আগামীর শিক্ষা ব্যবস্থা হবে সৃজনশীল ও আনন্দময় : শিক্ষামন্ত্রী

প্রকাশিতঃ 8:22 pm | September 14, 2022

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:

বিশ্ব আজ নজিরবিহীন গতিতে পরিবর্তন হচ্ছে। আমাদের এই পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।

তিনি বলেছেন, আগামীর শিক্ষা ব্যবস্থা হবে সৃজনশীল ও আনন্দময়, থাকবে না বইয়ের অতিরিক্ত চাপ। অতিরিক্ত পরীক্ষার চাপ ও সনদ নির্ভরতা থেকে আমরা বেরিয়ে আসতে চাই। নতুন শিক্ষা ব্যবস্থা হবে অভিজ্ঞতানির্ভর। প্র্যাকটিক্যাল শিক্ষাকে প্রাধান্য দেওয়া হবে।

বুধবার (১৪ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় (বিআইসিসি), বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন অ্যান্ড টেকনোলজির (বিইউএফটি) ১ম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আমরা ১৯৭১ সালে স্বাধীন হওয়ার পর যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠন করাই ছিল প্রধান চ্যালেঞ্জ। কৃষি, রেমিট্যান্স, উন্নয়ন সবখাতে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়েছে।

বর্তমানে মোট শতকরা ৮২ শতাংশ বৈদেশিক মুদ্রা আয় হচ্ছে তৈরি পোশাক রফতানি থেকে। ভবিষ্যতে এটি আরও সমৃদ্ধ হবে বলে আমরা বিশ্বাস করি৷ বিজিএমইএ বিশ্ববিদ্যালয় পোশাকশিল্পের জন্য ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব তৈরি করছে।

মন্ত্রী বলেন, জাতির জনকের স্বপ্ন নিয়ে আমরা কারিগরি ও যুগোপযোগী শিক্ষায় গুরুত্ব দিচ্ছি। জাতির জনক বলেছিলেন ঔপনিবেশিক শিক্ষাব্যবস্থায় কেরানি পয়দা হয়। ফলে, আমরা সেই শিক্ষাব্যবস্থার খোল-নলচে পাল্টে আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থার জন্য নিরন্তর চেষ্টা করে যাচ্ছি।

কারিগরি শিক্ষার গুরুত্ব উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, বর্তমানে মাধ্যমিক স্তরে কারিগরি শিক্ষায় এনরোলমেন্ট ১৭ শতাংশের বেশি। ভবিষ্যতে এটি আরও বাড়বে। যে দেশ যত উন্নত, সে দেশে কারিগরি শিক্ষায় এনরোলমেন্ট অনেক বেশী।

দীপু মনি বলেন, মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাব্যবস্থায় একটি ট্রেড শেখা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে৷ প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে একাডেমিক ল্যাব স্থাপন, লাইব্রেরি স্থাপন, ইন্ড্রাস্ট্রি একাডেমিয়ার মাধ্যমে কর্মজগতের চাহিদা অনুযায়ী শিক্ষার্থী তৈরী করার হচ্ছে। উচ্চ শিক্ষার মান উন্নয়নে সরকার নানামুখী উদ্যোগ নিচ্ছে৷

তিনি বলেন, সফটস্কিলের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। বর্তমানে সব ক্ষেত্রে এটি গুরুত্বপূর্ণ। কমিউনিকেশন, লিডারশিপ, প্রযুক্তিগত দক্ষতার সামগ্রিক রূপকেই আমরা সফট স্কিল বলছি।

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আজকে বঙ্গবন্ধু কন্যার দূরদৃষ্টির কারণে অনেকগুলো বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হয়েছে। যেমন বঙ্গবন্ধু মেরিন একাডেমি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এভিয়েশন অ্যান্ড অ্যারোস্পেস বিশ্ববিদ্যালয়, আপনারা এরকম একটি পোশাক শিল্পের ওপর বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, আগামী দিনে আপনারা এই খাতে অবদান রাখবেন। প্রযুক্তির কারণেআপনারা সবচেয়ে ক্ষমতাবান প্রজন্ম। আমি আশা করব, আপনারা নিজেদের যোগ্য করে গড়ে তুলবেন। আপনারা সতর্ক থাকবেন, কোনো অসততা যেন আপনাদের সাফল্যকে কলুষিত না করে।

শিক্ষকদের উদ্দেশ করে তিনি বলেন, আপনাদের হতে হবে সহায়ক ও একই সঙ্গে পথপ্রদর্শক। শিক্ষাক্রম থেকে আনন্দ একেবারেই হারিয়ে যাচ্ছে। আমরা চাই শিক্ষার্থীরা আনন্দে শিখবে। মূল্যবোধ নিয়ে বেড়ে উঠবে।

সমাবর্তনে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাফটের উপাচার্য ড. এম মাহফুজুর রহমান।

বিশেষ অতিথি জার্মান দূতাবাসের প্রতিনিধি ফ্লোরিয়ান হলেন বলেন, তার দেশ বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের অন্যতম বড় ক্রেতা। আমি আশা করি, আজ যারা গ্রাজুয়েট হলেন, ভবিষ্যতে আপনারা এই খাতে অবদান রাখবেন।

বিইউএফটির বোর্ড অব ট্রাস্টির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন এমপি বলেন, আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ, ভবিষ্যতে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান আরও উন্নত করার জন্য।

পোশাক রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, বাংলাদেশের মোট রফতানির ৮৭ শতাংশ এই খাত থেকে আসছে। অদূর ভবিষ্যতে রফতানিতেও আমরা প্রথম হওয়ার ইচ্ছে রাখি। তাই এই যাত্রায় আমাদের আপনাকে দরকার।

সমাবর্তন অনুষ্ঠানে ড. দীপু মনি রাষ্ট্রপতির প্রতিনিধিত্ব করে বিভিন্ন বিভাগের সর্বমোট ৫৬৮১ জন শিক্ষার্থীকে গ্রাজুয়েশন ডিগ্রি প্রদান করেন। তিনি বিভিন্ন বিভাগের ভাল ফলাফল অর্জন করা শিক্ষার্থীদের ৩টি ক্যাটাগরিতে স্বর্ণপদক দেন।

সমাবর্তনে আরও বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি প্রফেসর ইঞ্জি. আইয়ুব নবী খানসহ আগত অতিথিরা।

পরে, এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শেষে সমাবর্তনের আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।

কালের আলো/এসবি/এমএম