কিট নিয়ে ডা. জাফরুল্লাহর অভিযোগের উত্তর দিলো স্বাস্থ্য অধিদপ্তর
প্রকাশিতঃ 2:35 pm | April 27, 2020

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র উদ্ভাবিত করোনা নির্ণায়ক কিট নিয়ে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর অভিযোগ মিথ্যা বলে দাবি করেছে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর। এর স্বপক্ষে গণস্বাস্থ্যের চিঠিতেই তাদেরকে শুরু থেকে সহযোগিতা করার প্রমাণ রয়েছে বলেও জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
এছাড়া তারা জানিয়েছে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডাব্লিউএইচও) বিশ্বের কোনো দেশেই করোনাভাইরাস পরীক্ষায় উদ্ভাবিত র্যাপিড কিট অনুমোদন দেয়নি বলে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র উদ্ভাবিত কিট সরকার গ্রহণ করেনি।
সোমবার (২৭ এপ্রিল) বেলা সাড়ে ১২ টায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মাহবুবুর রহমান এসব তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রকে সর্বাত্মক সহযোগিতায় প্রস্তুত ছিলাম, এখনও আছি।
গণস্বাস্থ্যের কিট হস্তান্তর অনুষ্ঠানে না যাওয়া প্রসঙ্গে মাহবুবুর রহমান বলেন, গাইডলাইন না মেনে অনুষ্ঠানের আয়োজন করে গণস্বাস্থ্য। যে কোনো আবিষ্কারের বিষয়টি পরীক্ষা শেষেই যথাযথ অনুমোদন নিতে হয়। সেটি না করেই হন্তান্তর অনুষ্ঠান করা হয়েছে। এ কারণে ওই অনুষ্ঠানে যাওয়া হয়নি।
তিনি বলেন, গণস্বাস্থ্যের হস্তান্তর অনুষ্ঠানটি মূল কিটের ছিল না। সেটি ছিল পরীক্ষামূলক কিটের হস্তান্তর। কিট তৈরির পুরো প্রক্রিয়া শেষেই হস্তান্তরের অনুরোধ করা হয়েছিল।
ঘুষ প্রসঙ্গে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর অভিযোগের জবাবে মাহবুবুর রহমান বলেন, ড. জাফরুল্লাহ’র বক্তব্য আপত্তিকর। অসত্য তথ্য উপস্থাপন করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরকে হেয় প্রতিপন্ন করেছেন তিনি।
‘উনারা বলছে, শতভাগ সফল। শতভাগ হোক, ৯০ ভাগ হোক, যতভাগই হোক- সেটি আমাদের ট্রায়াল করতে হবে। এটি ১০০ অথবা ২০০ মানুষের মধ্যে দেখতে হবে যে কতজন পজিটিভকে করলে পজেটিভ হয়, কতজন নেগেটিভকে করলে নেগেটিভই হয়। কোন দিনে পজিটিভ হয়, সেগুলোর একটা নির্ধারিত প্রটোকল ডেভেলপ করতে হবে। এই বিএমআরসি থেকে অ্যাপ্রুভ করতে হবে এবং আমাদের কমিটির মাধ্যমে সেটি অ্যাপ্রুভ করতে হবে। সেই প্রটোকলের মধ্যে উনারা পারফরমেন্স ট্রায়াল করে আমাদেরকে রিপোর্ট দেবে। পরে এটা আমরা ইভাল্যুয়েশন করে রিপোর্ট দেব। কিন্তু এটি মনে হচ্ছে লম্বা একটা পরিক্রমা, অনেক জায়গায় যাওয়া। সেটি কিন্তু না। আমরা অনলাইনেও এখন অনুমোদন দিচ্ছি।’
মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘উনি (ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী) অত্যন্ত বয়োজ্যেষ্ঠ মানুষ, সম্মানের সঙ্গে বলছি, প্রথম ১৮ তারিখ উনারা কাঁচামাল আনার আনুমোদন চেয়েছিলেন। আমরা ১৯ তারিখে অনুমোদন দিয়েছি। তারপরও বিভিন্ন মিডিয়াতে উনি কিন্তু বলেছেন যে সাত দিন ধরে আমরা চাচ্ছি। সাত দিন আমাকে পিছিয়ে দিল-এটি সঠিক নয়। আমরা কিন্তু দুই তিনটা দৈনিকে প্রতিবাদ দিয়েছিলাম। আপনারা দেখেছেন। উনি যেটা বলছেন সেটা সঠিক নয়। উনারা ১৮ তারিখে বলেছিলেন, আমরা ১৯ তারিখে দিয়েছি। কীভাবে উনাদের সহযোগিতা করেছি সম্পূর্ণ ডকুমেন্ট আমরা দিলাম।’
‘এরপরেও আমাদের প্রতিষ্ঠান এবং ব্যক্তিগতভাবেও উনি সংবাদমাধ্যমে, সংবাদ সম্মেলন করে, বিভিন্ন সময় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং আমাদের ঔষধ প্রশাসন -তাদেরকে উনি হেয় প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করেছেন’ বলেন ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক।
তিনি আরও বলেন, ‘আমি বিনয়ের সঙ্গে বলতে চাই আমাদের দেশের এই মুহূর্তে প্রত্যেক মানুষের সহযোগিতা খুব দরকার। তাদেরও দরকার, গণস্বাস্থ্যের সহযোগিতা আমাদের দরকার। তাদের আমাদের সহযোগিতা দরকার। আমাদের গণমাধ্যম, দেশের মানুষ-সবাই মিলে, কিন্তু এই প্রবলেমগুলো সলভ করতে হবে। এইখানে যদি অযাচিতভাবে, অসত্য তথ্য উপস্থাপন করে মানুষকে তথা প্রতিষ্ঠানকে হেয় প্রতিপন্ন করার চেষ্টা চালানো হয়, সেটি অত্যন্ত দুঃখজনক, এটি আমি প্রত্যাখ্যান করছি।’
‘আমি অনুরোধ করবো, এই ধরনের অপপ্রচার যেন না চালানো হয়। তিনি (ডা. জাফরুল্লাহ) একজন বয়োজ্যেষ্ঠ মানুষ, তার কাছ থেকে আমার বিজ্ঞানভিত্তিক এবং সৌজন্যমূলক দৃষ্টিভঙ্গি এবং কথাবার্তা আমরা আশা করব’ যোগ করেন মাহবুবুর রহমান।
কোন ধরনের কিট দিয়ে করোনার পরীক্ষা হচ্ছে জানিয়ে মহাপরিচালক বলেন, ‘কিটের ব্যাপারে বলা হচ্ছে, টেস্ট, আইসোলেট এবং কন্টাক্ট ট্রেসিং। কিন্তু কোন ধরনের টেস্টের কথা বলা হচ্ছে। টেস্ট বলা হচ্ছে আর্টিফিসিয়াল টেস্ট। সারা পৃথিবীব্যাপী আর্টিফিসিয়াল কিটের সংকট আছে। র্যাপিড টেস্ট কিটের সংকট নেই সারা পৃথিবীতে। হাজার হাজার কোম্পানি র্যাপিড টেস্ট কিট তৈরি করেছে।’
তিনি বলেন, ‘১৮টা র্যাপিড টেস্ট কিটের আবেদন এখনো অধিদপ্তরে রয়েছে জানিয়ে মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘যেহেতু ডব্লিউএইচও রিকমেন্ডেট করে না। এজন্য র্যাপিড টেস্ট কিট এখনো আমাদের দেশে চালু হয়নি। বরং আমাদের দেশে নির্ভরশীল যে টেস্ট কিট, সেটি হচ্ছে আর্টিফিসিয়াল মাধ্যম। আপনারা জানেন যে ২৫টি জায়গায় সেটি শুরু হয়েছে সারা দেশব্যাপী এবং ক্রমান্বয়ে এটা বাড়তে থাকবে।’
‘আমাদের বেসরকারি প্রতিষ্ঠান নিয়ে আসছে, আমাদের গার্মেন্টস যারা তারা ৪টা আর্টিফিসিয়াল নিয়ে আসবেন। এভাবে আর্টিফিসিয়াল আমাদের প্রচলন হচ্ছে। যেটা কিনা স্পেসিফিক রিপোর্ট দেয়। এন্টিবডি টেস্ট কিন্তু সেটা দেয় না’ যোগ করেন ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক।
কালের আলো/বিএআর/এমএম