কথা রেখেছেন আইজিপি

প্রকাশিতঃ 3:36 pm | August 15, 2018

অ্যাক্টিং এডিটর, কালের আলো :

কথা রেখেছেন পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড.মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী বিপিএম (বার)। দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে জীবন দিয়ে টার্গেট রুখে দেওয়া পুলিশ সদস্যদের প্রিয়জন হারানোর বেদনা খানিকের জন্য হলেও মোচন করতে পাশে থাকার অঙ্গীকার করেছিলেন।

গতানুগতিক ধারায় সময়ের চোরাবালিতে সেই প্রতিশ্রুতি হাওয়ায় মিলে যায়নি। আক্ষরিক অর্থেই অঙ্গীকার বাস্তবায়ন করে চলেছেন তিনি। একবার নয়, একাধিকবার প্রমাণ করেছেন তিনি কথা দিয়ে কথা রাখার বিরল গুণের অধিকারী মানুষ।

কর্তব্যরত অবস্থায় মৃত্যুবরণকারী পুলিশ সদস্যদের বিষন্ন পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর যে ‘ট্র্যাডিশন’ প্রথমবারের মতো এই পুলিশ মহাপরিদর্শক চালু করেছেন আদতে সেটি বাহিনীর সদস্যদের প্রতি নিজের গভীর ভালোবাসা ও মমত্ববোধের বহি:প্রকাশ বলেই মনে করেন সবাই।

অনুসরণীয় ও প্রশংসনীয় এই উদ্যোগের ফলেই বাহিনীর প্রতিটি সদস্যের মাঝেই আইজিপি ড.মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী ভালোবাসার অমল প্রদীপ হয়ে থাকবেন।

জানা যায়, নিজের দক্ষতা, সৃষ্টিশীলতা ও শৈলীতে পুলিশ বাহিনীতে নতুন এক ইতিহাসের সূচনা করেছেন বর্তমান এই পুলিশ মহাপরিদর্শক। সময়ের আগে চলতে পারেন এবং সবকিছু ধারণ করতে পারেন নতুন নতুন কনসেপ্ট’র এই উদ্ভাবক।

নিজের ব্যতিক্রমধর্মী এসব কর্মযজ্ঞ সফলভাবে সম্পাদনে তিনি উদ্ধুদ্ধ হয়েছেন বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও বিশ্বনেতা শেখ হাসিনার দর্শন থেকে। পুলিশ প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর চলতি বছরের পহেলা মার্চ রাজধানীর মিরপুরে পুলিশ স্টাফ কলেজের অডিটোরিয়ামে ‘পুলিশ মেমোরিয়াল ডে’ অনুষ্ঠানে ড.মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী বলেছিলেন, ‘গত বছর আমরা ১৩০ জন পুলিশ সদস্যকে হারিয়েছি, যারা কর্তব্যরত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছেন।

তাদের পরিবারের সদস্যরা আজ আমার সামনে বসে আছেন। আমরা আপনাদের প্রিয়জনকে ফিরিয়ে দিতে পারবো না, জানি। তবে সব সময় আপনাদের পাশে আমরা আছি, আপনাদের সহযোগিতায় আমরা সঙ্গে থাকবো।’

তিনি আরো বলেছিলেন, ‘হয়তো সব চাহিদা মেটাতে পারবো না, তবে আমাদের সাধ্যমতো যা করণীয় অবশ্যই আমরা সেটুকু করবো।’

জঙ্গিদের দমনে ২০১৭ সালে ১৩০ জন মা হারিয়েছেন সন্তান। স্ত্রী হারিয়েছেন স্বামী। কয়েকশ’ সন্তান হারিয়েছেন স্নেহময় বাবাকে। বাহিনীর ‘অভিভাবক’ হিসেবে সেই কথাটি ঠিকই মনে রয়েছে পুলিশ প্রধানের। ফলে মার্চে যে কথা তিনি দিয়েছিলেন জুনে এসেই তাঁর বাস্তবায়ন করেছেন।

সংশ্লিষ্টরা জানায়, আইজিপি ড.মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী’র সময়েই জুনে প্রথমবারের মতো পুলিশ সদর দপ্তর থেকে দায়িত্ব পালনকালে ২০১৭ সালে নিহত ১৩০ পুলিশ সদস্যের পরিবারকে ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ঈদ শুভেচ্ছা বার্তা, খাদ্য ও উপহার সামগ্রী দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে তাদের সঙ্গে ওই সময় আগাম ঈদের শুভেচ্ছাও বিনিময় করেন তিনি।

নিজ বাহিনীর জীবন উৎসর্গকারী সদস্যদের আইজিপি সেদিন আবেগঘন বক্তৃতায় স্মরণ করেছিলেন। আবারো কথা দিয়েছিলেন দু:খ-সুখে পাশে থাকার। বলেছিলেন, ‘জাতীয় ও পারিবারিক জীবনের সকল উৎসব ও আনন্দঘন মুহূর্তে তিনি আমাদের হৃদয়ে জাগ্রত আছেন এবং থাকবেন। বাংলাদেশ পুলিশ সব সময় আপনার পরিবারের সকল প্রকার সুখ-দু:খ ও আনন্দ বেদনায় আপনাদের পাশে আছে এবং থাকবে।’

দূয়ারে কড়া নাড়ছে ঈদুল আযহা। কিন্তু জঙ্গিবাদ দমনে জীবন দেওয়া ওই পুলিশ সদস্যদের পরিবারের উপার্জনক্ষম ব্যক্তির শুন্যতা তো পূরণ হবার নয়। তবুও অন্তত ঈদের দিন যেন এই শুন্যতা বড় হয়ে না ওঠে সেই চেষ্টাই করে যাচ্ছেন পুলিশ প্রধান!

বাহিনীর প্রধান হিসেবে দায়িত্বশীলতার নজির স্থাপন করে আবারো তাদেরকে সম্মানিত করেছেন, হাসি ফুটিয়েছেন মুখে। এবার তাদের মাঝে ঈদের শুভেচ্ছা উপহার হিসেবে প্রদান করেছেন ৭ লাখ ৩০ হাজার টাকা। বাহিনীর প্রধানের এমন হৃদয়গ্রোথিত আবেগ-ভালোবাসায় যেন উচ্ছ্বসিত নিহত পুলিশ পরিবারের সদস্যরা।

তাঁরাও বলছিলেন, ‘ঈদের আগে নিহত পুলিশ সদস্যদের পরিবারের খোঁজ অতীতে কেউ নেয়নি। বর্তমান আইজিপি স্যার একটি নতুন ধারার প্রবর্তন করলেন। তাঁর এমন সহযোগিতা ও পাশে থাকার মানসিকতা আমাদের আশান্বিত করেছে। সাহস ও মানসিক শক্তিতে বলীয়ান করেছে। অনেকদিন পর একজন কার্যকর অভিভাবক পেয়েছি। তিনি আজীবন থাকবেন আমাদের চিরায়ত অন্তরে’ যোগ করেন এই পরিবারের সদস্যরা।

কালের আলো/আরএস/এএ

Print Friendly, PDF & Email