বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়’

প্রকাশিতঃ 12:00 pm | September 12, 2019

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো :

রয়েল থাই আর্মির কমান্ডার ইন চিফের আমন্ত্রণে ১৯ টি দেশের সেনাপ্রধানের অংশগ্রহণে ইন্দো-প্রশান্ত সেনাপ্রধান সম্মেলনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ নিজ দেশের পররাষ্ট্রনীতির মূলমন্ত্র সম্পর্কে বলতে গিয়ে বলেছেন, ‘বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি কিছু সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা থেকে উৎসারিত।

আরও পড়ুন: ইন্দো-প্রশান্ত সেনাপ্রধানদের রোহিঙ্গা সমস্যা ও ভবিষ্যত পরিণতি সম্পর্কে বললেন জেনারেল আজিজ

এর মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ হলো আন্তর্জাতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ জাতীয় সার্বভৌমত্ব ও সমতার নীতি মান্য করবে, অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করবে না, সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধান করবে, আন্তর্জাতিক রীতিনীতি এবং জাতিসংঘ সনদে উল্লিখিত নীতিমালার প্রতি সম্মান দেখাবে।’

আরও পড়ুন: সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির কথা জানালেন সেনাপ্রধান

তিনি বলেন, ‘১৯৭১ সালে স্বাধীনতা লাভের পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন, ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়’। এটিই বাংলাদেশের বৈদেশিক সম্পর্কের মূল ভিত্তি। আমরা তা আক্ষরিক ও চেতনাগত অর্থে মেনে চলছি। শ্রদ্ধাশীল বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ব্যাপারে এটিই অন্যদের আশ্বস্ত করে।’

থাইল্যান্ডের ব্যাংককে গত সোমবার (০৯ সেপ্টেম্বর) সেনাপ্রধান এসব কথা বলেন। তাঁর দীর্ঘ তথ্যনির্ভর বক্তব্যে ভারত ও মিয়ানমার সীমান্ত সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত একটি ধারণা দেন। তিনি বলেন, ‘ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের ৪ হাজার ৪২৭ কিলোমিটার স্থল ও সমুদ্রসীমা। মোট সীমান্তের ৯৪ শতাংশই ভারতের সঙ্গে। বাকি ২৭১ কিলোমিটার মিয়ানমারের সঙ্গে। এর মধ্যে ৬৩ কিলোমিটার নাফ নদী বরাবর এবং ২০৮ কিলোমিটার পার্বত্য অঞ্চলে। মিয়ানমারের সঙ্গে আমাদের কোনো সীমান্তবিরোধ নেই।’

আরও পড়ুন: প্রতিবেশী রাষ্ট্রসমূহের সঙ্গে সীমান্ত পরিস্থিতি কীভাবে উন্নতি করেছেন, জানালেন জেনারেল আজিজ

ভারতের সঙ্গে সীমান্ত সমস্যার সমাধানের কথা জানিয়ে বলেন, ‘ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সীমান্তসংশ্লিষ্ট বিষয় তিনটি ছিটমহল, বেদখল ও ৬ দশমিক ৫ কিলোমিটারের ছোট এলাকায় অমীমাংসিত সীমান্ত। বৃহৎ সমস্যাগুলো সমাধানের লক্ষ্যে বাংলাদেশ ও ভারত ১৯৭৪ সালে স্থলসীমান্ত চুক্তি স্বাক্ষর করে। চুক্তিটি ২০১১ সালে সংশোধিত এবং ২০১৫ সালের ৬ জুন বাস্তবায়িত হয়।’

বাংলাদেশের ভেতরে ভারতের ১১১টি এবং ভারতের ভেতরে বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহল ছিল জানিয়ে তিনি বলেন, ‘স্থলসীমান্ত চুক্তির শর্ত অনুযায়ী উভয় দেশ ছিটমহলগুলো বিনিময় করে। যে দেশে যে ছিটমহল, সেখানকার অধিবাসীদের সে দেশের নাগরিক হিসেবে থেকে যাওয়ার অধিকার দেওয়া হয়।’

বাংলাদেশ ও ভারতের ভূমি বিরোধের অবসানের কথা উল্লেখ করে জেনারেল আজিজ আহমেদ বলেন, ‘কোনো একটি দেশের ভূমি অন্য দেশের নিয়ন্ত্রণে থাকলে তা অবৈধ ভূমি দখলের পর্যায়ে পড়ে। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে এ রকম ভূমির পরিমাণ ছিল ৩ হাজার একর। উভয় দেশ তার আপস-মীমাংসা করেছে।’

শিগগির বাংলাদেশ ও ভারতের ২ কিলোমিটার স্থলসীমান্ত চিহ্নিত করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ভারত-বাংলাদেশের ৬ দশমিক ৫ কিলোমিটার স্থলসীমান্ত অচিহ্নিত ছিল। এর মধ্যে ৪ দশমিক ৫ কিলোমিটার ইতিমধ্যে চিহ্নিত করা হয়েছে, বাকি ২ কিলোমিটার শিগগিরই করা হবে।’

তিনি বলেন, ‘স্থলসীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নের ফলে প্রায় ৬০ বছর ধরে মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন ছিটমহলবাসীর নিত্যপ্রয়োজনীয় সেবাগুলো পাওয়ার সুযোগ মিলেছে। রাষ্ট্রগুলো কী করে আত্মমর্যাদা অটুট রেখে এবং নিজ নিজ স্বার্থ রক্ষা করে অমীমাংসিত বিষয়ের সমাধান করতে পারে, ভারতের সঙ্গে স্থলসীমান্ত চুক্তির বাস্তবায়ন তার নজির।’

বাংলাদেশের অবস্থান তিনটি প্রধান মাদক উৎপাদনকারী অঞ্চলের মাঝখানে, এমনটি জানিয়ে সেনাপ্রধান বলেন, ‘পূর্ব দিকে গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গল, উত্তরে গোল্ডেন ওয়েজ এবং পশ্চিমে ভারতের ওপারে গোল্ডেন ক্রিসেন্ট। এই তিন অঞ্চলের নৈকট্য মাদক চোরাচালানের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে বাংলাদেশকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিয়েছে। জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিকদের সম্প্রতি জীবিকার জন্য মাদক চোরাচালানের সঙ্গে জড়িয়ে পড়তে দেখা যাচ্ছে।’

অস্ত্র-গোলাবারুদের অবৈধ ব্যবসা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গল, গোল্ডেন ওয়েজ ও গোল্ডেন ক্রিসেন্টের মাঝখানে থাকায় বাংলাদেশ আন্তদেশীয় জঙ্গি ও বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর অস্ত্র ও গোলাবারুদ চোরাচালানের রুট হিসেবে ঝুঁকির মধ্যে পড়তে পারে।

সীমান্তরক্ষীদের কাছে সীমান্ত চোরাচালান সবচেয়ে নৈমিত্তিক ইস্যু। বিভিন্ন সীমান্তপথে ভারত ও মিয়ানমার থেকে প্রধানত গবাদিপশু ও কাপড় চোপড়রে মতো পণ্য উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বাংলাদেশে চোরাচালান হয়ে আসে। আরেক মূল্যবান চোরাচালানকারী পণ্য হলো স্বর্ণ।

এটি ব্যবহৃত হয় অবৈধ ব্যবসার মূল্য পরিশোধ বাবদ। সীমান্তবর্তী এলাকার মাধ্যমে জাল মুদ্রার বিস্তার আরেক উদ্বেগের বিষয়। এটি দেশের মুদ্রাস্ফীতি বৃদ্ধির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে, বলেন সেনাবাহিনী প্রধান।

কালের আলো/এএ/এমএএএমকে

Print Friendly, PDF & Email