ধর্ষণ বিরোধী বিক্ষোভ অথচ সেই ‘ধর্ষক’ সাফাত ঘুরে বেড়াচ্ছে বীরদর্পে

প্রকাশিতঃ 6:47 pm | October 09, 2020

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো :

দেশে একের পর এক ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে। ধারাবাহিক এই পৈচাশিক ঘটনার প্রতিবাদে দেশজুড়ে ধর্ষণ বিরোধী বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে।

রাজধানী ঢাকা থেকে শুরু করে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে এর প্রতিবাদে বিক্ষোভ, মানববন্ধন, কালো ব্যাজ ধারণসহ নানাভাবেই প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে পড়েছে গোটা দেশ।

অথচ বনানীর বহুল আলোচিত ‘দ্য রেইন ট্রি’ হোটেলে ধর্ষণ মামলার প্রধান আসামি আপন জুয়েলার্সের মালিক, ধনকুবের দিলদার আহমেদের ছেলে সাফাত আহমেদ জামিনে বেরিয়ে এসে বীরদর্পে ঘুরে বেড়াচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

ধর্ষণের শিকার বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া দুই তরুণীকেও নানা কৌশলে ভয়ভীতি দেখিয়ে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। এতে করে ন্যায় বিচার প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে উঠেছে। এ ঘটনায় জনমনে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে।

জানা যায়, ২০১৭ সালের ২৮ মার্চ বনানীর ‘দ্য রেইন ট্রি’ হোটেলে ধর্ষণের শিকার হন বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া দুই তরুণী। ওই ঘটনার ৪০ দিন পর ৬ মে রাজধানীর বনানী থানায় আপন জুয়েলার্সের বিতর্কিত মালিক দিলদার আহমেদের ছেলে সাফাত আহমেদসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন এক তরুণী।

এজাহারভুক্ত অপর চার আসামি হলেন- পিকাসো রেস্তোরাঁর অন্যতম মালিক ও রেগনাম গ্রুপের পরিচালক মোহাম্মদ হোসেন জনির ছেলে সাদমান সাকিফ, সাফাতের বন্ধু নাঈম আশরাফ (সিরাজগঞ্জের আবদুল হালিম), সাফাতের গাড়িচালক বিল্লাল ও দেহরক্ষী আবুল কালাম আজাদ (রহমত)।

৮ জুন ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম দেলোয়ার হোসেনের আদালতে সাফাতসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করেন তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের নারী সহায়তা ও তদন্ত বিভাগের পরিদর্শক ইসমত আরা এমি। অভিযোগপত্রে ৪৭ জনকে সাক্ষী করা হয়।

১৩ জুলাই ঢাকার দুই নম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক শফিউল আজম আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন।

আসামি সাফাত ও নাঈমের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনের ৯ (১) ধারা এবং অন্য আসামিদের বিরুদ্ধে ৯ (১) এর ৩০ ধারায় অভিযোগ গঠন করা হয়।

সূত্র জানায়, গত বছরের নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে জামিনে বেরিয়ে আসেন বহুল আলোচিত ‘নারীখেকো’ সাফাত আহমেদ। এরপর অসুস্থতার ‘ভান’ করে হাসপাতালে ভর্তি হন।

এ সময় সাফাতের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

সেই ভিডিওতে দেখা যায়, ছেলে সাফাত তাঁর বাবা দিলদারের সঙ্গে তীব্র বাদানুবাদে জড়িয়ে পড়েন। বিভিন্ন নারী দিয়ে তাকে যৌনকর্মে লিপ্ত হতে বাবার কূটকৌশলেরও ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

মূলত এ ঘটনার পর সাফাতকে সুকৌশলে আবারও নিজের কব্জায় নেন দিলদার। গোপন সমঝোতার মাধ্যমে বিদেশ পাঠানোরও তোড়জোড় শুরু করেন।

কিন্তু বেঁকে বসে উচ্চ আদালত। এরপর বাবার জিম্মায় আবারও পুরনো নারী প্রীতিতেই মজেছেন সাফাত।

সূত্র মতে, ধর্ষণের শিকার দুই বিশ্ববিদ্যালয় তরুণীকে নানাভাবে হুমকি দিচ্ছেন সাফাত ও তাঁর ধুরন্ধর বাবা দিলদার। এতে করে এ ধর্ষণের বিচার আদৌ ওই তরুণী পাবেন কীনা এ নিয়েও নানা প্রশ্ন উঠেছে।

তবে ধর্ষকদের বিরুদ্ধে সরকারের কঠোর অবস্থান ওই দুই তরুণীর মাঝে নতুন আশার জন্ম দিয়েছে।

তাঁরা বলছেন, ‘আমাদের শেষ আশা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আমরা তাঁর কাছেই আমাদের ওপর পাষবিক নির্যাতনের বিচার চাই।’

কালের আলো/এসআর/এমএইচ

Print Friendly, PDF & Email