরও প্রকাশ্য সমর্থন রয়েছে তাঁর প্রতি।
এখানকার বাসিন্দাদের ২৪ ঘণ্টা সেবা দেওয়ার মতো মানসিকতারও প্রমাণ দিয়েছেন বারবার। এসব দিক বিবেচনায় ইকরামুল হক টিটুকে মসিক নির্বাচনে নৌকার মাঝি করা হয়েছে।
এছাড়া মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই প্রতিটি ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে তাঁর ব্যাপক জনসংযোগ, প্রতি বছর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের জমকালো আয়োজনের মাধ্যমে সংবর্ধনা, কনসার্ট এবং অমায়িক আচরণের মাধ্যমে সব শ্রেণি-পেশার মানুষের মাঝে একটি চমৎকার ইমেজ তৈরি করতে পেরেছেন।
দলীয় সূত্র মতে, আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর নির্দেশে দলীয় জরিপ ও বিভিন্ন সংস্থার জরিপসহ সব দিক থেকেই অন্য প্রার্থীদের চেয়ে অনেক এগিয়ে ছিলেন ইকরামুল হক টিটু। মেয়র হিসেবে সফলতার সঙ্গে রেকর্ড সাড়ে ৯ বছরের ল্যান্ডমার্ক স্পর্শ করার পর তাঁর কাজে মুগ্ধ হয়ে এবং পূর্ণ আস্থা রেখেই তাঁর হাতেই প্রথম সিটি করপোরেশনের প্রশাসকের চাবি তুলে দেওয়া হয়।
মূলত এটি ছিলো দলীয় মনোনয়নের প্রথম ইঙ্গিত। তবে নির্বাচনকে ঘিরে নতুন করে একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশী মাঠে আওয়াজ তুললেও প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় সভানেত্রীর পছন্দের তালিকায় অগ্রভাগেই ছিলেন মেয়র টিটু, এমন অভিমত দলীয় গুরুত্বপূর্ণ সূত্রের।
দলটির কেন্দ্রীয় একাধিক নেতা জানান, ক’দিন আগে গণভবনে মেয়র পদে দলীয় মনোনয়ন নিয়ে কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। সেখানেও টিটু’র জনপ্রিয়তার বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী নিজেই উচ্চারণ করেন। ফলে সামগ্রিকভাবে টিটুর মনোনয়ন পাওয়া ছিলো শুধুই সময়ের অপেক্ষা।
ময়মনসিংহ মহানগর যুবলীগের আহবায়ক মোহাম্মদ শাহীনুর রহমান বলেন, ভবিষ্যতে ময়মনসিংহকে মডেল সিটি করপোরেশন হিসেবে রূপান্তর করতে আওয়ামী লীগ প্রার্থী ইকরামুল হক টিটুর বিকল্প নেই। আমরা দলীয় সিদ্ধান্তের ফসল ঘরে তুলতে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবো।
কালের আলো/ওএইচ