ছাত্র হলেন আইজিপি, আনন্দাশ্রু শিক্ষক শহীদুল্লাহ মাস্টারের চোখে!

প্রকাশিতঃ 9:04 am | January 26, 2018

অ্যাক্টিং এডিটর, কালের আলো:

চাঁদপুর জেলা সদরের বাবুরহাট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক পাস করেন পুলিশের নতুন আইজিপি ড.মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী। ওই সময় সরাসরি তাঁর শিক্ষক ছিলেন শহীদুল্লাহ মাস্টার। বাবা আব্দুল হালিম পাটোয়ারী বিমান বাহিনীতে চাকরির সুবাধে করাচিতেই প্রাথমিকের পাঠ শেষ করেন জাবেদ পাটোয়ারী।

এরপর বাবার সঙ্গে দেশে ফিরে ওই উচ্চ বিদ্যালয় থেকেই সাফল্যের সঙ্গে মাধ্যমিক অধ্যায়ের সমাপ্তি টানেন নতুন আইজিপি। স্বভাবতই শিক্ষক হিসেবে নিজের প্রিয় ছাত্রের এমন অর্জনে রীতিমতো উচ্ছ্বাসের প্লাবন বয়ে যাচ্ছে আলোকিত মানুষ গড়ার এ কারিগরের মনে।

হৃদয়ের অন্তরালে বহমান এ উচ্ছ্বাস যেন আর চেপে রাখতে পারলেন না পোড় খাওয়া এ আওয়ামী লীগ নেতা। বৃহস্পতিবার (২৫ জানুয়ারি) সকালেই নিজ ছাত্রের আইজিপি হবার সংবাদে আনন্দে কেঁদেছেন তিনি।

এদিন চাঁদপুর জেলা পরিষদের প্রথম নির্বাচিত পরিষদের এক বছর পূর্তি উপলক্ষে জেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ৩০৯ শিক্ষার্থীর মধ্যে ৮ লাখ ৭৩ হাজার টাকা বৃত্তি প্রদান অনুষ্ঠানে কথা বলতে গিয়ে হঠাৎ করেই তাঁর চোখের কোণে চিকচিক করে উঠলো অশ্রু। এ অশ্রু কষ্টের নয় বরং আনন্দের! এ কথাই যেন সবাইকে জানিয়ে দিলেন আইজিপি’র শিক্ষক শহীদুল্লাহ মাস্টার।

কাঁপা কাঁপা কন্ঠে নিজেকে স্বাভাবিক করে বলেন, ‘আজ গর্বে আমার বুকটা ফুলে উঠেছে। আমি অত্যন্ত গৌরবান্বিত। আমার ছাত্র আইজিপি হয়েছেন। ও পুরো (জাবেদ পাটোয়ারী) চাঁদপুরবাসীর গর্ব। দায়িত্ব পালনকালে নিজের কর্মদক্ষতা ও সততার গুণে জাবেদই হবেন দেশের সেরা আইজিপি।’

ছাত্রের সাফল্যে শিক্ষকের এ আনন্দাশ্রু স্পর্শ করে কাছের মানুষ থেকে দূরের মানুষকেও। জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ওসমান গণি পাটোয়ারী, চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মেয়র নাছির উদ্দিন আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা আবু নঈম পাটওয়ারী দুলাল, জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল মান্নানকেও এ সময় চোখ মুছতে দেখা গেলো।

চাঁদপুর সরকারি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন ড.মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী। এরপর তিনি ভর্তি হন ‘প্রাচ্যের অক্সফোর্ড’ খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞানে। কৃতিত্বপূর্ণ ফলাফলের পর ১৯৮৬ সালে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস বা বিসিএস পরীক্ষা দিয়ে পুলিশ ক্যাডার হন তিনি।

ষষ্ঠ বিসিএস পুলিশ ক্যাডারে তিনি হয়েছিলেন প্রথম। এছাড়া সমন্বিত মেধাতালিকায় ছিলেন চতুর্থ। মেধা-মননে যারপরেনাই সবার সেরা ছিলেন পেশাদার এ পুলিশ কর্মকর্তা। পরবর্তীতে নিজ কর্মদক্ষতায় পদোন্নতি পেয়ে পুলিশের বিশেষ শাখার অ্যাডিশনাল আইজিপি হন।

এসবির এ পদটি গ্রেড-১। অবশেষে বৃহস্পতিবার তাঁর সাফল্যের পালকে নতুন করে যুক্ত হলো সবচেয়ে মর্যাদাজনক ‘পুলিশ প্রধান’ পদ।

আনন্দে আত্মহারা আইজিপি’র শিক্ষক শহীদুল্লাহ মাস্টারের সঙ্গে আলাপ হয় দৈনিক কালের আলো’র। বৃহস্পতিবার রাতেই মোবাইল আলাপে পুলিশের নতুন আইজিপি ড.মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারীকে নিয়ে নানান স্মৃতিচারণ করেন এ শিক্ষক।

তিনি বলেন, ‘জাবেদ পাটোয়ারী স্কুল জীবনে আমার সরাসরি ছাত্র ছিল। বাবুরহাট উচ্চ বিদ্যালয়ে অষ্টম, নবম ও দশম শ্রেণিতে আমার তত্ত্বাবধানে পড়াশুনা করেছে। ওই সময় এতো যানবাহন ছিল না।

আরও পড়ুন: জাবেদ পাটোয়ারী আইজিপি, উচ্ছ্বাসের জোয়ার ইলিশের রাজধানীতে!

প্রতিদিন বাড়ি থেকে হেঁটে অথবা বাইসাইকেল চালিয়ে স্কুলে আসতো। ওর বাবা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস করতেন। বঙ্গবন্ধু’র আদর্শের মানুষ ছিলেন।’

গর্বিত এ শিক্ষক আরো বলেন, ‘ক্লাসের সবচেয়ে ব্রিলিয়ান্ট ছাত্র ছিল জাবেদ পাটোয়ারী। এ কারণে তাঁর সঙ্গে আমার কথাও বেশি হতো। ও পড়াশুনায় খুব মনোযোগী ছিল।

কখনো আড্ডাবাজিতে ছিল না। কথা কম বলতো। ছাত্র আইজিপি হবেন এ প্রত্যাশা আগে থেকেই ছিল। অবশেষে সব বাঁধা অতিক্রম করে প্রধানমন্ত্রী সঠিক লোককেই পুলিশ বাহিনীর দায়িত্ব দিয়েছেন।’

আরও পড়ুন: যেভাবে আইজিপি পদটি ড.জাবেদ পাটোয়ারী’র

 

কালের আলো/এএ

Print Friendly, PDF & Email