রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে রাষ্ট্রপতির আন্তর্জাতিক তৎপরতায় আশার আলো

প্রকাশিতঃ 11:00 pm | June 15, 2019

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো :

বহুমাত্রিক বৈশিষ্ট্যের অধিকারী, সৃষ্টিশীল ও অনন্য রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ। তিনি বাংলাদেশের সাংবিধানিক প্রধান। যোগ্যতার মাপকাঠিতেও তিনি শ্রেষ্ঠ। কথা বলেন বাস্তবতার নিরিখে। দূরদর্শী নেতৃত্বগুণ, দৃঢ় মনোবল এবং কূটনৈতিক দক্ষতায় অভিজ্ঞ এ মানুষটি নিজেকে নিয়ে গেছেন অনন্য এক উচ্চতায়।

রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় দিয়ে গোটা বিশ্বে প্রশংসা কুড়ানো বঙ্গবন্ধু কন্যা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে মিয়ানমারের বেঁকে বসার ফলে আন্তর্জাতিক তৎপরতাতেই বিশেষ নজর দিয়েছে। এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ।

গত দু’মাসে ভারত ও তাজিকিস্তান সফর করেছেন তিনি। ভারতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি’র সঙ্গে সাক্ষাতে তিস্তার পানিবন্টনের বিষয়টি মীমাংসার জন্য যেমন জোর দাবি জানিয়েছেন তেমনি রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে দিল্লির সহযোগিতা কামনা করেছেন রাষ্ট্রপতি।

চলতি মাসে তাজিকিস্তান সফরকালেও রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে নিজ ভূমিতে নিরাপত্তা ও মর্যাদার সঙ্গে প্রত্যাবাসনের জন্য কনফারেন্স অন ইন্টার‌্যাকশন অ্যান্ড কনফিডেন্স বিল্ডিং মেজার্স ইন এশিয়া’র (সিআইসিএ) অংশীদারদের স্বত:স্ফূর্ত সমর্থন ও সহযোগিতা চেয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।

রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে বিশ্বমঞ্চে রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদের এমন তৎপরতায় আশার আলো দেখছেন ষোল কোটির বাংলাদেশ। তাঁরা বলছেন, গুরুত্বপূর্ণ দু’টি দেশে রাষ্ট্রপতির কর্মযজ্ঞ রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

জানা যায়, রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ গত মাসে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে তিনদিনের সফরে নয়াদিল্লি যান। সেখানে শুক্রবার (৩১ মে) রাষ্ট্রপতি হায়দরাবাদ হাউসে নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বাংলাদেশের রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে দিল্লির সহযোগিতা কামনা করেন।

এর প্রেক্ষিতে ভারতের পূর্ণ সহযোগিতার আশ্বাস দিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন, ‘রোহিঙ্গা সমস্যা শুধু বাংলাদেশের একার নয়। এটা সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ার জন্য মারাত্মক হুমকি। আমরা মনে করি জরুরি ভিত্তিতে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান হওয়া উচিত। কাজেই বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে আমরা এ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করবো।’

দীর্ঘস্থায়ী, দ্বিপক্ষীয় ঐতিহাসিক ও ভ্রাতৃপ্রতিম বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সম্পর্কের প্রসঙ্গ টেনে সেই সময় মোদি বলেন, ‘ভারত ও ভারতের জনগণ সব সময় বাংলাদেশের পাশে থাকবে।’

এ সময় বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান চমৎকার দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, ‘এ সম্পর্ক জোরদার ও সমৃদ্ধ হয়েছে বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির রাষ্ট্রনায়কোচিত নেতৃত্বের কারণে।’

পরে বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ ৭ দিনের সফরে তাজিকিস্তান ও উজবেকিস্তান সফরে ঢাকা ছাড়েন রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ। মধ্য এশিয়ার দু’টি দেশে এই সফর চলাকালে রাষ্ট্রপতি তাজিকস্তানের রাজধানী দুশানবেতে কনফারেন্স অন ইন্টারেকশন অ্যান্ড কনফিডেন্স বিল্ডিং মেজার্স ইন এশিয়া (সিআইসিএ) এর পঞ্চম সম্মেলনে যোগ দেন। তিনি আগামী ১৬ জুন তার উজবেকিস্তান সফরও শুরু করবেন।

শনিবার (১৫ জুন) তাজাকিস্তানের রাজধানী দুশানবের নাভরুজ প্রাসাদে অনুষ্ঠিত (সিআইসিএ) পঞ্চম সম্মেলনে ভাষণে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে নিজ ভূমিতে নিরাপত্তা ও মর্যাদার সঙ্গে প্রত্যাবাসনের জন্য কনফারেন্স অন ইন্টার‌্যাকশন অ্যান্ড কনফিডেন্স বিল্ডিং মেজার্স ইন এশিয়া’র (সিআইসিএ) অংশীদারদের স্বত:স্ফূর্ত সমর্থন ও সহযোগিতা চান রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ।

তিনি বলেন, ‘১১ লাখ রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশ আশ্রয় দিয়েছে। রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে মিয়ানমারের সঙ্গে আমরা চুক্তি করেছি। এতে যদি সমাধান না হয়, তাহলে এই সংকট গোটা অঞ্চলে অস্থিতিশীলতা তৈরি করতে পারে।’

রোহিঙ্গা সংকটের ব্যাপারে বাংলাদেশের অবস্থান তুলে ধরে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘ভয়ঙ্কর গণহত্যা ও ব্যাপকভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার রোহিঙ্গা জনগণের জন্য বাংলাদেশের দ্বার উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। জাতিগত নিধন ও সীমাহীন মানবিক বিপর্যয়ের এই ভয়াবহ ঘটনা পাঠ্যবইয়ে নজির হিসেবে স্থান পেয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গারা নিজ ভূমি থেকে পালিয়ে প্রতিবেশী দেশে আশ্রয় চাওয়ার পরে মানবিক বিবেচনায় বাংলাদেশ সরকার তাদের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়।’

রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ বলেন, ‘এশিয়ার শান্তি, নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার উন্নয়নে সহযোগিতা জোরদারে বহুজাতিক সংস্থা সিআইসিএ গঠিত হয়েছে।’ এই জটিল চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সমন্বিত প্রচেষ্টা ও সক্ষমতা বাড়ানো প্রয়োজন।’

কালের আলো/এমএইচএ/এএ

Print Friendly, PDF & Email