শুভ জন্মদিন, বিশ্বময় বিশ্বনেতা শেখ হাসিনা

প্রকাশিতঃ 10:04 am | September 28, 2020

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো :

সিদ্ধান্ত গ্রহণ, নেতৃত্বগুণ, মানবিকতা আর বিচক্ষণতায় নিজেকে অনন্য উচ্চাতায় নিয়ে গেছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নিজ রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও আপসহীন নেতৃত্বের মাধ্যমে দীর্ঘ ৩৯ বছর যাবত দেশের অসাম্প্রদায়িক এবং গণতান্ত্রিক রাজনীতির প্রধান নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছেন নিজেকে।

আরও পড়ুন: সাদামাটা, অনন্য শেখ হাসিনা; এক যুগ পর জন্মদিনে নিজ দেশে

বিশ্ব মন্দা পরিস্থিতির মধ্যেও গত কয়েক বছর ধরে দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখার পাশাপাশি তার নেতৃত্বে অর্থনীতির প্রতিটি সূচকে এগিয়ে গেছে দেশ। চমকে দিয়েছে গোটা বিশ্বকে।

একটি দল ও দেশকে নেতৃত্ব দেওয়ার মধ্যমে দেশের গণ্ডি ছাপিয়ে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে নিজের অবস্থানকে পাকাপোক্ত করতে যেমন সক্ষম হয়েছেন তেমনি নেতা থেকে হয়ে উঠেছেন বিশ্বনেতা। রাষ্ট্রপ্রধান থেকে হয়ে উঠেছেন রাষ্ট্রনায়ক।

আরও পড়ুন: শেখ হাসিনাকে ২১ বার হত্যার চেষ্টা, মানুষের দোয়া ও ভালোবাসায় বেঁচে গেছেন বারবার

মহিয়সী সেই প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ৭৪তম জন্মদিন আজ সোমবার (২৮ সেপ্টেম্বর)।

প্রধানমন্ত্রীর শুভ জন্মদিনে আনন্দে উদ্বেলিত কালের আলো পরিবারও। শুভ ক্ষণে আমাদের পক্ষ থেকেও ইতিহাসের মহানায়কের রাজনৈতিক উত্তরাধিকারকে বিনম্র অভিবাদন, শুভ জন্মদিন।

১৯৪৭ সালের এই দিনে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জন্ম হয় তার। তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বেগম শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের প্রথম সন্তান।

রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান হিসেবে ছাত্রজীবন থেকে প্রত্যক্ষ রাজনীতির সঙ্গে জড়িত হন শেখ হাসিনা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্র্যাজুয়েশন ডিগ্রি লাভকারী শেখ হাসিনা তৎকালীন ছাত্রলীগের অন্যতম নেতা ছিলেন।

টানা ৩৯ বছর সফলতার সঙ্গে নেতৃত্ব দিয়ে চলেছেন স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতৃত্বদানকারী, উপমহাদেশের প্রাচীনতম রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগকে।

কারাবরণ, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মৃত্যুর মুখোমুখি হয়ে অনেক চড়াই-উৎড়াই, ঘাত-প্রতিঘাত পেরিয়ে শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগকে এখনকার শক্ত অবস্থানে এনে দাঁড় করিয়েছেন।

তার নেতৃত্বে চারবার রাষ্ট্র ক্ষমতার মধ্যে বর্তমানে টানা তৃতীয় মেয়াদে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে। চার বার প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন। তিনবার ছিলেন বিরোধী দলের নেতা।

১৯৭৫ সালের পটপরিবর্তনের পর ১৯৮১ সালের ১৭ মে প্রায় ৬ বছরের নির্বাসিত জীবন শেষে দেশে ফিরে আওয়ামী লীগের দুঃসময়ে দলীয় প্রধানের দায়িত্ব নেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা।

সেদিন শেখ হাসিনা লাখো মানুষের ভালোবাসার সংবর্ধনায় বলেছিলেন, ‘সব হারিয়ে আমি আপনাদের মাঝে এসেছি। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশিত পথে তাঁর আদর্শ বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে জাতির জনকের হত্যার প্রতিশোধ গ্রহণে আমি জীবন উৎসর্গ করতে চাই।’

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করার সময় বিদেশে অবস্থানের কারণে তার দুই মেয়ে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা প্রাণে বেঁচে যান।

জাতির ইতিহাসের এ বিষাদময় ঘটনার সময় স্বামী পরমাণু বিজ্ঞানী ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়ার কর্মসূত্রে স্বামী ও বোন শেখ রেহানাকে নিয়ে জার্মানিতে অবস্থান করছিলেন শেখ হাসিনা।

পরে দীর্ঘ প্রবাসজীবন শেষে ভারত হয়ে ১৯৮১ সালের ১৭ মে মাতৃভূমিতে প্রত্যাবর্তন করেন তিনি। দেশে ফেরার আগেই ১৯৮১ সালের ১৪ থেকে ১৬ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত দলের জাতীয় কাউন্সিলে শেখ হাসিনাকে সর্বসম্মতিক্রমে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী নির্বাচিত করা হয়।

দেশে ফিরে আওয়ামী লীগের পুনর্গঠন ও পুনর্বাসনে নানামুখী উদ্যোগ নেন তিনি।

একই সঙ্গে জনগণের গণতান্ত্রিক এবং ভোট ও ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে অবিরাম সংগ্রাম শুরু করেন। তারই উদ্যোগে আওয়ামী লীগের সর্বস্তরের নেতাকর্মী-সমর্থকদের মধ্যে নতুন উদ্দীপনা দেখা দেয়। দেশবাসীও উজ্জীবিত হয় নতুন প্রেরণায়।

শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ স্বৈরাচারী শাসকদের বিরুদ্ধে তীব্র গণআন্দোলন গড়ে তোলে। তার নেতৃত্বেই দলটি দীর্ঘ প্রায় দুই যুগ ধরে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন-সংগ্রাম অব্যাহত রাখলে ১৯৯০ সালে স্বৈরশাসক এরশাদের পতন ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার হয়।

মানুষের ভোট ও ভাতের অধিকার আদায়সহ গণতান্ত্রিক আন্দোলন করতে গিয়ে কয়েকবার গৃহবন্দি হয়েছেন শেখ হাসিনা। ওয়ান-ইলেভেনের মাধ্যমে ক্ষমতাসীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ২০০৭ সালের ১৬ জুলাই গ্রেফতার হয়ে প্রায় ১১ মাস বিশেষ কারাগারে কারাবন্দিও ছিলেন তিনি।

তাঁর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ এ পর্যন্ত চারবার ক্ষমতাসীন হয়েছে। প্রথমবার ১৯৯৬ সালের ১২ জুনের নির্বাচনে জাতীয় সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে বিজয়ী হয়ে ২৩ জুন সরকার গঠন করে তারা।

দ্বিতীয়বার ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের ঐতিহাসিক নির্বাচনে আওয়ামী লীগসহ মহাজোট তিন-চতুর্থাংশ আসনে বিশাল জয় পেয়ে ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি সরকার গঠন করে।

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে বিশাল বিজয় নিয়ে ১২ জানুয়ারি দ্বিতীয় মেয়াদে সরকার গঠন করে। এরপর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে হ্যাট্টিক করেন শেখ হাসিনা। আবারো ক্ষমতায় আসীন করেন নিজ দল আওয়ামী লীগকে।

সেদিন কী বলেছিলেন শেখ হাসিনা?
১৯৮১ সালে দেশের মাটিতে ফিরে এলে ঢাকায় লাখো জনতা তাকে স্বাগত জানায়।

সেদিন শেরেবাংলা নগরে আয়োজিত সমাবেশে লাখো জনতার সংবর্ধনার জবাবে শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ‘সব হারিয়ে আমি আপনাদের মাঝে এসেছি; বঙ্গবন্ধুর নির্দেশিত পথে তাঁর আদর্শ বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে জাতির জনকের হত্যার প্রতিশোধ গ্রহণে আমি জীবন উৎসর্গ করতে চাই।’

‘পিতা-মাতা, ভাই রাসেল সকলকে হারিয়ে আমি আপনাদের কাছে এসেছি, আমি আপনাদের মাঝেই তাদেরকে ফিরে পেতে চাই।

আপনাদের নিয়েই আমি বঙ্গবন্ধুর নির্দেশিত পথে তার আদর্শ বাস্তবায়ন করে বাংলার দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফুটাতে চাই, বাঙালি জাতির আর্থ-সামাজিক তথা সার্বিক মুক্তি ছিনিয়ে আনতে চাই।’

এরপর থেকেই শুরু হয় শেখ হাসিনার নতুন করে সংগ্রামী পথ চলা। তার নেতৃত্বে দ্বিধাবিভক্ত আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ হয়ে বাংলাদেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ে সামরিক স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামে।

ভূষিত হয়েছেন যেসব পুরস্কারে
এই অঞ্চলে গণতন্ত্র, শান্তি ও মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং নারী শিক্ষার বিস্তার, শিশুমৃত্যুর হার হ্রাস ও দারিদ্র্য বিমোচনের সংগ্রামে অসামান্য ভূমিকা রাখার স্বীকৃতি হিসেবে দেশি-বিদেশি বেশ কিছু পুরস্কার ও সম্মানে ভূষিত হয়েছেন শেখ হাসিনা।

এরমধ্যে সাউথ-সাউথ ভিশনারি পুরস্কার-২০১৪, শান্তিবৃক্ষ-২০১৪, জাতিসংঘ পুরস্কার-২০১৩ ও ২০১০, রোটারি শান্তি পুরস্কার-২০১৩, গোভি পুরস্কার-২০১২, সাউথ-সাউথ পুরস্কার-২০১১, ইন্দিরা গান্ধী শান্তি পুরস্কার-২০১০, পার্ল এস. বার্ক পুরস্কার-২০০০, সিইআরইএস মেডাল-১৯৯৯, এম কে গান্ধী পুরস্কার-১৯৯৮, মাদার তেরেসা শান্তি পুরস্কার-১৯৯৮, ইউনেস্কোর ফেলিক্স হোফুয়েট-বোয়েগনি শান্তি পুরস্কার-১৯৯৮ প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। এছাড়া পরিবেশ সংরক্ষণে অসামান্য অবদানের জন্য জাতিসংঘের পরিবেশ বিষয়ক সর্বোচ্চ মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কার ‘চ্যাম্পিয়নস অব দ্য আর্থ’ পুরস্কারেও ভূষিত হয়েছেন শেখ হাসিনা।

মিয়ানমারের আরাকান রাজ্য থেকে পালিয়ে আসা প্রায় ১৫ লাখ রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে আশ্রয় দিয়ে ‘মানবতার মা’ (Mother of Humanity) আখ্যা পান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

কালের আলো/এমসি/এএ

Print Friendly, PDF & Email