জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় উন্নত বিশ্বকে এগিয়ে আসার আহ্বান উপদেষ্টা রিজওয়ানার
প্রকাশিতঃ 3:27 pm | October 02, 2025

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:
জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় উন্নত বিশ্বকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানি সম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তিনি বলেন, বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় রূপান্তরমূলক পরিবর্তন আনতে উন্নত বিশ্বকে বাড়তি অর্থায়ন, প্রযুক্তি হস্তান্তর এবং শক্তিশালী আন্তর্জাতিক সহযোগিতা নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে।
বুধবার ব্যাংককে অনুষ্ঠিত নবম এশিয়া-প্যাসিফিক জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজন ফোরামের মন্ত্রীপর্যায়ের বৈঠকে তিনি এ কথা বলেন।
রিজওয়ানা হাসান বলেন, সাহসী ও উদ্ভাবনী পদক্ষেপের মাধ্যমে বাংলাদেশ গত কয়েক দশকে শুধু জীবন রক্ষা করেনি; বরং ভূমি, পানি, জীববৈচিত্র্য ও উপকূলীয় ব্যবস্থাপনাও সুরক্ষিত করেছে। বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন কৌশল ও কর্মপরিকল্পনা এবং জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনার আওতায় আটটি ক্ষেত্রে ১১৩টি কর্মসূচি গ্রহণ করেছে, যার আনুমানিক ব্যয় প্রায় ২৩ হাজার কোটি মার্কিন ডলার। এ ছাড়া বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ড বিশ্বের প্রথম দেশীয় অভিযোজন তহবিল হিসেবে কাজ করছে।
তিনি আরও বলেন, ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির আওতায় বর্তমানে ৭৮ হাজারেরও বেশি স্বেচ্ছাসেবক কাজ করছেন, যাদের অর্ধেক নারী। স্থাপন করা হয়েছে ৪ হাজার ২৯১টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র ও ৫২৩টি বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র। প্রতিবন্ধীদের জন্য বিশেষ উদ্ধার নৌযান এবং উপকূলীয় এলাকায় কমিউনিটি রেডিওর মাধ্যমে আগাম সতর্কীকরণ ব্যবস্থা চালু রয়েছে।
পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, খণ্ডকালীন ও সীমিত প্রকল্প থেকে সরে এসে কৃষি, পানি, জীববৈচিত্র্য ও উপকূলীয় ব্যবস্থাপনাসহ সব খাতে সমন্বিত পরিকল্পনা গ্রহণ জরুরি। এ জন্য জলবায়ুবান্ধব প্রযুক্তি, প্রকৃতিনির্ভর সমাধান ও নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বাড়াতে হবে।
খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়ে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশ খরা, লবণাক্ততা ও জলমগ্ন সহনশীল ধান উদ্ভাবন করেছে এবং ভাসমান কৃষি জনপ্রিয় করেছে। বরেন্দ্র অঞ্চল ও হাওরাঞ্চলে প্রকৃতিনির্ভর প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে এবং টাঙ্গুয়ার হাওরের সহ-ব্যবস্থাপনা জীববৈচিত্র্য রক্ষা ও স্থানীয় জনগোষ্ঠীর স্থিতিশীলতা বাড়িয়েছে। উপকূলীয় বাঁধ ও মিঠাপানির ব্যবস্থাপনা লবণাক্ততা মোকাবিলায় কার্যকর ভূমিকা রাখছে।
উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশের অভিযোজন সাফল্যের মূল চালিকা শক্তি হলো শক্তিশালী নীতি ও শাসনব্যবস্থা, জনগণভিত্তিক নেতৃত্ব ও উদ্ভাবনী অর্থায়ন। সংবিধানের ১৮(ক) অনুচ্ছেদ এক্ষেত্রে আইনগত ভিত্তি দিয়েছে। তৃণমূল পর্যায়ের উদ্ভাবন, স্বেচ্ছাসেবক নেটওয়ার্ক, জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ড ও জলবায়ু অর্থায়ন কাঠামো বাংলাদেশের অভিযোজন সক্ষমতাকে বিশ্বে অনন্য করে তুলেছে।
এই বৈঠকে আরও বক্তব্য রাখেন জাপানের পরিবেশ বিষয়ক উপমন্ত্রী ডোই কেনতারো, যুক্তরাজ্যের প্রতিনিধি জন ওয়ারবার্টন, জাতিসংঘ পরিবেশ কর্মসূচির আঞ্চলিক পরিচালক দেচেন সেরিং, ফিলিপাইনের পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের সহকারী সচিব নোরালেন উয় এবং এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের থাইল্যান্ড মিশনের কান্ট্রি ডিরেক্টর আনুজ মেহতা।
কালের আলো/এসএকে