চাকুরি নাকি উদ্যোক্তা: যুবদের জন্য পরামর্শ

প্রকাশিতঃ 10:47 am | April 22, 2021

মনজুর রশীদ :

যেকোনো একটি চাকুরি পাওয়ার আগে অনেকগুলো কাজ সম্পন্ন করতে হয় এবং তার জন্য চাকুরি প্রার্থীকে তার ব্যস্ত সময়ের মাঝেও আলাদা করে অনেকখানি সময় বের করে নিতে হয়।। যেমন:

১. নিয়মিত চাকুরির বিজ্ঞাপনে তীক্ষ নজর রাখা এবং নিজের অভিজ্ঞতার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ উপযুক্ত চাকুরির অফার খুঁজে পাওয়া।

২. সবকিছু মিললে নিজের বায়োডাটা আপডেট করা ও কভার লেটার লেখা।

৩. এখনকার বেশীরভাগ চাকুরির আবেদন অনলাইনে সম্পন্ন করতে হয়। ডিজিটাল বাংলাদেশে ধীরগতির ইন্টারনেটের সহায়তায় এমন আবেদনের পিছনে বেশ কয়েক ঘন্টা সময় ব্যয় করতে হয়। অভিজ্ঞতা যত বেশী, আবেদনে ফিরিস্তিও তখন লিখতে হয় অনেক বেশী। ফলে অনেকক্ষেত্রে পুরো দিনই চলে যেতে পারে অনলাইনে আবেদন সম্পন্ন করতে।

৪. ভাগ্য কিছুটা সুপ্রসন্ন হয়ে আবেদনকারীদের মধ্য থেকে সংক্ষিপ্ত তালিকায় স্থান পেলে শুরু হয় পরীক্ষা যুদ্ধ। প্রাথমিক পরীক্ষায় অবতীর্ণ হলে (কখনো মৌখিক অথবা লিখিত) আবার ডাকা হয় পরবর্তী পরীক্ষার জন্য (চূড়ান্তভাবে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা অথবা যে কোন একটি পরীক্ষার জন্য – কিন্তু সেটি নির্ভর করে ঐ সংস্থার নিয়োগ ভাবনার ওপর)। কোন কোন সংস্থার এইচ আর প্রধান আবার এই পরীক্ষাগুলোতে অত্যন্ত সফলতার সাথে উত্তীর্ণ হওয়া উপরের দিকের ২/৩ জনকে পাঠায় ঐ সংস্থার শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তি বা সংশ্লিষ্ট বসের কাছে তার চূড়ান্ত পছন্দ জানার জন্য। মূলত বসের সিদ্ধান্তই এমন নিয়োগে চূড়ান্ত বলে ধরে নিতে পারেন। কোন কোন প্রতিষ্ঠান আবার লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার পর মনস্তাত্ত্বিক পরীক্ষার জন্যও আলাদাভাবে ডাকে। এ পর্যায় পর্যন্ত আসলে ধরে নেয়া হয় প্রার্থী একেবারেই নতুন চাকুরি প্রাপ্তির দ্বারপ্রান্তে। তখন বাকী থাকে শুধু স্বাস্থ্য পরীক্ষা আর রেফারেন্স চেক।

৫. এতগুলো ধাপ সফলভাবে সম্পন্ন করার পর যদি জানতে পারেন যে, কেবল লৈঙ্গিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনা করায় আপনি বাদ পড়ছেন অথবা পূর্ব নির্ধারিত ব্যক্তিকে নেয়ার বৈধতা হিসাবে এতগুলো পরীক্ষা নেয়া হয়েছে, তখন আপনার অনুভূতি কেমন হবে তা সহজেই অনুমেয়। অভিজ্ঞতা থেকে বলছি – অনেক প্রতিষ্ঠান আগে থেকেই নির্ধারণ করে রাখে এই পদে তারা নারী নাকি পুরুষ অথবা তাদের ভেতর থেকে কাউকে নেবে কিনা! যদিও কাগজে-কলমে বা কোন ডকুমেন্টে এর কোন প্রমাণ কোন সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানে কেউ অনুসন্ধান করলে খুঁজে পাবেনা। কেউ চ্যালেঞ্জ করলে তারা তথ্যপ্রমাণ দিয়েই দেখিয়ে দেবে কিভাবে তারা সঠিকভাবে যোগ্য প্রার্থীকেই খুঁজে নিয়েছে!

তাহলে এতসব নাটকের কি দরকার? নারী নিলে শুধু নারীদের, পুরুষ নিলে শুধু পুরুষদের, সংস্থার ভেতর থেকে কাউকে নেয়ার সিদ্ধান্ত থাকলে শুধু অভ্যন্তরীণ প্রার্থীদের আবেদন করতে বলাটাই কী নৈতিকভাবে সমীচীন নয়? অত্যন্ত দুঃখজনক ব্যাপার হল নীতি কথা বলা অনেক নিয়োগকর্তারা সচেতনভাবেই অংশগ্রহণমূলক প্রতিযোগিতার নামে নিয়োগ প্রক্রিয়ার এমন প্রহসনের নাটক হরহামেশাই মঞ্চস্থ করে থাকেন!

অথচ তাদের কারোই অজানা নয়-একেকটি পরীক্ষার জন্য একেকজন প্রার্থীকে তার ব্যস্ত সময়ে বসকে মিথ্যা কথা বলে কিভাবে ছুটি নিতে হয়, জীবন-জীবিকায়নের জন্য পরিণত বয়সে এসেও প্রচুর প্রস্তুতি নিতে হয়, দূর-দূরান্ত থেকে রাজধানীতে ছুটে আসা প্রার্থীদের আর্থিক দূরাবস্থার মাঝেও প্রতিবার আসা-যাওয়া, থাকা-খাওয়া বাবদ কি পরিমাণ অর্থ খরচ করতে হয়! নিয়োগের নামে কেন এই কপটতা? কেন এই প্রহসন? এগুলো দেখারও তো কেউ নেই!

তবে একথাটিও বলা বাঞ্চনীয়-সব প্রতিষ্ঠানই কিন্তু এ রকম নয়। তাহলে আমার মত লক্ষ লক্ষ বেসরকারি চাকুরীজীবীর চাকুরী পাওয়া সম্ভব ছিল না। এখনও অনেক প্রতিষ্ঠান আছে, যারা যোগ্যতার মানদণ্ডে সঠিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করেই যোগ্য প্রার্থীদের খুঁজে বের করে। ফলে ঢালাওভাবে সবাইকে এমন অপবাদ দিতে চাইনা, বরং যারা নীতি নৈতিকতা বহির্ভূতভাবে এমন নিয়োগ দিয়ে থাকেন – লেখাটি কেবল তাদের জন্য প্রযোজ্য।

জীবনভর এসব বাজে অভিজ্ঞতা থেকে মুক্তি এবং আরও অনেকের পাশে দাঁড়ানোর বড় পন্থা হল যুব অবস্থা থেকেই নিজেকে উদ্যোক্তা হিসাবে গড়ে তোলা। কর্মসংস্থানের একটি বড় অধ্যায় হল আত্মকর্মসংস্থান। যাঁরা উদ্যোক্তা তারা কেবল নিজের দায় নেন না, তাঁরা সমাজের বড় দায়ও কিন্তু কাধে নেন। তাই বেকারত্ব ঘুচাতে চাকরি করতে হবে – বৈশ্বিক পরিবর্তন ধারায় দেশের যুব সমাজের এ মনোভাবে পরিবর্তন এখন সময়ের দাবী। তা না হলে একটি বয়সে এসে হা পিত্যেস করা ছাড়া উপায় থাকবেনা। তাই যুব উদ্যোক্তা হতে চাইলে সাহসী হয়ে ঝুঁকি নেয়া, লেগে থাকা ও সময়কে যথাযথভাবে কাজে লাগানো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি বিজ্ঞানী ড. এ পি জে আব্দুল কালাম এর ভাষায় – “তুমি যদি তোমার সময়ের মূল্য না দাও, তবে অন্যরাও দেবে না। নিজের সময় ও প্রতিভাকে বাজে বিষয়ে নষ্ট করা বন্ধ করো। তাহলে সফল হবেই। সব সময় মনে রাখবে – স্বপ্ন সেটা নয় যেটা মানুষ ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে দেখে, স্বপ্ন সেটাই যেটা পূরনের প্রত্যাশা মানুষকে ঘুমাতে দেয় না।”

লেখক: উন্নয়নকর্মী, গবেষক ও সমাজ বিশ্লেষক।