প্রধান বিচারপতির ছুটি নিয়ে উদ্বেগ তারা নিজেরা তৈরি করেছেন: অ্যাটর্নি জেনারেল
প্রকাশিতঃ 9:59 pm | October 04, 2017
প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার ছুটিতে যাওয়া নিয়ে যারা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, সে উদ্বেগ তারা নিজেরা তৈরি করেছেন বলে মন্তব্য করেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।
‘প্রধান বিচারপতির ছুটি নিয়ে সিনিয়র আইনজীবীরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন’, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীনের এই বক্তব্যের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে বুধবার (৪ অক্টোবর) সুপ্রিম কোর্টে নিজ কার্যালয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘এ উদ্বেগ তারা নিজেরা-নিজেরাই তৈরি করেছেন। আমাদের আইনজীবীদের দেখতে হবে আদালত ঠিকমত চলছে কিনা। আদালতের কার্যাক্রম ঠিকমত হচ্ছে। কাজেই এখানে উদ্বেগের কী থাকবে?’
আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগের বেঞ্চ পুনর্গঠনের বিষয়ে জানতে চাইলে মাহবুবে আলম বলেন, ‘আমাদের দায়িত্ব প্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি যিনি আছেন আব্দুল ওয়াহহাব মিয়া, তিনি যদি মনে করেন বেঞ্চ রদবদল করবেন, তাহলে তিনি করতে পারবেন। এটা স্বাভাবিক নিয়মে সবসময় যেভাবে হয় সেভাবেই হবে।’ এতে কোনও অসুবিধা নেই বলেও জানান অ্যাটর্নি জেনারেল।
তিনি বলেন, ‘আজকে (বুধবার) পাঁচ বিচারপতির একটি বেঞ্চে কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে। তাতে ১০০ মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। একজন বিচারপতির জন্য বিচার বিভাগ থেমে থাকে না।’
আরেক প্রশ্নের জবাবে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা বলেন, ‘কোনও বিচারপতি ছুটিতে গেলে সেটা নিয়ে রাজনীতি করার তো কিছু নাই। আমি আগেও বলেছি, যারা রাজনীতি করছেন, তারা স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে করছেন।আমাদের বার অ্যাসোসিয়েশন একটি রাজনৈতিক দলের কব্জা হয়ে গেছে। তারা সেই দলের নানারকম কার্যালয় চালিয়ে যাচ্ছে। কাদের মোল্লার স্ত্রী-স্বজনদের নিয়ে বারের অডিটোরিয়াম ব্যবহার করা, যু্দ্ধাপরাধের মামলার বিপক্ষে অবস্থান নেওয়া,এটা কি কোনও সুস্থ মানসিকতার লক্ষণ? এটাতো তারা করেছেন!’
প্রধান বিচারপতি অসুস্থতার কারণ উল্লেখ করে ছুটি নিয়েছেন। তার শারীরিক অবস্থা কী, তা জেনেছেন কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে মাহবুবে আলম বলেন, ‘এটাতো আমার দায়িত্ব না। প্রধান বিচারপতি কোথায় থাকবেন, কোথায় আছেন, সেটাতো আমার দায়িত্ব না। আমার দায়িত্ব আদালতের মামলা করা। এ বিষয়ে যারা বেশি উৎসাহী তারা খুঁজে দেখুক।’
এক সাংবাদিক প্রশ্ন রাখেন, ‘প্রধান বিচারপতি কোথায় আছেন, সেটা আমার জানার কথা না’ আপনার এমন বক্তব্যে আইনজীবী সমিতির সভাপতি বলেছেন ‘তিনি রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা, তিনিই যদি না জানেন, তাহলে অন্য কারও পক্ষে জানা সম্ভব কিনা।’
এ প্রসঙ্গে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘আমার এ বক্তব্যকে সম্পূর্ণভাবে ভুল ব্যাখ্যা করা হয়েছে এবং এটা নিয়ে তারা অতিরঞ্জিত করে বক্তব্য দিচ্ছেন।’
তিনি বলেন, ‘আমি সকাল নয়টায় কোর্টে আসি। প্রায়ই রাত নয়টা পর্যন্ত আমাকে থাকতে হয়। আমি তো কারও দারোয়ান না। কে কোথায় আছে, না আছে বা আজকে কোন বিচারপতি আসলেন না বা বিচারপতি কোথায় গেলেন। এই খোঁজ খবর নেওয়ার দায়িত্ব তো আমার না।’ বলেন মাহবুবে আলম।
পাঁচ বিচারপতির আপিল বিভাগে মামলার জট বাড়বে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মূলত নিম্ন আদালত থেকে মামলার জট শুরু হয়। আপিল বিভাগে কোনও মামলা পেন্ডিং আছে, সেজন্য রাষ্ট্রের কোনও কাজ ব্যাহত হয়েছে, এ রকমতো কোনও ঘটনা ঘটেনি। যে মামলাগুলো তাড়াতাড়ি শুনানি করা দরকার, সেগুলো তো আমরা মেনশন করে তাড়াতাড়ি শুনানি করি।’
নিম্ন আদালতের বিচারকদের শৃঙ্খলাবিধির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এটা যখন আসবে তখন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা কোর্টকে জানাবো। কোর্টের সিদ্ধান্ত আবার মন্ত্রণালয়ে জানাবো।’
এদিকে আইনজীবী সমিতির সভাপতি জয়নুল আবেদীন সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘আমি এবারের সভাপতি। সাধারণ আইনজীবীরা আমাদের ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছেন। দলীয় ভিত্তিতে কার্যাক্রম পরিচালিত করার জন্য নয়। এখানে আমি আইনের শাসনকে সম্মানিত করার জন্য কাজ করবো।’
প্রধান বিচারপতি অসুস্থতার কারণ উল্লেখ করে যে ছুটি নিয়েছেন সে প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘প্রধান বিচারপতি ক্যান্সারের রোগী, এটা সরকার পক্ষ গতকাল (মঙ্গলবার) বলেছেন। আমরা এ বিষয়ে কোনও সার্টিফিকেট পাইনি। এমনকি প্রধান বিচারপতির কোনও বক্তব্যও পাইনি।’
ছুটি নিতে প্রধান বিচাপতিকে বাধ্য করা হয়েছে এমন বক্তব্য কিসের ভিত্তিতে দিয়েছেন, জানতে চাইলে জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘যেখানে প্রধান বিচারপতি আমাদের দাওয়াত করে পরে কোনও কিছু না জানিয়ে চলে গিয়েছেন। এর ফলে সাধারণ আইনজীবীরা যেটা মনে করছে, সেটাই আমরা আপনাদের কাছে প্রকাশ করেছি।’
আরেক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন,‘রাষ্ট্রের অবস্থা আমিতো বলতে পারবো না। আমি এখানের (সুপ্রিম কোর্টের) অবস্থা জানি। এখানে আইনজীবীদের মধ্যে একটা উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে। যেহেতু প্রধান বিচারপতি আমাদের দাওয়াত করে চলে গিয়েছেন। এ রকম ঘটনা অতীতে ঘটেনি।’