স্বমহিমায় নারী পুলিশ, প্রশংসায় আইজিপি

প্রকাশিতঃ 10:58 pm | July 28, 2018

বিশেষ প্রতিবেদক, কালের আলো:

সময়টা ১৯৭৪ সাল। দু:সাহসী ও চ্যালেঞ্জ নেওয়া ১৪ জন নারী নিয়ে পুলিশে পদযাত্রা শুরু হলো নারীদের। সময়ের বহমান স্রোতে চ্যালেঞ্জ নিয়েই বর্তমানে বাংলাদেশ পুলিশে কাজ করে যাচ্ছেন ১১ হাজারের ওপর নারী। অর্থাৎ, পুলিশে মোট জনবলের শতকরা সাড়ে ৭ ভাগ হচ্ছেন নারী।

খোলা চোখে এই সংখ্যা অনেক কম মনে হলেও বাস্তবে কাজের দিক থেকে সংখ্যাটা কম নয় মোটেও! নেতিবাচক সব দৃষ্টিভঙ্গি জয় করে পুলিশে আসা এসব নারী সদস্যরা নিজেদের সংসার সামলানোর পাশাপাশি অপরাধ দমন ও নিরাপত্তা সব দিক থেকেই পুরুষ সদস্যের চেয়ে কোন অংশে কম নন। নিজেদের যোগ্যতাতেই বাড়িছেন সুনাম ও সাফল্য।

বাহিনীতে উচ্চপদে আসীন থেকে নিজ নিজ দায়িত্ব সুচারুরূপে পালন করা, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশন বলুন কিংবা সড়কে আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধক হিসেবেই বলুন বৈষ্যমহীনভাবেই গুরুত্বপূর্ণ সব দায়িত্ব পালনেই মুন্সীয়ানার স্বাক্ষর রেখেছে এই নারীরাই।

ফলশ্রুতিতে বাহিনীর প্রধান হিসেবে নারী পুলিশ সদস্যদের দক্ষতা ও সুনামের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছেন ড.মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী বিপিএম (বার)। একই সঙ্গে তিনি বলেছেন, পুলিশ বাহিনীকে একটি জেন্ডার সংবেদনশীল প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের কথাও।

শনিবার (২৮ জুলাই) সন্ধ্যায় রাজধানীর মিরপুরে পিএসসি কনভেনশন হলে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ পুলিশ উইমেন নেটওয়ার্ক (বিপিডব্লিউএন) এর নবগঠিত কার্যনির্বাহী কমিটির ২০১৮-২০২০ সালের অভিষেক অনুষ্ঠানে ‘নারী বান্ধব পুলিশ’ এই নীতির কথা অমিত দৃঢ়তায় উচ্চারণ করেন আইজিপি।

তিনি বলেন, ‘ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশে (ডিএমপি) উইমেন সাপোর্ট এন্ড ইনভেস্টিগেশন ডিভিশন গঠন করা হয়েছে। ৭টি মেট্রোপলিটন পুলিশ ইউনিটসহ পার্বত্য রাঙ্গামাটি জেলায় ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে।’

দেশের থানাসমূহকে নারী ও শিশু বান্ধব হিসেবে গড়ে তোলা হচ্ছে জানিয়ে এই পুলিশ মহাপরিদর্শক বলেন, ‘জেলা পুলিশ সুপারের (এসপি) কার্যালয়গুলোতে নারী সহায়তা কেন্দ্র ও থানায় শিশু হেল্পডেস্ক কার্যক্রম চালু করা হয়েছে। নারী পুলিশের সমন্বয়ে গঠিত ১১ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন সুনামের সাথে দায়িত্ব পালন করছে। শান্তিরক্ষা মিশনেও তারা অনন্য অবদান রাখছে।’

জানা গেছে, পুলিশের উচ্চপদেও আপন যোগ্যতায় অধিষ্ঠিত হচ্ছে নারীরা। আর এর সূচনা ঘটে ১৯৮৪ সালের দিকে। ওই বছর প্রথম ক্যাডারে নিয়োগ পেয়ে ৫ জন নারী পুলিশ কাজে যোগদান করেন। এরমধ্যে ফাতেমা বেগম অতিরিক্ত আইজি হয়ে ইতোমধ্যেই অবসরে গেছেন।

পরবর্তীতে দ্বিতীয় ব্যাচ ১৯৮৫ সালের পর প্রায় ১৪ বছর পুলিশ বাহিনীর ঊর্ধ্বতন পদে নারী পুলিশ কর্মকর্তাদের নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ থাকে। ১৯৯৬ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এসে নারী পুলিশ কর্মকর্তাদের নিয়োগ চালু করেন। ১৯৯৯ সালে ১৮তম বিসিএসে ৮ জন নারী সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) হিসেবে যোগদানের মাধ্যমে পুলিশ ক্যাডারে নারীদের প্রবেশাধিকার আবার উন্মুক্ত হয়।

পুলিশে নারীর অভিষেকের বিষয়ে পুলিশ প্রধান ড.মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী কৃতজ্ঞতা চিত্তে স্মরণ করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদানের কথা। তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর দূরদর্শী নেতৃত্বে ১৯৭৪ সালে মাত্র ১৪ জন নারী নিয়ে পুলিশের নারীর পদযাত্রা সূচিত হয়। আজ পুলিশে নারীর সংখ্যা প্রায় এগারো সহস্রাধিক। তাঁরা আজ স্বমহিমায় সমুজ্জ্বল।’

বাংলাদেশ পুলিশ উইমেন নেটওয়ার্ক (বিপিডব্লিউএন) নারী পুলিশের পেশাদারিত্ব ও দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে উল্লেখ করে আইজিপি বলেন, ‘এই সংগঠনের কর্মকর্তারা আন্তর্জাতিক সংগঠনে বাংলাদেশ পুলিশের প্রতিনিধিত্ব করছে। এতে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে।’

বিপিডব্লিউএন’র ৩৩ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি
বাংলাদেশ পুলিশ উইমেন নেটওয়ার্কের (বিপিডব্লিউএন) ৩৩ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠিত হয়েছে। ২০১৮ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত এই কমিটির নেতৃত্বে থাকবেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার আমেনা বেগম বিপিএম ও স্পেশাল ব্রাঞ্চের বিশেষ পুলিশ সুপার ফরিদা ইয়াসমিন। তাঁরা এই সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।

কালের আলো/এসএস/এএ

Print Friendly, PDF & Email