‘মাইয়ার লাশটা ফিরায়া দেন’

প্রকাশিতঃ 11:02 pm | July 09, 2021

নিজস্ব সংবাদদাতা, কালের আলো:

বয়স সবে ১৪ পার হয়েছে। ছোট্ট মেয়েকে কাজে দিতে চাননি মা সীমা আক্তার। কিন্তু সংসারে ‘নাই নাই’ দেখে মেয়ে নিজ ইচ্ছেতেই যোগ দিলেন হাশেম ফুড লিমিটেডের কারখানায়।

কিন্তু বিধিবাম সেই ‘কর্মট’ মেয়ে শান্তা আক্তার এবার কারখানার আগুনে নিখোঁজ। এখনও বেঁচে আছে কিনা তা জানেন না মা।

কারখানায় যোগ দেওয়ার দ্বিতীয়দিনই অগ্নিকাণ্ডে নিখোঁজ শান্তা। বৃহস্পতিবার (৮ জুলাই) আগুন লাগলেও শুক্রবার (৯ জুলাই) পর্যন্ত শান্তার মতো অনেক শ্রমিকই নিখোঁজ। যার মধ্যে বেশিরভাগই শিশু শ্রমিক।

নাড়ি ছেঁড়া ধন মেয়েকে না পেয়ে পাগলপ্রায় সীমা। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গের সামনে অপেক্ষা করছেন এই মা।

বিলাপ করে বলছিলেন, শান্তার যখন আট, তখন তার বাবা জাকির হোসেন মারা যান। এরপর থেকে তিন ছেলে ও একমাত্র মেয়েকে নিয়ে সীমার সংসার। ছেলেরা বিভিন্ন কারখানায় এবং নিজে তৈরি পোশাক কারখানার কাজ করেন।

বৃহস্পতিবার (৮ জুলাই) সকালে তাড়াহুড়ো করার কারণে না খেয়ে কাজে চলে এসেছিল শান্তা। না খেয়ে আসায় মায়ের আক্ষেপের শেষ নাই।

গলা ভেঙে গেছে। কান্নাও করতে পারছেন না। শেষ বৃহস্পতিবার মা-মেয়ের এক সঙ্গে খাওয়ার স্মৃতি মনে করে বিলাপ করছিলেন তিনি।

তাঁর কান্নায় মর্গের সামনে আসা অন্যরাও চোখের পানি আটকে রাখতে পারছিলেন না। ‘ মাইয়ার আমার বাপ নাই। খুব কষ্ট কইরা বড় করছিলাম। এহন কারখানার আগুন আমার মাইয়াডারে কাইরা নিছে,’ বলেন সীমা।

তিনি বলেন,  অহন আমি আর কিছু চাই না। আমি শুধু মাইয়ার লাশটা চাই। আপনারা আমারে মাইয়ার লাশটা দেন।

এর আগে বৃহস্পতিবার বিকেলে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের কর্ণগোপ এলাকায় হাসেম ফুড অ্যান্ড বেভারেজ লিমিটেডের কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।

কিন্তু আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতেই লেগে যায় ২০ ঘণ্টারও বেশি সময়। শুক্রবার দুপুরের পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।

এদিকে বৃহস্পতিবার রাতে ভবন থেকে লাফিয়ে পড়ে তিনজন মারা যাওয়ার খবর পাওয়া গেলেও এখন পর্যন্ত ৫০ জনের মরদেহ উদ্ধারের কথা জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস।

এদিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সূত্র বলছে, লাশগুলো এতটাই পুড়ে গেছে, যে দেখে চেনা বা শনাক্ত করার উপায় নেই।

কালের আলো/ডিএস/এমএম