ঢাকায় গ্যাং কালচার বলতে কিছু থাকবে না : ডিএমপি কমিশনার
প্রকাশিতঃ 12:46 pm | September 07, 2019

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:
ঢাকা শহরে গ্যাং কালচার বলতে কিছু থাকবে না বলে হুশিয়ারি দিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া।
তিনি বলেছেন, কিশোর গ্যাং বলি আর বড় গ্যাং বলি ঢাকায় গ্যাং বলে কোনো শব্দ থাকবে না। সবাইকে নিশ্চিহ্ন করা হবে।
শনিবার(৭ সেপ্টেম্বর) হোসেনী দালানের ইমামবাড়ায় সংবাদ সম্মেলনে তাজিয়া মিছিলে প্রতিবছর কিশোর গ্যাংয়ের কারণে বিশৃঙ্খলা হয়। তাদের বিষয়ে পুলিশের কোনো পদক্ষেপ থাকবে কি না- এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, গ্যাং কালচারের বিরুদ্ধে ডিএমপি শূন্য সহিষ্ণু নীতি অবলম্বন করেছে। ঢাকায় কোনো গ্যাং থাকবে না। এ ছাড়াও অন্য কাউকেও মিছিলে নাশকতা করতে দেয়া হবে না।
এর আগে কমিশনার ইমামবাড়ার নিরাপত্তা ব্যবস্থা পরিদর্শন করেন।
আছাদুজ্জামান মিয়া জানান, আশুরা উপলক্ষে তাজিয়া মিছিলকে কেন্দ্র করে রাজধানীর হোসাইনী দালান, ইমামবাড়া, মিরপুর, বড় কাটারা, ছোট কাটারা ও মোহাম্মদপুর এলাকায় মহরমের ৬ থেকে ৯ তারিখ পর্যন্ত নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। রাজধানীর প্রত্যেকটি ইমামবাড়া সিসিটিভি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। যারা শ্রদ্ধা জানাতে আসবেন তাদের প্রত্যেককে আর্চওয়ে ও মেটাল ডিটেক্টরে তল্লাশী হয়ে আসতে হবে।
তিনি আরও জানান, মিছিলে কোনো ধরনের ধাতব বস্তু, চোরা-তরবারি, বর্ষা বা আগুনের কোনো বস্তু আনা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ থাকবে। আমরা মিছিলে এসব বস্তু বহন করতে দেব না। যে নিশান ব্যবহার করা হয় সে নিশান ১২ ফুট এর বেশি উচ্চতা হবে না। এর বড় কারণ হল ইলেকট্রিক ও টেলিফোনের তার এর সঙ্গে লেগে দুর্ঘটনার সম্ভাবনা রয়েছে। সুতরাং আমরা সকলের সঙ্গে বারংবার আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিয়েছি নিশান ১২ ফুট এর উপরে হবে না। মিছিল যে রাস্তা দিয়ে যাবে সে রাস্তাগুলোতে আমাদের চেকপোস্ট থাকবে। রুটগুলোতে আমাদের সদস্যরা পর্যবেক্ষণের দায়িত্ব থাকবে।
‘শোক মিছিলে যারা যোগ দেবে তাদেরকে শুরু থেকেই যোগ দেওয়ার অনুরোধ করছি আমরা। কারণ পথিমধ্যে অলিগলি থেকে যোগ দেওয়া আমাদের নিরাপত্তার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। সুতরাং এটাকে আমরা অ্যালাউ করবো না। তাই সকলের প্রতি অনুরোধ, যারা মিছিলে অংশ নেবেন তারা শুরুতে আসলে আমরা তাদের পরিচয় জানতে পারবো এবং এর মাধ্যমে মূল মিছিলে শরীক হওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে। মিছিলে উচ্চশব্দে যেকোনো ধরনের বাদ্যযন্ত্র সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এটি সম্পূর্ণ শোকের মিছিল সুতরাং যে কোনো ধরনের বাদ্যযন্ত্র উৎসব-আনন্দ নিষিদ্ধ থাকবে।’ যোগ করেন ডিএমপি কমিশনার।
কমিশনার বলেন, আপনারা জানেন এক সময় পাইকরা মিছিলে অংশ নিয়ে ব্লেড দিয়ে শরীরের বিভিন্ন অংশ কেটে শোক প্রকাশ করত। এতে বিশৃংখলা ও এক ধরনের ভীতি সৃষ্টি হত। তাই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি কোনো ধরনের পাইক মিছিলে অংশ নিতে পারবে না। মিছিল চলাকালীন সময়ে ইমামবাড়া গুলোতে আমাদের স্পেশাল ব্রাঞ্চ এবং কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের ডগস্কয়ার্ড দ্বারা সম্পূর্ণ সুইপিং করা হবে। নিরাপত্তা যেন বিঘ্নিত না হয় সে বিষয়টিকে মাথায় রেখে আমরা মিছিলগুলোকে পরিচালনা করব।
মিছিলে অংশগ্রহণকারীদের প্রতি নির্দেশনা দিয়ে কমিশনার বলেন, ‘যারা ইমাম পাড়ার মধ্যে ঢুকবেন তারা কেউ পোটলা ব্যাগ অথবা ধারালো ছুরি নিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতে পারবেন না। যেসব জায়গা দিয়ে মিছিলটা যাবে সেসব জায়গার ফুটপাতগুলো আমরা পরিষ্কার রাখব এবং রাস্তায় কোনো ধরনের প্রতিবন্ধকতা থাকবে না। এরইমধ্যে আমরা সিটি করপোরেশনকে অনুরোধ করেছি এবং আমাদের ক্রাইম টিমকে অনুরোধ করেছি সব ধরনের প্রতিবন্ধকতা অপসারণে। মিছিল চলাকালে কোনো আতশবাজি বা পটকা ব্যবহার করা যাবে না। কোনো পাঞ্জা লড়াও যাবে না। এতে বিশৃঙ্খলা হয়।
এর আগে শুক্রবার রাতে রাজধানীর হাতিরঝিল এলাকা থেকে কিশোর গ্যাংয়ের ১১০ জন সদস্যকে আটক করা হয়। এ ছাড়াও এলাকার স্থানীয় সহিংসতা বন্ধে ইতোমধ্যে র্যাব-পুলিশ মোহাম্মদপুর-মিরপুরে অভিযান চালিয়ে মোট ৩ শতাধিক সদস্যকে আটক করেছে। সর্বশেষ কিশোর গ্যাং সদস্যদের আঘাতে মোহাম্মদপুরে এক কিশোর নিহত হয়।
কালের আলো/বিএআর/এমএম