অশ্রু-শ্রদ্ধা-ভালোবাসায় লে:কর্নেল শওকত বুলবুলকে শেষ বিদায়

প্রকাশিতঃ 8:42 pm | December 29, 2020

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:

চলে গেলেন ট্রাস্ট ব্যাংকের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব:) শওকত আক্তার বুলবুল। প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস কেড়ে নিলো তাঁর তাজা প্রাণ। সৎ, নির্ভীক ও ধর্মপরায়ণ অবসরপ্রাপ্ত এ সেনা কর্মকর্তার চিরপ্রস্থানে তাঁর পরিবারের সদস্যরা হারালেন নিজেদের প্রাণভোমরাকে।

সহকর্মী, সতীর্থ ও অনুরাগীরা হারালেন বিনয়ী ও নম্রভাষী এক স্বজনকে। নিজের সহকর্মী, সতীর্থ, আত্নীয় স্বজন আর শুভানুধ্যায়ীদের অশ্রু-শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় শেষ বিদায় নিয়েছেন শওকত আক্তার বুলবুল। পরমতসহিষ্ণুতা, উদারতা ও রুচিস্নিগদ্ধতার অধিকারী হৃদয়বান এ মানুষটি করোনায় আক্রান্ত হয়ে গত ২৬ নভেম্বর থেকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন ছিলেন।

সিএমএইচ’র কমান্ড্যান্ট ও চিকিৎসকদের শত আন্তরিকতাও তাকে মৃত্যুর দূয়ার থেকে ফিরিয়ে আনতে পারেনি। অসংখ্য মানুষের ভালোবাসার ফুল কুড়িয়েই সোমবার (২৮ ডিসেম্বর) বিকেল ৪ টা ৫০ মিনিটের দিকে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান শওকত।

করোনার দহন দিনে কঠিন সময়ে তাঁর অনন্তযাত্রায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য লে: কর্নেল মোহাম্মদ ফারুক খান এমপি, মহামান্য রাষ্ট্রপতির ছেলে প্রকৌশলী রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক এমপিসহ বিভিন্ন পর্যায়ের রাজনৈতিক, সামরিক পরিমন্ডল ও সামাজিকসহ নানা পর্যায়ের ব্যক্তিবর্গরা গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।

শওকত আক্তার বুলবুল ফরিদপুরের আলিপুর ১/১১ এর কবি জসিম উদ্দিন রোডে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী ও দুই কন্যাসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী ও আত্নীয় স্বজন রেখে গেছেন। তাঁর বড় মেয়ে আনিকা নুসরাত জেরিন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক এবং এশিয়ান ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি’র পিএইচডি শিক্ষার্থী।

তাঁর স্বামী মেহেদী হাসান খান এলিভেট গ্লোবালের সুরক্ষা প্রযুক্তি ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্লেষক। দ্বিতীয় কন্যা মনিকা নুজহাত শাম্মা সামরিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ইন্সটিটিউটের বৈমানিক প্রকৌশলী। ৬ ভাই-বোনের মধ্যে শওকত আক্তার বুলবুল তৃতীয় ছিলেন।

৬২ বছর বয়সী শওকত আক্তার বুলবুল সেই তরুণ বয়সেই দেশপ্রেম আর মাতৃভূমির অখন্ডতা রক্ষার দৃপ্ত শপথে বলীয়ান হয়ে যোগ দিয়েছিলেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে। আলিঙ্গন করেন কর্মময় এক জীবনকে। মহান মুক্তিযুদ্ধের সুমহান চেতনায় নিজেকে বিকশিত করেছিলেন। সব প্রতিভাবান মানুষই স্বতন্ত্র হন। তেমনি শওকত বুলবুলও ছিলেন স্বতন্ত্র, বৈদগ্ধ, হৃদয়ানুভূতি ও সংযমের অধিকারী একজন।

মঙ্গলবার (২৯ ডিসেম্বর) বাদ জোহর ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের সেনা কেন্দ্রীয় মসজিদ প্রাঙ্গণে প্রথম নামাজে জানাজা শেষে বনানীর সেনা কবরস্থানে তাকে চিরন্দ্রিায় শায়িত করা হয়। জানাজা শুরুর আগে মরহুমের পরিবারের পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন তাঁর ভায়রা, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ড.আজিজ আহমেদ।

বেদনাহত ও বিমর্ষ মননে সেনাপ্রধান নিজের ভায়রার জন্য উপস্থিত সবার কাছে দোয়া প্রার্থনা করে বলেন, ‘লে: কর্ণেল শওকত আক্তার বুলবুল একজন ভালো মনের ভদ্র মানুষ ছিলেন। তিনি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করতেন। অত্যন্ত ধর্মপ্রাণ এ মানুষটি সৎ জীবন যাপন করেছেন।

নিষ্ঠার সঙ্গে নিজের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করেছেন। আমি এ মানুষটির বিদেহী আত্নার শান্তি কামনা করছি।’ পরে সেনাপ্রধান সিএমএইচ’র কমান্ড্যান্ট ও চিকিৎসকদের প্রতিও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

নামাজে জানাজায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর চীফ অব জেনারেল স্টাফ (সিজিএস) লেফটেন্যান্ট জেনারেল শফিকুর রহমান, ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজের (এনডিসি) কমান্ড্যান্ট লেফটেন্যান্ট জেনারেল আতাউল হাকিম সারওয়ার হাসান, প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার (পিএসও) লেফটেন্যান্ট জেনারেল ওয়াকার উজ জামান, ইঞ্জিনিয়ারিং ইন চীফ (ইএনসি) মেজর জেনারেল ইবনে ফজল সায়খুজ্জামান, মেজর জেনারেল আবুল হাসনাত মোহাম্মদ খায়রুল বাশার, সেনা সদরের সামরিক সচিব মেজর জেনারেল খালেদ আল মামুনসহ উর্ধ্বতন সামরিক কর্মকর্তা, বন্ধু, স্বজনরা অংশগ্রহণ করেন।

মরহুমের পারিবারিক সূত্র জানায়, মরহুমের আত্নার মাগফেরাত কামনায় আগামী শুক্রবার (০১ জানুয়ারি) বাদ জুম্মা রাজধানীর মিরপুর ডিওএইচএস মসজিদে মিলাদ ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে।

কালের আলো/এসআর/এমএইচএ

Print Friendly, PDF & Email