দুই শিক্ষার্থীকে হত্যার ‘গুজব’ ছড়ালেন অভিনেত্রী নওশাবা, আ’লীগ অফিসে হামলায় আহত ১৭

প্রকাশিতঃ 8:18 pm | August 04, 2018

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো :

নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলন করছে শিক্ষার্থীরা। নিজেরাই সড়ক-মহাসড়কে অবস্থান করে সরকারি বেসরকারি যানবাহনের লাইসেন্স তল্লাশি করছে। লেনমেনে যান চলাচলে বাধ্য করছে। তাদের কড়া নজরদারি থেকে নুন্যতম ছাড় পায়নি সরকার দলীয় প্রভাবশালী মন্ত্রী থেকে শুরু করে প্রশাসনিক কর্মকর্তারাও।

এসব শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে সরকার প্রধান, বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা সব দাবি মেনে নিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীরাও শিক্ষার্থীদের ঘরে ফেরার আহবান জানিয়েছেন। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে শিক্ষার্থীরা বাড়ি ফিরছে না। তারা লাগাতার আন্দোলনের পথই বেছে নিয়েছেন।

সরকারের ধারণা, শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করে সরকার বিরোধীরা রাজনৈতিকভাবে ফায়দা লুটার মাধ্যমে সরকারকে বিপাকে ফেলতে চাচ্ছে। জামায়াত-বিএনপি চক্র সরকার পতনের দু:স্বপ্নও দেখছে। রাজধানী ঢাকাতে বেড়ে গেছে স্কুল ড্রেস বিক্রি। এসবের পাশাপাশি সমানতালে গুজব ছড়ানো হচ্ছে জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে। ঠিক এমনই গুজব ছড়িয়ে রীতিমতো আলোচনায় এসেছেন হালের অভিনেত্রী নওশাবা।

শনিবার (০৪ আগষ্ট) বিকেলে ফেসবুক লাইভে এসে ঝিগাতলায় এক শিক্ষার্থীর চোখ তুলে ফেলা হয়েছে এবং দুই শিক্ষার্থীকে মেরে ফেলা হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি। কিন্তু তাঁর এই বক্তব্যের সত্যতা মেলেনি। সরকার বিরোধী চক্রের এজেন্ডা বাস্তবায়নেই কী এই তারকা অভিনেত্রী এমন অপপ্রচার চালিয়েছেন কীনা এ নিয়েও প্রশ্ন ওঠেছে। তবে নিজের মোবাইল ফোন বন্ধ রাখায় এই বিষয়ে তাঁর বক্তব্য জানতে পারেনি কালের আলো।

ভাইরাল হওয়া ভিডিও ক্লিপে নওশাবা বলেছেন, ‘আমি কাজী নওশাবা আহমেদ, আপনাদের জানাতে চাই। একটু আগে ঝিগাতলায় আমাদেরই ছোট ভাইদের একজনের চোখ তুলে ফেলা হয়েছে এবং দুইজনকে মেরে ফেলা হয়েছে। আপনারা সবাই একসাথে হোন প্লিজ। ওদেরকে প্রোটেকশন দেন, বাচ্চাগুলো আনসেভ অবস্থায় আছে, প্লিজ। আপনারা রাস্তায় নামেন, প্লিজ রাস্তায় নামেন, প্লিজ রাস্তায় নামেন এবং ওদেরকে প্রোটেকশন দেন।’

তিনি বলেন, ‘সরকার প্রোটেকশন দিতে না পারলে আপনারা মা-বাবা, ভাই-বোন হয়ে বাচ্চাগুলোকে প্রোটেকশন দেন, এটা আমার রিক্যুয়েস্ট। এদেশের মানুষ-নাগরিক হিসেবে আপনাদের কাছে রিক্যুয়েস্ট করছি যে, ঝিগাতলায় একটি স্কুলে একটি ছাত্রের চোখ তুলে ফেলা হয়েছে এবং দুইজনকে মেরে ফেলা হয়েছে এবং ওদের অ্যাটাক করা হয়েছে। ছাত্রলীগের ছেলেরা সেটা করেছে। প্লিজ ওদের বাঁচান প্লিজ। তারা ঝিগাতলায় আছে।’

প্রশ্ন ওঠেছে, অভিনেত্রী নওশাবার ছড়ানো এই গুজবের সঙ্গে রাজধানীর ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ অফিসে হামলার ঘটনার সম্পৃক্ততা থাকতে পারে। এদিন দুপুর দেড়টার দিকে প্রায় দুই শতাধিক তরুণ ধানমন্ডি ৩/এ অফিসে লাঠিসোটা ও ইটপাটকেল ছুঁড়ে হামলা চালায়। এরপরই গোয়েবলসীয় কায়দায় এমন অপপ্রচার চালান বিতর্কিত এই অভিনেত্রী।

জানা যায়, শনিবার (০৪ আগষ্ট) দুপুরে রাজধানীর সায়েন্স ল্যাবরেটরি এলাকায় শিক্ষার্থীদের পোশাক পরা কিশোর ও তরুণরা সড়কে অবস্থান নিয়ে অবরোধ তৈরি করে। এর কিছুক্ষণ পরই ‘এক জনের পায়ের রগ কেটে দেয়া হয়েছে’ এমন গুজব ছড়ানো হয়। পরে মাইক গিয়ে ঘোষণা করা হয়, ‘আমাদের এক ভাইয়ের ওপর হামলা হয়েছে জিগাতলায়। তোমরা সবাই সেদিকে চলো।’

এ সময় দুই শতাধিক তরুণ দৌড়ে জিগাতলার দিকে আসতে থাকে। আসতে আসতে তরুণরা রাস্তার পাশের গাছের ডাল ভাঙতে থাকে। তারা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের দিকে এগিয়ে যেতে থাকে এবং সেখানে উপস্থিত কর্মীদেরকে ধাওয়া দেয়। অফিসে ঢোকার আগে মূল রাস্তায় তাদেরকে বাধা দিলে হামলাকারীরা ইটপাটকেল ছুড়তে থাকে।

পরে কার্যালয়ের ভেতরে থাকা কর্মীরা বের হয়ে পাল্টা ধাওয়া দেয়। এ সম দুই পক্ষে এক ঘণ্টাব্যাপী ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলতে থাকে। শিক্ষার্থীদের হামলায় আওয়ামী লীগের ১৭ নেতা-কর্মী আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন বলে প্রেস ব্রিফিংয়ে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের দাবি করেন।

কালের আলো/এসটি/এএ

Print Friendly, PDF & Email