দেনার টাকা পরিশোধে নবজাতককে বিক্রি করলেন মা
প্রকাশিতঃ 11:19 am | October 02, 2025

ঝিনাইদহ প্রতিবেদক, কালের আলো:
দেনার টাকা পরিশোধের জন্য নবজাতককে (ছেলে) বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন মা সুমাইয়া খাতুন। বিনিময়ে মিলেছে হাসপাতালের বিল পরিশোধ ও কিছু নগদ (৬৫ হাজার) টাকা।
বুধবার (১ অক্টোবর) স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো এ সংবাদ প্রকাশ করে। ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার নেপা মোড় এলাকার পিয়ারলেস ক্লিনিকে এ ঘটনা ঘটেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ৪ মাসের গর্ভবতী থাকাকালীন হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে সুমাইয়ার স্বামী মারা যান। এরপর এ নারীর জীবনে নেমে আসে চরম সংকট। স্বামী কিংবা বাবা কোনো বাড়িতেই মেলেনি ঠাঁই। অবশেষে বৃদ্ধা নানির বাড়িতে ঠাঁই হয় তার।
মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে প্রসব বেদনা উঠলে এক প্রতিবেশীর মাধ্যমে স্থানীয় এক ক্লিনিকে সিজার অপারেশনের মাধ্যমে ছেলে সন্তানের জন্ম দেন সুমাইয়া। পরে অভাবের তাড়নায় নবজাতক সন্তানকে বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন তিনি। বিনিময়ে মিলেছে হাসপাতালের বিল পরিশোধ ও কিছু নগদ (৬৫ হাজার) টাকা।
সুমাইয়া উপজেলার যাদবপুর ইউপির আনসার মোড়ের সাত্তার আলীর ছেলে মৃত আলামিনের স্ত্রী।
ক্লিনিক সূত্র জানায়, অভাবের সুযোগটাই নিয়েছে একটি দুষ্টচক্র। ৬৫ হাজার টাকার বিনিময়ে ওই অসহায় মা গর্ভের সন্তান তুলে দেন এক নিঃসন্তান দম্পতির হাতে। তাদের মধ্যস্থতার দায়িত্বে ছিলেন ক্লিনিকেরই এক নার্স।
নবজাতককে কিনে নেওয়া নিঃসন্তান দম্পতির বাড়ি কুমিল্লায়। নবজাতককে পেয়ে এই দম্পতি হাসপাতালের বিলসহ ৬৫ হাজার টাকা দিয়েছেন।
নবজাতকের মা সুমাইয়া বলেন, ‘স্বামীর মৃত্যুর পর গর্ভাবস্থায় না পেয়েছি স্বামীর বাড়িতে ঠাঁই, না পেয়েছি বাবার বাড়িতে। নানির বাড়িতে থেকে গর্ভবতী অবস্থায় ধার-দেনা করে কোনো মতে চলেছি। ক্লিনিকের খরচ ও সন্তানকে মানুষ করা আমার পক্ষে সম্ভব না। এ কারণে নবজাতক সন্তানকে বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘যারা দত্তক নিয়েছে, তাদের আমি চিনি না। তবে শুনেছি যে তাদের বাড়ি কুমিল্লায়।
এ ঘটনায় পিয়ারলেস প্রাইভেট হাসপাতালের মালিক সেলিম রেজা বাবু বলেন, ‘সিজারের পর রোগীর দেখাশোনা ছাড়া আমার করার কিছু নেই। রোগী যদি কারও সঙ্গে আপস করে সন্তান দিয়ে দেয়, সেটার জন্য আমি দায়ী নই।
মহেশপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের (টিএসও) হেলেনা আক্তার নিপা বলেন, ‘আমরা আপনাদের মাধ্যমে বিষয়টি শুনলাম। তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হলে দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মহেশপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) খাদিজা আক্তার জানান, ঘটনা যদি সত্য হয়, তাহলে সংশ্লিষ্ট ক্লিনিকের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
কালের আলো/আরডি/এমডিএইচ