বিশ্বমঞ্চে শান্তিরক্ষায় নিজের অভিজ্ঞতার গল্প শুনালেন সেনাপ্রধান

প্রকাশিতঃ 9:28 pm | May 22, 2019

বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো :

১৪ বছর আগের অভিজ্ঞতা থেকেই কথা বললেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ। ফিরে গেলেন ২০০৫-২০০৬ সালের স্মৃতিতে। হৃদয়ের গভীরে এ দিনগুলো যেন ঘুমিয়ে আছে বহুকাল!

চলার পথে অনেক স্মৃতির ভাঁজে ভাঁজে অমলিন দিনগুলোর বাস্তব অভিজ্ঞতা তুলে ধরলেন বিশ্বমঞ্চে।

আরো পড়ুন: বিশ্ব শান্তিরক্ষায় বাংলাদেশের কর্মতৎপরতা লাল-সবুজের পতাকার সুনামের স্মারক, বললেন সেনাপ্রধান

একই সঙ্গে বিশ্বকে পথ দেখালেন লাল-সবুজের গর্বিত এ সন্তান, দেশপ্রেমিক বাহিনীর প্রধান। সময়ের অবিশ্রান্ত ধারায় চলমান সময়ের মাঝে বিলীন হতে দেননি জীবনের সেই কঠিন মুহুর্তগুলোকে। স্মৃতির কোষে জমাট বেঁধে রেখেছেন।

জীবনের উচ্ছ্বলতা আর অননুমেয় উচ্ছ্বাসের সময়টা কাটিয়েছেন জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী মিশনে। ওই সময়ই প্রমাণ রেখেছেন নিজ বাহিনীর সক্ষমতা ও দক্ষতায়। তবুও স্মৃতিকাতরতায় ন্যুব্জ না হয়ে পরিপ্লুত সেসব দিন ও ক্ষণের কথা উচ্চারণ করলেন।

জীবনে চলার পথে বাঁকে বাঁকে, ক্ষণে ক্ষণের উপলব্ধি, নিজের অভিজ্ঞতা চেতনায় যে গাঢ় ছাপ রেখে গেছে স্মৃতির বাতায়নে তা যেন বারবার ফিরে আসে তাঁর ভুবনে। অতীতের স্মৃতি রোমন্থনে ঝাপসা হয়ে আসা অনেক অস্পষ্ট স্মৃতিও তখন ধরা দেয় বর্তমানের দোরগোড়ায়।

আরো পড়ুন: বঙ্গবন্ধুর ‘বিরল’ সেই ছবিতে বিমুগ্ধ প্রধানমন্ত্রী, ভালোবাসার অপূর্ব নিদর্শন সেনাপ্রধানের

বাংলাদেশের গর্বিত সেনা সদস্যের ‘প্রাণভোমরা’ এবং জীবনবোধের এ অনন্য সারথী উপস্থাপন করলেন জাতিসংঘ শান্তি মিশনে নিজের ১৪ বছর আগের অভিজ্ঞতার গল্প। বললেন, এ কার্যক্রমে বাংলাদেশের তিন দশকের সক্রিয় অংশগ্রহণ ও গৌরবময় ভূমিকার কথা।

বাংলাদেশের একমাত্র চারতারকা জেনারেল আজিজ আহমেদ ২০০৫ থেকে ২০০৬ সালে সুদানে নিয়োজিত জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী মিশন আনমিস’র ফোর্স কমান্ডারের সামরিক উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন। ওই সময় ৫০ টির ও বেশি দেশের প্রতিনিধিদের সাথে সম্মিলিতভাবে কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে তাঁর ঝুলিতে।

আরো পড়ুন: ঐকতানেই মিশনের সাফল্য, দ্বন্দ্বে বিঘ্ন, বলছেন সেনাপ্রধান

আরো পড়ুন: শান্তিরক্ষা মিশনে সাফল্য-অন্তরায়ের কারণ বললেন সেনাপ্রধান

সেই অভিজ্ঞতাই ১৪ বছর পর বিশ্বমঞ্চে উপস্থাপন করলেন সেনাপ্রধান। শান্তিরক্ষায় নিয়োজিতদের নানা সমস্যা, সঙ্কটের চিত্র তুলে ধরে সমাধানেরও পথ বাতলে দিলেন।

ইউএস আর্মি প্যাসিফিক কমান্ডার জেনারেল রবার্ট বি ব্রাউন’র আমন্ত্রণে হাওয়াই সফররত সেনাবাহিনী প্রধান মঙ্গলবার (২১ মে) মার্কিন অঙ্গরাজ্যের সবুজ দ্বীপ হাওয়াইয়ের রাজধানী হুনুলুলুতে অনুষ্ঠিত ‘ল্যান্ড ফোর্সেস অফ দ্যা প্যাসিফিক সিম্পাসিয়াম এবং এক্সপজিশন (লেনপেক) এ সবার দৃষ্টি কাড়লেন।

জানালেন, সফলতার সঙ্গে অংশ নেওয়া বাংলাদেশের ১ লাখ ৫৫ হাজার শান্তিরক্ষী সদস্যের বিশ্বের ৪০ টি দেশে ৫৪ টি পিস কিপিং মিশনে তিন দশকের বিস্ময়কর অভিজ্ঞতার কথা।

আরো পড়ুন: ইউএস আর্মি প্যাসিফিক কমান্ডারের আমন্ত্রণে হাওয়াই যাচ্ছেন সেনাপ্রধান

বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ বিভিন্ন দেশের শীর্ষস্থানীয় সামরিক কর্মকর্তাদের নিয়ে আয়োজিত প্যানেল ডিস্কাশনে প্রধান বক্তা হিসেবে ‘ল্যান্ড ফোর্সেস ইনক্রিজড ইন্টারোপেরাবিলিটি উইথ এলাইজ এন্ড পার্টনারস’ বিষয় বস্তুর ওপর বক্তব্য দিতে গিয়ে তিনি প্রবেশ করেন তথ্যের গভীরে। এ সময়টাতে দৃশ্যকল্প সৃষ্টিতেও পারঙ্গমতা দেখান তিনি।

সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ নিজের বক্তব্যের শুরুতেই বলেন, ‘এটি আমার জন্য খুবই সম্মানের। এমন একটি ফোরামে বক্তব্য রাখা যেখানে বিশ্বের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা নেতৃস্থানীয় সামরিক পেশাদাররা একত্রিত হয়েছেন।

আরো পড়ুন: হাওয়াইতে সিম্পোজিয়ামে সেনাপ্রধানের বক্তব্য নিয়ে ধারাবাহিক প্রতিবেদন কালের আলোতে

আমি ‘ল্যান্ড ফোর্স ইনক্রিজড ইন্টার প্যারাবিলিটি উইথ এলাইস এন্ড পার্টনারস’র একজন প্যানেল মেম্বার হিসেবে আপনাদের সামনে কথা বলার সুযোগ পাওয়ায় অত্যন্ত আনন্দিত।’

দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা এবং দুর্যোগে সংকট মোকাবেলায় এমনিতেই বিকল্পহীন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। আবার বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায়ও বড় অনুপ্রেরণার নাম হয়ে উঠেছে জেনারেল আজিজ আহমেদের নেতৃত্বাধীন এই বাহিনী।

আরো পড়ুন: সেনাবাহিনীর সক্ষমতা বৃদ্ধিকেই শান্তি অভিযানে সাফল্যের চাবিকাঠি মনে করেন সেনাপ্রধান

১৯৮৮ সালে ইরাক শান্তি মিশনে মাত্র ১৫ জন সেনাসদস্যের যোগ দেওয়ার মধ্য দিয়ে যে শুভযাত্রার সূচনা হয়েছিল; সংখ্যা ও গুণগত দিক থেকে গত তিন দশকে তাঁর বহুল বিস্তৃতি উৎসাহব্যঞ্জক।

বিশেষ করে কুয়েত পুনর্গঠনে গত ২৮ বছর যাবত নিরবিচ্ছিন্নভাবে কাজ করে যাচ্ছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। ১৯৯১ সালে উপসাগরীয় যুদ্ধের সময় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কুয়েতের নিরাপত্তা ও উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

আরো পড়ুন: মুক্তিযুদ্ধ ও সেনাবাহিনীর আন্ত-অভিযানের সূচনার ইতিকথা জানালেন সেনাপ্রধান

এর আগে গত শুক্রবার (১৭ মে) পাঁচ দিনের সরকারি সফরে হাওয়াই’র উদ্দেশ্যে ঢাকা ত্যাগ করেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ। হাওয়াই বিমানবন্দরে পৌঁছার পর ইউএস আর্মি প্যাসিফিক কমান্ড’র ডেপুটি চীফ মেজর জেনারেল ডেনিয়েল এফ ম্যাকডেনিয়েল তাকে স্বাগত জানান।

এরপর গত সোমবার (২০ মে) সেনাপ্রধান সস্ত্রীক ইউএস আর্মি প্যাসিফিক কমান্ডার জেনারেল রবার্ট বি ব্রাউন’র নিমন্ত্রণে তাঁর সরকারি বাসভবনে যান।

কালের আলো/এইকেআ/এএএমকে

Print Friendly, PDF & Email