শুরুতেই শেষ মেধাবী চার প্রকৌশলীর স্বপ্নযাত্রা

প্রকাশিতঃ 1:08 pm | March 31, 2018

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো :

সবার আগে মারা গিয়েছিল তৌহিদুল। জীবনের সঙ্গে লড়াই করে এরপর হেরে গেছেন শাহীন। শত চেষ্টা করেও বাঁচানো যায়নি হাফিজুর বা দীপ্তকেও। ওরা চারজনই খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী। পড়াশুনা জীবনের সফল সমাপ্তির আগেভাগে কর্মমুখর জীবনে প্রবেশের দ্বারপ্রান্তে স্কয়ার গ্রুপের একটি টেক্সটাইল মিলে এক মাসের ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যাটাচমেন্টের (ইন্টার্ন) জন্য ময়মনসিংহের ভালুকার মাস্টারবাড়ি এলাকার একটি ৬তলা ভবনের তৃতীয় তলায় অবস্থান করছিলো ওরা।

কিন্তু ভবনটির গ্যাস লাইনে ত্রুটি থাকার কারণে শনিবার (২৪ মার্চ) দিনগত রাত ১টার দিকে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় একে একে প্রাণ হারায় এ চার মেধাবী প্রকৌশলী। ওদের মৃত্যুর মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশ চিরতরে হারিয়েছে চার মেধাবী প্রকৌশলীকে।

বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতোই নিভে গেছে ওদের জীবন প্রদীপ। দারিদ্র্যের অন্ধকার ঘর থেকে ওঠে আসা এসব মেধাবীর চোখে-মুখে ছিল স্বপ্নজয়ের প্রত্যয়। কিন্তু শুরু হতে না হতেই থেমে গেছে তাদের স্বপ্নযাত্রা। তাদের হারিয়ে কাঁদছে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট)। কাঁদছে বিবেকবান প্রতিটি মানুষ। তাদের এমন মৃত্যু মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে বন্ধু, সহপাঠী, বড় ভাই, বিশ্ববিদ্যালয় আর পরিবারের সদস্যদের।

শাহীনের বাবা বেলাল হোসেন ছিলেন দিনমজুর। নিজের সন্তানের সোনালি ভবিষ্যতের স্বপ্ন নিয়ে অনেক কষ্টে এতোদূর নিয়ে এসেছিলেন শাহীনকে। আর মাত্র ক’টা দিন। এরপর ছেলের পড়াশুনা শেষ হতো। চাকরি করে সংসারের হালও ধরতো। কিন্তু শুরুতেই হয়ে গেছে সব শেষ। ফলে নওগাঁর মান্দা উপজেলার বান্দাইপুর গ্রামের বেলাল হোসেনের চিরস্থায়ী সঙ্গী হয়ে রইলো কান্না।

এলাকার মানুষ গর্ব করতো হাফিজুরকে নিয়ে। মান্দা উপজেলার পরাণপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও মান্দা মমিন শাহানা ডিগ্রি কলেজ থেকে এইচএসসিতে জিপিএ ৫ পেয়ে কৃতিত্বের সঙ্গেই পথ চলছিলো এ মেধাবী প্রকৌশলী। কিন্তু বড্ড অবেলাতেই নিভে গেলো ওর জীবন প্রদীপ।

অনেক আগেই বাবাকে হারিয়েছেন দীপ্ত সরকার। মাথার ঘাম পায়ে ফেলে তাকে মানুষ করে তুলেছিলেন বিধবা মা। মাগুরার শালিখা উপজেলার তালঘড়ি ইউনিয়নের দিঘল গ্রামের দীপ্ত সরকারকে হারিয়ে অঝোরে কাঁদছেন মা। এ সন্তানকে নিয়ে কতই না স্বপ্ন ছিল তাঁর। মায়ের সেইসব স্বপ্ন পূরণ করার আগেই শেষ হয়েছে দীপ্ত’র স্বপ্নযাত্রা। শাহীন, দীপ্ত ও হাফিজুরের আগে সেদিন বিস্ফোরিত ভবনের ভেতরেই মারা গিয়েছিলেন তৌহিদুল।

চার মেধাবী প্রকৌশলীর এভাবে চিরতরে পৃথিবীকে বিদায় জানানোয় ঘটনায় শোকস্তব্ধ খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট)। শনিবার (৩১ মার্চ) থেকে আগামী সোমবার (০২ এপ্রিল) তিন দিনের শোক ঘোষণা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
চার মেধাবীর চিকিৎসায় কুয়েট কর্তৃপক্ষের অবহেলার অভিযোগ।

এদিকে, চার মেধাবী প্রকৌশলীর চিকিৎসায় খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট) কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অবহেলার অভিযোগ উঠেছে। এমন অভিযোগ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ১৩তম ব্যাচের সাবেক জিএস ইয়াসিন আরাফাত।

তিনি সাংবাদিকদের বলেছেন, কুয়েট কর্তৃপক্ষ ওদের চিকিৎসায় চরম অবহেলার পরিচয় দিয়েছেন। এসব শিক্ষার্থীর চিকিৎসার জন্য প্রায় ৬ লাখ টাকা খরচ করা হয়েছে। যার মধ্যে মাত্র ৫০ হাজার টাকা কুয়েট প্রশাসন দিয়েছে। বাকি টাকা কুয়েট শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে সহযোগিতা নেওয়া হয়েছে।’ নিহতদের পরিবারকে এক কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়ার দাবি জানান এ শিক্ষার্থী।

কালের আলো/আরএস/এএ

Print Friendly, PDF & Email