সিন্ডিকেট ‘কুপোকাত’ ছাত্রলীগে আলোচনার শীর্ষে সাত!

প্রকাশিতঃ 9:20 pm | January 15, 2018

অ্যাক্টিং এডিটর, কালের আলো:

সম্মেলনের তারিখ ঘোষণার মধ্যে দিয়ে নতুন নেতৃত্বের তুমুল প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগে। তরুণ, ত্যাগী, সৎ, মেধাবী ও পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির নেতাদের হাতেই তুলে দেয়া হতে পারে ছাত্রলীগের আগামী দিনের নেতৃত্ব। ফলে এ সম্মেলনকে ঘিরে নড়েচড়ে বসেছেন দলটির ঝিমিয়ে পড়া নেতা-কর্মীরা। সংগঠনেও ফিরে এসেছে চাঙ্গাভাব।

হাইকমান্ডের ‘অনুকম্পা’ পেতে জোর লবিইং-গ্রুপিং শুরু করেছেন সম্ভাব্য পদ-প্রত্যাশীরা। দিন-রাত একাকার করে তাঁরা ছুটছেন প্রভাবশালী সাবেক ছাত্র নেতাদের দূয়ারে। নেতৃত্ব যাচাই-বাছাইয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত আ’লীগের তিন নেতা-নেত্রীর কাছে বিভিন্নভাবে সম্ভাব্য প্রার্থীরা নিজেদের ভাবমূর্তি এক্সপোজ করছেন।

তবে এবার নেতৃত্ব নির্বাচন প্রক্রিয়ায় ছাত্রলীগের রাজনীতিতে কথিত ওই সিন্ডিকেটের প্রভাবমুক্ত দেখতে চান উপমহাদেশের সব থেকে প্রাচীন এ ছাত্র সংগঠনটির বেশিরভাগ সাবেক ছাত্র নেতাই। তাদের প্রত্যাশা, এবার নেত্রীর পছন্দেই ছাত্রলীগে বিজয় পতাকা উড়াবেন কর্মী বান্ধব, ত্যাগী ও মেধাবী ছাত্র নেতারা। ফলে আসন্ন সম্মেলনে কুপোকাত হতে পারে বিশেষ ওই সিন্ডিকেটের। খবর দলীয় নেতা-কর্মী সূত্রের।

জানা যায়, ২০১৫ সালের ২৬ জুলাই বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ২৮ তম জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ওই সম্মেলনে সাইফুর রহমান সোহাগকে সভাপতি ও এস.এম.জাকির হোসাইনকে সাধারণ সম্পাদক করে দুই বছরের জন্য কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করা হয়। ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্রের ১১(খ) ও (গ) ধারায় বলা হয়েছে, কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের মেয়াদ হবে দুই বছর। এর মধ্যে সম্মেলন না হলে সংসদের কার্যকারিতা থাকবে না।

কিন্তু সোহাগ ও জাকিরের নেতৃত্বে কমিটি পেরিয়ে যায় দুই বছর পাঁচ মাস। গঠনতন্ত্র মেনে সম্মেলন না হওয়ায় প্রকাশ্যে বিক্ষোভের তুবড়ি ফুটান সংগঠনটির কেন্দ্রীয় নেতাদের একটি বড় অংশ। তাঁরা আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতাদের দ্বারস্থ হন। সম্মেলন দাবিতে দৃষ্টি আকর্ষণ করেন দলীয় সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার।

এমন প্রেক্ষাপটে চলতি বছরের ৬ জানুয়ারি ছাত্রলীগের ৭০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের স্বাধীনতার মাসে সম্মেলন করতে নেত্রীর ইচ্ছার কথা জানান। পরে ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন ৩১ মার্চ ও ১ এপ্রিল ছাত্রলীগের পরবর্তী সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করেন। এতে করে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে আসে দলীয় নেতা-কর্মীদের মাঝে। শুরু হয়ে যায় সম্ভাব্য পদ-প্রত্যাশীদের দৌড়ঝাঁপ।

ঘনিয়ে আসা ছাত্রলীগের ২৯ তম জাতীয় সম্মেলনে পদ প্রত্যাশী একাধিক ছাত্র নেতা নিজেদের পক্ষে সমর্থন আদায়ে কর্মীদের দ্বারে দ্বারে ছুটছেন। এর মধ্যে ৭ ছাত্রলীগ নেতা আলোচনার শীর্ষে রয়েছেন। তাঁরা হলেন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি আবিদ আল হাসান, সাধারণ সম্পাদক মোতাহার হোসেন প্রিন্স, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির বর্তমান সাংগঠনিক সম্পাদক আশিকুল পাঠান সেতু, শিক্ষা ও পাঠচক্র সম্পাদক গোলাম রাব্বানী, কৃষি সম্পাদক বরকত হোসেন হাওলাদার, ত্রাণ ও দুর্যোগ সম্পাদক ইয়াজ আল রিয়াদ ও উপ-আইন সম্পাদক হোসাইন সাদ্দাম।

‘প্রাচ্যের অক্সফোর্ড’ খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগকে সুসংগঠিত ও শক্ত অবস্থানে নিয়ে গেছেন ঢাবি’র সভাপতি আবিদ আল হাসান ও সাধারণ সম্পাদক মোতাহার হোসেন প্রিন্স। পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তি ধরে রেখে তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল ও ডিপার্টমেন্টে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করেছেন। তাদের সাংগঠনিক এমন বিচক্ষণতাই নেতৃত্বের দৌড়ে তাদের এগিয়ে রাখছে বলে মনে করেন অনেকেই।

এ সম্মেলনে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক আশিকুল পাঠান সেতুকে গুরুত্বপূর্ণ একটি দায়িত্বে রাখতে তৃণমূল থেকেই জোর দাবি উঠেছে। ২০১৩ সালে বিএনপি-জামায়াত জোটের নাশকতা নির্ভর কঠোর আন্দোলন চলাকালীন সময়ে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে রাজপথে দাঁতভাঙ্গা জবাব দিয়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এসেছিলেন আশিকুল পাঠান।

দলীয় আনুগত্যের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ সেতুকে ওই সময়েই ছাত্রলীগের দু’পদের একটিতে ঠাঁই দেয়ার আওয়াজ উঠলেও বঞ্চিত হন এ ছাত্রনেতা। ‘নেত্রী অন্ত:প্রাণ’ এ ছাত্রনেতা এবার উপযুক্ত মূল্যায়ন পাবেন এমন আকাঙ্খা মাঠের কর্মীদের।

এগিয়ে আসা এ সম্মেলনে ছাত্রলীগ নেতা গোলাম রব্বানী ও ইয়াজ আল রিয়াদও ক্লিন ইমেজের। মাঠেও তাদের অবস্থান ভাল। ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি সুলতান সালাহউদ্দিন টুকুকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে হটিয়ে দিয়েছিলেন কৃষি সম্পাদক বরকত হাওলাদার। ওই সময় থেকে সংগঠনের রাজনীতিতে পরিচিত বরকত।

আসন্ন সম্মেলনে সংগঠনের নতুন নেতৃত্বের বয়স কত হবে এ নিয়েও চলছে আলোচনা। বয়সের ‘মারপ্যাচে’ বাদ পড়তে পারেন সংগঠনটির এমন নেতাদের দাবি হচ্ছে আগামী জুলাই পর্যন্ত যাদের বয়স সংগঠনের গঠনতন্ত্র মোতাবেক ২৯ বছর রয়েছে তাদের বিষয়টি যেন বিবেচনা করা হয়।

সংগঠনটির এক সিনিয়র সহ-সভাপতি বলেন, নির্ধারিত সময়ে সম্মেলন হলে আমাদের বয়স ছিল। এক্ষেত্রে গঠনতন্ত্র মানা হয়নি। এ কারণেজুলাই পর্যন্ত যাদের ২৯ বছর হয়নি তাদের বিবেচনায় নেয়ার দাবি জানাচ্ছি।

Print Friendly, PDF & Email