প্রধানমন্ত্রীর প্রতি অবিচল আস্থা রেখে পেশাদারিত্বের সঙ্গেই দায়িত্ব পালনের নির্দেশ সেনাপ্রধানের
প্রকাশিতঃ 7:04 pm | November 05, 2020

বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো :
নিজের নেতৃত্বাধীন সরকারের তৃতীয় মেয়াদেও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর আধুনিকায়নের ধারা অব্যাহত রেখেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দ্রুত ও সমন্বিত আধুনিকায়নের মাধ্যমে সেনাবাহিনীকে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে দক্ষ, সুশৃঙ্খল ও শক্তিশালী বাহিনীতে রূপান্তর করতে বাস্তবধর্মী সব পরিকল্পনারও বাস্তবায়ন করেছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রজ্ঞা, বিচক্ষণতা ও দূরদর্শিতায় অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী আরও যুগোপযোগী ও আধুনিক হয়ে গড়ে উঠবে বলে দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ।
তিনি সংবিধান, সরকার ও প্রধানমন্ত্রীর প্রতি অবিচল আস্থা রেখে সরকারের দেওয়া যেকোন দায়িত্ব পেশাদারিত্বের সঙ্গে পালনে সর্বদা স্বচেষ্ট থাকতে নিজ বাহিনীর সদস্যদের নির্দেশনা দিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার (৫ নভেম্বর) সিলেট সেনানিবাসে ১৭ পদাতিক ডিভিশনের উদ্যোগে চারটি ইউনিটের পতাকা উত্তোলন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
নিজের বক্তব্যের শুরুতেই সেনাপ্রধান হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, স্বাধীনতার রূপকার, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন। তিনি বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে সূচিত হয়েছিল মহান স্বাধীনতা সংগ্রাম। বঙ্গবন্ধুর বলিষ্ঠ আহ্বানে সাড়া দিয়ে সেনাবাহিনীর প্রতিটি সদস্য জনগণের সঙ্গে একাত্ন হয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল দেশকে শত্রুমুক্ত করতে, যার ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশ একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আত্নপ্রকাশ করে।’

‘বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ’ এই দু’টি নাম একে অপরের সমার্থক’ এমনটি উচ্চারণ করে সেনাপ্রধান আরও বলেন, ‘আমরা অত্যন্ত গর্বিত যে, মুজিববর্ষের এই মাহেন্দ্রক্ষণে জাতির পিতার স্বপ্ন ‘সোনার বাংলা’ আজ একটি বাস্তবতা। আর এই স্বপ্নের বাস্তবায়ন ঘটছে বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য উত্তরসূরী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে।’
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এদেশের মানুষের ভরসা ও বিশ্বাসের মূর্ত প্রতীক উল্লেখ করে জেনারেল আজিজ আহমেদ বলেন, ‘স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার পাশাপাশি দেশ গঠন এবং বিভিন্ন দুর্যোগ মোকাবেলায় সেনাবাহিনী বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখে চলেছে। বৈশ্বিক করোনা পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যগণ নিষ্ঠা ও পেশাদারিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও দেশবাসীর ভূয়সী প্রশংসা অর্জন করেছে।
এই মহামারীর সময়ে মানুষের স্বাস্থ্য সেবা প্রদানের পাশাপাশি দু:স্থদের আহার ও বাসস্থানসহ সার্বিক সহযোগিতা প্রদান, প্রসূতি মায়েদের চিকিৎসা প্রদান এবং স্বাস্থ্যসচেতনতা বৃদ্ধিতে আপনারা যে বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখেছেন তার জন্য সেনাবাহিনী প্রধান হিসেবে আমি অত্যন্ত গর্বিত।
আমি দৃঢ়ভাবে বলতে চাই যে, যেকোন দুর্যোগ মোকাবেলায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী অতীতের ন্যায় ভবিষ্যতেও সরকার ও জনগণের পাশে থাকবে। করোনা পরিস্থিতি উন্নতির সাথে সাথে আমরা আবারও আমাদের মূল কার্যক্রম অর্থাৎ, প্রশিক্ষণ গ্রহণে মনোনিবেশ করছি।

এরই অংশ হিসেবে আসন্ন শীতকালীন প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণের জন্য সকল প্রকার প্রস্তুতি গ্রহণ করা হচ্ছে। কিন্তু মনে রাখতে হবে, সকল প্রকার স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে পরিবর্তিত পরিস্থিতির সাথে মানিয়ে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালিত করতে হবে। দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা এবং সমসাময়িক ও ভবিষ্যত যে কোন প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য উন্নততর এবং কার্যকর মান অর্জনই আমাদের সকলের অঙ্গীকার।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে সেনাবাহিনী প্রধান আরও বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর মহতী উদ্যোগে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পরিধি দিন দিন বৃদ্ধি ও আধুনিকায়ন করা সম্ভব হচ্ছে। আমি কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করছি আমাদের সকল পূর্বসুরিগণকে যাদের নিরলস পরিশ্রম এবং ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী আজ একটি দক্ষ, সুশৃঙ্খল ও সুপ্রতিষ্ঠিত বাহিনীরূপে সারা বিশ্বে স্বীকৃত।’
জেনারেল আজিজ আহমেদ আরও বলেন, ‘বর্তমান সরকার জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক প্রণীত প্রতিরক্ষা নীতি ১৯৭৪ এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক অনুমোদিত প্রতিরক্ষা নীতি ২০১৮ এর আলোকে সেনাবাহিনীর উন্নয়ন, সম্প্রসারণ ও আধুনিকায়নে বিশ্বাসী।
সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখেই সেনাবাহিনীর ফোর্সেস গোল ২০৩০ প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে সিলেটে এই ১৭ পদাতিক ডিভিশন, বরিশালে ৭ পদাতিক ডিভিশন, রামুতে ১০ পদাতিক ডিভিশন, পদ্মা সেতু প্রকল্পে বাস্তবায়নে নিরাপত্তা ও তদারকির কাজে ৯৯ কম্পোজিট ব্রিগেড এবং স্পেশাল ফোর্স হিসেবে প্যারা কমান্ডো ব্রিগেডসহ নতুন নতুন অনেক সদর দপ্তর ও ইউনিট প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এতে করে আমাদের সামরিক শক্তি ও দক্ষতা বহুলাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে।

এছাড়াও সেনাবাহিনীর আধুনিক যানবাহন, সমরাস্ত্র এবং সরঞ্জামাদি সংযোজন করা হয়েছে। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনসমূহে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী যুগোপযোগী ও আধুনিক সরঞ্জামাদি মোতায়েনের মাধ্যমে জাতিসংঘ এবং বিশ্ববাসীর আস্থা অর্জনে সক্ষম হয়েছে। এভাবেই দ্রুত এবং সমন্বিত আধুনিকায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী একসময়ে বিশ্বের অন্যতম একটি সেরা সেনাবাহিনীতে রূপান্তরিত হবে ইনশাআল্লাহ।’
এর আগে সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ অনুষ্ঠানস্থলে এসে পৌঁছলে ১৭ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি ও এরিয়া কমান্ডার, সিলেট এরিয়া মেজর জেনারেল মুহাম্মদ জুবায়ের সালেহীন তাঁকে অভ্যর্থনা জানান। পরে প্যারেড কমান্ডার মেজর জহিরুল ইসলাম এর নেতৃত্বে সেনাবাহিনীর একটি সম্মিলিত চৌকষ দল কুচকাওয়াজ প্রদর্শন এবং সেনাবাহিনী প্রধানকে জেনারেল সালাম প্রদান করেন।
অনুষ্ঠানে আর্মি ট্রেনিং এন্ড ডকট্রিন কমান্ডের (আর্টডক) জিওসি লেফটেন্যান্ট জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদসহ সেনাবাহিনীর উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

কালের আলো/এসএন/এমএইচএন