ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের আঘাতে চট্টগ্রামের পরেই সবচেয়ে বেশি ক্ষতি ঢাকায় 

প্রকাশিতঃ 9:45 pm | October 25, 2022

কালের আলো প্রতিবেদক:

প্রচণ্ড গতি নিয়েই বাংলাদেশ উপকূলে আঘাত হেনেছিল ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং। ঝড়ের তোড়ে উপড়ে যায় গাছপালা, পড়ে যায় ঘরবাড়ি। ভারি বৃষ্টিতে নিমজ্জিত হয় অনেক অঞ্চল। গাছ পড়ে বিভিন্ন এলাকায় বন্ধ হয়ে যায় যোগাযোগ ব্যবস্থা। ঝড়ের ধাক্কা এসে লাগে রাজধানীতেও। বৃষ্টির সঙ্গে ঝোড়ো হাওয়া। সিত্রাং পরবর্তী এখন চলছে ক্ষয়ক্ষতির হিসাব নিকাশ। 

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ঘূর্ণিঝড়ে সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়ে উপকূলীয় চট্টগ্রাম ও বরিশাল বিভাগে। এর ঠিক পরেই রয়েছে ঢাকা বিভাগ। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকাতেই বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। 

দেখা গেছে, সিত্রাং’র ভয়াল থাবায় রাজধানীর মিরপুর ইসিবি চত্বর, কাওরানবাজার, শাহবাগ, ঢাবি ক্যাম্পাস, আগারগাঁও, ধানমন্ডি লেকসহ বিভিন্ন এলাকার সড়কের ভেঙে পড়ে ছোট-বড় গাছ। এসব গাছ সরিয়ে যানচলাচল নির্বিঘ্ন করতে রাতভর কাজ করে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। এ সময় ঘন্টার পর ঘন্টা দু:সহ যানজট সৃষ্টি হয়। ফায়ার কর্মীদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় রাতেই সড়কগুলোতে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। 

ফায়ার সার্ভিসের তথ্য বলছে, একদিনে সারা দেশে ঝড় ও বৃষ্টিতে ৩৬২টি স্থানে গাছ ভেঙে পড়েছে। এরমধ্যে ঘরের ওপর পড়েছে ১৮টি গাছ। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে ৩৮টি। এরমধ্যে ১৭টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঢাকায়। সড়ক দুর্ঘটনা চারটি, নৌ-দুর্ঘটনা একটি, অন্যান্য দুর্ঘটনা একটি। এছাড়া সারা দেশের ১৫টি স্থানে মাইকিং করে সচেতনতা কার্যক্রমে অংশ নেয় ফায়ার সার্ভিস।

ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের তথ্য বলছে, দুই সিটিতেই তিন থেকে চারশ’ ছোট-বড় গাছ ভেঙে পড়েছে। এরমধ্যে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের কুইক রেসপন্স টিম ঝড়ে উপচে পড়া প্রায় দুই শতাধিক গাছপালা অপসারণ করেছে বলে জানান। আর দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এখনও নির্দিষ্ট করে বলতে না পারলেও আনুমানিক দেড়-দুইশ’ গাছ ভেঙে পড়েছে বলে জানান।

ফায়ার সার্ভিসের একটি প্রতিবেদনে দেখা যায়, চট্টগ্রাম বিভাগে ১১৬টি, বরিশালে ৬৪টি, ঢাকায় ৫৬টি, খুলনায় ২৬টি, রাজশাহীতে ১৭টি, সিলেটে ৪টি, ময়মনসিংহে ৩টি এবং রংপুরে একটি গাছ ভেঙে পড়েছে। আর ঘরের ওপরে খুলনায় ১০টি, বরিশালে ৪টি, ঢাকায় ৩টি এবং চট্টগ্রামে একটি গাছ ভেঙে পড়ার ঘটনা ঘটেছে। 

এছাড়া এই ঝড় ও বৃষ্টির মধ্যে সারা দেশে ৩৫টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে চারটি, নৌ-দুর্ঘটনা একটি এবং ১৩ জনকে আহত উদ্ধার ও তিন জনকে মৃত উদ্ধার করেছে ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা।

সূত্র জানায়, ঘূর্ণিঝড় ‘সিত্রাং’ মোকাবেলায় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিন’র নির্দেশে এদিন সর্বোচ্চ প্রস্তুতি গ্রহণ করে ফায়ার সার্ভিস। ভারী বর্ষণে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় দিনমান ঝড়ের প্রভাবে উপড়ে পড়া গাছ সরিয়ে যান চলাচল স্বাভাবিক রাখার পাশাপাশি নানাভাবেই সাধারণ মানুষকে সহযোগিতায় কোমর বেঁধেই মাঠে কাজ করে করে অধিদপ্তরের সদস্যরা। ফায়ার সার্ভিস  সদর দপ্তরসহ বিভাগভিত্তিক ৯ টি অফিসে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়। 

ঘূর্ণিঝড়ে চট্টগ্রাম সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতির কথা জানায় ফায়ার সার্ভিস। টানা বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে ডুবে গেছে চট্টগ্রাম নগরী ও নিম্নাঞ্চল। নগরীর পতেঙ্গা এলাকায় বেড়িবাঁধ টপকে আশপাশের এলাকায় পানি উঠেছে। নগরীর বাকলিয়া, খাতুনগঞ্জ, চাকতাই, আছাদগঞ্জ, ফিরিঙ্গিবাজার, পাথরঘাটা হাজী নজুমিয়া লেইন, ইপিজেড, খলিফাপট্টি, আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিক এলাকা, কাট্টলী রাসমনিরঘাট, জেলেপাড়াসহ বেশ কিছু স্থানে হাঁটু থেকে কোমরপানি জমেছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন বাসিন্দারা।

সিত্রাংয়ের আঘাতে সারা দেশে বসতঘরের ওপরে গাছ পড়ে সাত জনসহ ২১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এরমধ্যে কুমিল্লায় এক পরিবারের তিন জন, ভোলায় দুই জন, নড়াইলের লোহাগড়ায় মর্জিনা বেগম নামে এক গৃহকর্মী, সদর উপজেলার সোনাখালী এলাকায় আমেনা খাতুন নামে এক নারীর গাছ পড়ে মৃত্যু হয়েছে।

কালের আলো/এসবি/এমএম