সীমান্ত উত্তেজনা পরিস্থিতি নিরসনেই মূল ফোকাস বিজিবি-বিজিপি সম্মেলনে (ভিডিও)

প্রকাশিতঃ 5:36 pm | November 24, 2022

বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো:

প্রায় দু’বছর পর এবার মিয়ানমারের রাজধানী ‘নেপিতো’ শুরু হয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও মিয়ানমারের বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) ৮ম সীমান্ত সম্মেলন। এর আগে ২০২০ সালের ৫ জানুয়ারি রাজধানী পিলখানা বিজিবি সদর দপ্তরের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত হয়েছিল সপ্তম সীমান্ত সম্মেলন।

চলতি বছরে এমন সময়ে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে যখন প্রায় সময়েই বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে উদ্ভূত পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে। বাংলাদেশের অভ্যন্তরে গোলা পড়া ও মিয়ানমারের হেলিকপ্টারের আকাশসীমা লঙ্ঘনে বিভিন্ন সময় তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে বিজিবি, দু:খ প্রকাশ করেছে মিয়ানমারও। দ্বিপক্ষীয় আলোচনার মাধ্যমেই বরাবরই সমস্যা সমাধান করতে চেয়েছে বাংলাদেশ।

বৃহস্পতিবার (২৪ নভেম্বর) থেকে শুরু হওয়া ৫ দিনব্যাপী অষ্টম সীমান্ত সম্মেলনেও সীমান্ত উত্তেজনা পরিস্থিতি নিরসন ও আকাশসীমা লঙ্ঘনের বিষয়টি থাকবে মূল ফোকাস। এদিন মিয়ানমারের স্থানীয় সময় সকাল ৯ টায় শুরু হওয়া সীমান্ত সম্মেলনে ১০ সদস্যের বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল সাকিল আহমেদ।

বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলে বিজিবি’র উর্ধ্বতন কর্মকর্তা, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরাও রয়েছেন। অন্যদিকে, ডেপুটি চীফ অব মিয়ানমার পুলিশ ফোর্স-এর পুলিশ মেজর জেনারেল অং নেইং থু’র নেতৃত্বে ১৫ সদস্যের মিয়ানমার প্রতিনিধিদল সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেছে।

মায়ানমার প্রতিনিধিদলেও মায়ানমারের বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি)-এর উর্ধ্বতন কর্মকর্তা ছাড়াও দেশটির প্রতিরক্ষা, স্বরাষ্ট্র, পররাষ্ট্র এবং অভিবাসন ও জনসংখ্যা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরাও রয়েছেন।

জানা যায়, নাফ নদী সংলগ্ন টেকনাফ থেকে ভারতের মিজোরাম পর্যন্ত ২৮০ কিলোমিটার বিস্তৃত বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের সীমান্ত। সীমান্তের বাংলাদেশ প্রান্তে রয়েছে কক্সবাজার, বান্দরবান ও রাঙামাটি জেলা। আর মিয়ানমার প্রান্তে রয়েছে রাখাইন ও চিন রাজ্য।

সাম্প্রতিক সময়ে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের তুমব্রু, কোনারপাড়া, উত্তরপাড়া, বাইশফাঁড়ি ও চাকমা পাড়াসহ উখিয়া এবং টেকনাফের বিভিন্ন সীমান্তে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে দেশটির সেনাবাহিনীর সঙ্গে বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

এমন পরিস্থিতিতে মিয়ানমারে ছোড়া মর্টার শেলসহ বিভিন্ন গোলাবারুদ বাংলাদেশে এসে পড়ে। মিয়ানমারের জেট ফাইটার হেলিকপ্টারও কয়েকবার আকাশসীমা লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটায়। বাংলাদেশ কোন ফাঁদে না পা দিয়ে সর্বোচ্চ সতর্কতার সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবেলা করে। শুরু হয় কূটনৈতিক পর্যায়ে আলোচনা। শান্তিতে বিশ্বাসী বাংলাদেশ কখনও গায়ে পড়ে যুদ্ধ করতে চায় না বরং শান্তির পথেই হেঁটেছে।

বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সূত্র জানায়, এই বছরের বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও মিয়ানমারের বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) ৮ম সীমান্ত সম্মেলনে আন্ত:রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলা, আন্ত:সীমান্ত অপরাধী চক্রের কর্মকান্ড প্রতিরোধ, অবৈধ অনুপ্রবেশ রোধ, ইয়াবা ও ক্রিস্টাল মেথ আইসসহ অন্যান্য মাদক ও মানব পাচার রোধ, সীমান্তের সার্বিক নিরাপত্তা বিধানে পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি, সীমান্ত সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য আদান-প্রদান, যৌথ টহল পরিচালনা, রিজিয়ন ও ব্যাটালিয়ন পর্যায়ে নিয়মিত সমন্বয় সভা বা পতাকা বৈঠক আয়োজন, আটককৃত বা সাজাভোগকৃত উভয় দেশের নাগরিকদের স্বদেশে প্রত্যাবর্তন, বলপূর্বক বাস্তুচ্যূত মায়ানমার নাগরিকদের তাদের মূল আবাসভূমিতে প্রত্যাবর্তন এবং বিজিবি ও বিজিপির মধ্যে পারস্পরিক আস্থা বৃদ্ধির বিভিন্ন উপায় নিয়ে অত্যন্ত কার্যকর ও ফলপ্রসূ আলোচনা হবে। সম্মেলন শেষে আগামী সোমবার (২৮ নভেম্বর) বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের ঢাকা ফিরবে।

কালের আলো/এএএমকেএ