কোটা সংস্কার আন্দোলন স্থগিত, সিদ্ধান্ত মে’র প্রথম সপ্তাহে

প্রকাশিতঃ 7:47 pm | April 09, 2018

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:

সরকারের আহ্বানে সাড়া দিয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে আলোচনার পর কোটা সংস্কার দাবিতে আন্দোলন স্থগিতের ঘোষণা এসেছে।

সোমবার বিকেলে শিক্ষার্থীদের ২০ সদস্যের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকে বসেন ওবায়দুল কাদের। সেখানে দুই পক্ষের আলোচনার পর এ সিদ্ধান্ত আসে।

আলোচনার পর আন্দোলনকারীদের অন্যতম সমন্বয়ক হাসান আল মামুন বলেন, আগামী ৭ মে পর্যন্ত আন্দোলন স্থগিত করা হয়েছে। এরপর মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত জেনে পরবর্তী ঘোষণা দেয়া হবে। তিনি জানান, বৈঠকে আন্দোলনে আহত শিক্ষার্থীদের সুচিকিৎসা দেয়ার কথা জানিয়েছেন ওবায়দুল কাদের।

এছাড়া আন্দোলনে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার শিক্ষার্থীদের মুক্তি দেয়া হবে বলেও বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানান তিনি।

তবে এ বিষয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, “যারা ভিসির বাসভবন ভাঙ্গচুরসহ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে পুলিশ ব্যবস্থা নেবে।”এসময় রিপরাধ কেউ যাতে গ্রেপ্তার বা হয়রানি না হন সে ব্যপারে উপস্থিত ঢাকা মেট্রোপলিটান পুলিশ কমিশনারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, “শিক্ষার্থীদের ২০ সদস্যের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলাম। তাদের কথা শুনেছি। এ ব্যপারে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে কোটা সংস্কার নিয়ে পরীক্ষা-নীরিক্ষার পর আমারা আগামী মে মাসের ৭ তারিখের মধ্যে সিদ্ধান্ত জানাব।”

সে পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা আন্দোলন স্থগিত ঘোষণা করেছেন বলে জানান তিনি।

এর আগে, বিকেল সাড়ে চারটার দিকে সচিবালয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ২০ জনের একটি প্রতিনিধিদল সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে বৈঠকে বসেন।

বেলা আড়াইটার দিকে ধানমন্ডি কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক জানান, সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে ওবায়দুল কাদেরকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

এর আগে, সোমবার দুপুরে দোয়েল চত্বরে ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে আলোচনায় বসার কথা সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন আন্দোলনকারীদের অন্যতম সমন্বয়ক হাসান আল মামুন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ছাত্র শিক্ষক কেন্দ্রের (টিএসসি) সামনে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে দোয়েল চত্বরে পুলিশের সঙ্গে কথা বলতে আসেন মামুন।

তিনি বলেন, “আমাদের ২০ সদস্যদের একটি প্রতিনিধি দল ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে যাচ্ছে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সঙ্গে কথা বলতে। আলোচনা শেষে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।”

পুলিশের সঙ্গে আলাপের বিষয়ে মামুন বলেন, “আমরা পুলিশকে বলেছি টিএসসিতে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করবো। তারা যেন আমাদের ওপর হামলা না করেন। পুলিশ এতে রাজি হয়েছে।”

কথা বলতে আসা মামুনসহ আরেকজনের বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচয়পত্রের ছবি তুলে রাখে পুলিশ। সেখানে নিয়োজিত কর্মকর্তারা জানান, শিক্ষার্থীরা যদি শান্তিপূর্ণ আন্দোলন না করে ভাঙচুর করে, তাহলে পুলিশ ব্যবস্থা নেবে এবং এই দু’জনের বিরুদ্ধে মামলা দেবে।

এর আগে বেলা ১১টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেবির সামনে সংবাদ সম্মেলন করে আন্দোলনের সমন্বয়ক রাশেদ খান বলেন, “গ্রেপ্তার শিক্ষার্থীদের মুক্তি না দিলে এবং হামলাকারী পুলিশ সদস্যদের বিচার না করলে বিকেল থেকে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।”

দাবি মেনে না নেয়া পর্যন্ত সারাদেশের কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট চলবে বলেও ঘোষণা দেন তিনি।

শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার অভিযোগ তুলে মধ্যরাতেই রাস্তায় নামেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলের ছাত্রীরা। এতে উত্তাল হয়ে পড়ে গোটা ক্যাম্পাস।

কিন্তু এরমধ্যেই ঢাবি ক্যাম্পাসে উপাচার্যের বাসভবনে ওই হামলা চালানো হয়। সেসময় দু’টি মাইক্রোবাস ও মসজিদের সামনে মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগও করা হয়। পরে আন্দোলনকারীদের হটিয়ে দিতে আরও কড়া অবস্থানে যায় পুলিশ। আন্দোলনকারীরা দোয়েল চত্বরে অবস্থান নিলে সেখান থেকেও তাদের হটিয়ে দেয়া হয়। সকালে কোটা সংস্কার আন্দোলনের বিরুদ্ধে মিছিল করে ক্ষমতাসীন দলের সহযোগী সংগঠন ছাত্রলীগ।

অবশ্য কোটা সংস্কার দাবিতে ঢাকার বাইরে আন্দোলন করছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরাও। আন্দোলনকারীরা কোটার সংস্কারের পাশাপাশি ঢাকায় শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার বিচার দাবিও করছেন।

আজ সকালে জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, “আমরা শিক্ষার্থীদের দুটি প্রস্তাব দিয়েছি। সচিবালয়ে গিয়ে অথবা ধানমন্ডি কার্যালয়ে এসে সেতুমন্ত্রীর সঙ্গে একটি প্রতিনিধি গিয়ে বৈঠক করতে পারে। আমরা এখন পর্যন্ত তাঁদের কাছ থেকে কোনো সাড়া পায়নি। কোটা সংস্কারের যে বিষয়টি, সেটা সরকারই সমাধান করতে পারে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ বিষয়ে সমস্যার সমাধান করার জন্য ওবায়দুল কাদেরকে দায়িত্ব দিয়েছেন।”