জাফর ইকবালের সেলফি জটলায় আক্ষেপ-গর্ব প্রতিমন্ত্রী খালিদ বাবু’র

প্রকাশিতঃ 8:27 am | March 26, 2019

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো :

সেই শৈশব থেকেই সাংস্কৃতিক পরিমন্ডলেই তাঁর বসবাস। তবুও আক্ষেপ করলেন সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ বাবু এমপি।

আর এই আক্ষেপ বিশিষ্ট লেখক ও শিক্ষাবীদ জাফর ইকবালকে ঘিরে। প্রতিমন্ত্রী গাড়ি থেকে নেমে মঞ্চ অবধি হেঁটে এলেও পেছন পেছন ভিড় নেই। সবার আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু বরেণ্য শিক্ষাবীদকে ঘিরে।

আরো পড়ুন:
৪৯৩ উপজেলায় বইমেলা ও রোডমার্চ করবে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়

ফলে রাখঢাক না করেই সেই আক্ষেপের কথা শুনিয়ে দিলেন প্রতিমন্ত্রী খালিদ। বললেন, ‘অনুষ্ঠানে এসেই দেখলাম একটি জায়গায় বিশাল জটলা। আমি মন্ত্রী হেঁটে আসলাম, কারো কোন ভ্রুক্ষেপ নেই। সবার আকর্ষণ জাফর ইকবালের দিকে।’

প্রতিমন্ত্রীর এই আক্ষেপ অবশ্য হতাশার নয়। গর্বভরা কন্ঠে উচ্চারণ করলেন- ‘আমার খুব ভালো লেগেছে। জাফর ইকবালের বক্তব্য দেশ ও রাষ্ট্রের প্রতি তাঁর দায়বদ্ধতা, স্বাধীনতার প্রতি তাঁর দায়বদ্ধতা, রাষ্ট্র এবং পতাকার প্রতি তাঁর আনুগত্য।

দেশ থেকে জঙ্গিবাদ উৎখাতে তাঁর যে সাহসী ভূমিকা, সবকিছু মিলিয়ে তাকে আমরা সব সময় পছন্দ করি। শিশু-কিশোরদের জন্য তিনি একটি বাড়তি আকর্ষণ। সারা বাংলাদেশে একজন ড.জাফর ইকবাল আছেন।’

সোমবার (২৫ মার্চ) রাতে ময়মনসিংহ শহরের টাউন হল মাঠে ৬ দিনব্যাপী বিভাগীয় বইমেলার উদ্বোধন করতে গিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলছিলেন এসব কথা।

প্রতিমন্ত্রীর কথার আগে পশ্চিম আকাশে হেলে পড়ার আগে জাফর ইকবাল যখন মঞ্চের কাছাকাছি এলেন তখন তরুণ-তরুণীরা তাকে ঘিরে ধরলেন। বিরামহীন সেলফি তোলায় মেতে উঠলেন। কাউকে নিরাশ করলেন না। অনবরত সেলফি তোলতে তোলতে অবশেষে মঞ্চে পা রাখলেন ড.জাফর ইকবাল।

সেই দৃশ্যপটের বর্ণনা নিজের মুখেই বললেন তিনি। বলতে থাকলেন- ‘আমি বইমেলায় আগে বসে অটোগ্রাফ দিতাম বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত। এখনো আমি বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত বসে থাকি ঠিকই। তবে অটোগ্রাফ দেওয়ার বদলে সেলফি তুলি।

বিচক্ষণ বইপড়ুয়া এই মানুষটির উক্তি-‘তাকিয়ে দেখি ছেলেটা সেলফি তুলছে হাতে বই আছে কীনা? অনেকের হাতেই দেখি বই নাই। আসছে শুধু ক্যামেরা নিয়ে ছবি তোলার জন্য। সে যে বইমেলায় বই পড়তে, বইকে ভালোবেসে এসেছে এটা আমি শতভাগ নিশ্চিত না’ বলতেই নিজে হেসে উঠলেন। সঙ্গে পুরো অর্ডিয়্যান্সের হাসির রোল পড়লো।

বইপড়–য়ারা বিশ্বকে চালায়, নিয়ন্ত্রণ করে। এই সম্পর্কে বলতে গিয়ে ২০২৯ সালের একটি ডেটলাইনও উপস্থাপন করলেন। ‘আজ ২৫ মার্চ, ২০১৯। তোমরা বাসায় গিয়ে একটা কাগজে লিখো-যারা স্কুল কলেজে আছো।

২০২৯ এর ২৫ মার্চ তোমরা একটি ভয়ঙ্কর জিনিস আবিস্কার করবে। পুরো পৃথিবীটা দখল হয়ে গেছে। যাদের কাছে পৃথিবীর সমস্ত তথ্য জমা হচ্ছে সেই গুগল, ফেসবুক, মাইক্রোসফট, আমাজন সব দখলে নেবে। এই ধরণের বড় বড় প্রতিষ্ঠান আছে যারা আমাদের নানা সেবা দিচ্ছে।

তাঁরা আর্টিফিসিয়াল ইন্টিলিজেন্সের ভেতরে তথ্যগুলো ঢুকিয়ে দিবে, যা আমরা জানি না। ওরা আমাদের নিয়ন্ত্রণ করবে। ওরা যেটা মুখে বলবে না আমরা সেটা করবো। ১০ বছরের ভেতরে পৃথিবী নিয়ন্ত্রণ করবে ওরা।’

কীভাবে এ থেকে পরিত্রাণ সম্ভব সেই পথও বাতলে দিলেন আলোকিত মানুষ গড়ার এই কারিগর। বললেন, ‘এখান থেকে উদ্ধার পেতে হলে আমাদের রিয়েল ইন্টিলিজেন্স হতে হবে। আমি যদি মানুষ থাকি তাহলে কোন মেশিন এসে আমাকে রিপ্লেস করতে পারবে না।

আমি সব জায়গায় ছেলে মেয়েদের বলে বেড়াচ্ছি- প্লিজ তোমরা মানুষ হও। মানুষ একজন আরেকজনের দিকে তাকায়। কিন্তু ফেসবুকে তোমরা পোস্ট দিয়ে অপেক্ষায় থাকো, কত লাইক পড়লো? এটাকে জীবন বলে না। এই জীবন থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। মানুষ হওয়ার সবচেয়ে সহজ নিয়ম বই পড়বে।’

দেশের ৫ কোটি শিক্ষার্থীই বড় শক্তি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমাদের বাংলাদেশে ৫ কোটি ছেলে-মেয়ে স্কুল-কলেজে লেখাপড়া করে। আর অষ্ট্রেলিয়ার জনসংখ্যা আড়াই কোটি। অষ্ট্রেলিয়ায় যতো মানুষ আছে তাদের ডাবল সংখ্যক মানুষ আমাদের স্কুল-কলেজে লেখাপড়া করে।

২০০০ সালে পৃথিবীর জ্ঞানীগুণী মানুষ বলেছে, এই নতুন পৃথিবীর সম্পদ হচ্ছে জ্ঞান। আমাদের ৫ কোটি ছেলে-মেয়ে জ্ঞান অনুসন্ধান করছে। তারা লেখাপড়া করলে বাংলাদেশ এমন জায়গায় পৌছবে তাকে ধরার মতো দেশ পৃথিবীতে থাকবে না। আমি সব সময় বলি বাংলাদেশের সব থেকে বড় সম্পদ আমাদের দেশে ছেলে-মেয়েরা সমানভাবে লেখাপড়া করছে।’

তোমাদের কাছে অনুরোধ তোমরা কম্পিউটার হয়ে যেও না, তোমরা মানুষ হও। আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্স যেন তোমাদের হারাতে না পারে।’

৬ দিনব্যাপী এই বিভাগীয় বইমেলায় মোট ৭৬ টি স্টল স্থান পেয়েছে। প্রতিদিন বিকেল ৩ টা থেকে রাত ৯ টা পর্যন্ত এবং ছুটির দিন সকাল ১১ টা থেকে রাত ৯ টা পর্যন্ত বইমেলা চলবে।

কালের আলো/এএম/এমএইচএ