চীনা প্রতিরক্ষামন্ত্রীর সফর ঘিরে আগ্রহ, দৃষ্টি রাখছে পশ্চিমা দেশগুলোও
প্রকাশিতঃ 10:12 am | April 27, 2021

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:
চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেনারেল ওয়েই ফেঙ্গহি একদিনের সফরে মঙ্গলবার (২৭ এপ্রিল) ঢাকায় আসছেন। এ সফরের দিকেই প্রতিবেশী দেশগুলোর আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া দূরের পশ্চিমা দেশগুলোও নিবিড় দৃষ্টি রাখছে এ সফরের দিকে।
জানা গেছে, আজ মঙ্গলবার(২৭ এপ্রিল) সকাল ১০টার দিকে ঢাকায় পৌঁছাবেন চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী। ঢাকায় তিনি বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে গিয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন। এ সফরে তিনি রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ এবং সেনাপ্রধান জেনারেল ড. আজিজ আহমেদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। সফর শেষে আজই তিনি শ্রীলঙ্কায় কলম্বোর উদ্দেশে ঢাকা ছাড়বেন।
নিরাপত্তা ও কূটনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, পরিবর্তনশীল ভূরাজনীতি, প্রতিরক্ষা সহযোগিতা জোরদার করা এবং টিকা কূটনীতির এ পর্বে জেনারেল ওয়েই ফেঙ্গহির বাংলাদেশ সফর তাৎপর্যপূর্ণ। সংগত কারণেই এ বিষয়গুলো তার এ সফরে বিশেষ গুরুত্ব পাবে।
কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, গত বছর নভেম্বর মাসেই নেপাল ও বাংলাদেশ সফরের কথা ছিল চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর। সে সময় তিনি নেপাল সফর করলেও বাংলাদেশ সফর স্থগিত হয়। এবার তিনি সেই স্থগিত হওয়া সফরে আসছেন। তাঁর বাংলাদেশ সফর কয়েক ঘণ্টার হলেও শ্রীলঙ্কা সফর প্রায় তিন দিনের। সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ ২০১৯ সালে চীন সফরকালে প্রতিরক্ষামন্ত্রী উই ফেংহের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন।
চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা সম্পর্ক অত্যন্ত জোরালো। বাংলাদেশে সামরিক ও প্রতিরক্ষা সরঞ্জামের বেশির ভাগই আসে চীন থেকে। এ সম্পর্ক আরো জোরালো করার আগ্রহ আছে চীনের। অন্যদিকে বাংলাদেশও নির্দিষ্ট কোনো বলয়ে না ঢুকে ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্বের’ নীতি অনুসরণ করে চীনের সঙ্গে সম্পর্ক আরো জোরদার করতে চায়। কভিড মহামারির দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময় বাংলাদেশ ভ্যাকসিনের জন্য চীনের সহযোগিতা চেয়েছে। চীন প্রাথমিকভাবে পাঁচ লাখ ভ্যাকসিন উপহার হিসেবে পাঠানোর আশ্বাস দিয়েছে।
এদিকে বাংলাদেশ ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট উৎপাদিত অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন ‘কোভিশিল্ড’ আমদানি করলেও ভারতের নিজস্ব ভ্যাকসিন ‘কোভ্যাক্সিন’কে এ দেশে ব্যবহারের অনুমোদন দেয়নি। এ ক্ষেত্রে যুক্তি হচ্ছে, এটি এখনো বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদন পায়নি। কভিড মহামারিতে বিপর্যস্ত ভারত এখন প্রতিশ্রুত ‘কোভিশিল্ড’ পাঠাতে পারছে না। এমন পরিস্থিতিতে তারা এ দেশে যৌথ উদ্যোগে ‘কোভ্যাক্সিন’ উৎপাদনের প্রস্তাব দিয়েছে। এ ক্ষেত্রে ভারতীয়দের যুক্তি, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদন পায়নি এমন চীনা ও রুশ ভ্যাকসিন বাংলাদেশ আমদানির চেষ্টা করছে এবং রুশ ভ্যাকসিন যৌথ উদ্যোগে উৎপাদনের পথে এগোচ্ছে। তাহলে ভারতের ‘কোভ্যাক্সিন’ কেন নয়?
এমন নানা সমীকরণের মধ্যে আজ মঙ্গলবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন চীনের উদ্যোগে আয়োজিত ছয় দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের ভার্চুয়াল বৈঠকে অংশ নিচ্ছেন। ওই বৈঠকে ভারত নেই। বাংলাদেশ, চীন ছাড়াও থাকছে পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, নেপাল ও আফগানিস্তান। কভিডের মতো মহামারিতে ভ্যাকসিন নিয়ে যে অভিজ্ঞতা হয়েছে তার আলোকে একটি আঞ্চলিক ভ্যাকসিন ভাণ্ডার গড়া নিয়ে আলোচনা হবে আজকের বৈঠকে। ঠিক এমন প্রেক্ষাপটে আজ চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ঢাকায় আসছেন।
এ মাসের শুরুর দিকে বাংলাদেশ সফরে এসেছিলেন ভারতের সেনাপ্রধান জেনারেল মনোজ মুকুন্দ নারাভানে। সে সময় তিনি উপহার হিসেবে এক লাখ ডোজ ভ্যাকসিন নিয়ে এসেছিলেন।
কালের আলো/জেএসডি/এমএম