খেলাপি ঋণ বেড়েছে পৌনে এক লাখ কোটি টাকা

প্রকাশিতঃ 9:49 pm | June 15, 2025

কালের আলো রিপোর্ট:

ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়েছে। খেলাপি ঋণের পরিমাণ এখন ৪ লাখ ২০ হাজার ৩৩৫ কোটি টাকা। যা মোট ঋণের ২৪ দশমিক ১৩ শতাংশ। অর্থাৎ বিতরণ করা ঋণের চার ভাগের এক ভাগই খেলাপি হয়ে পড়েছে। তিন মাসের ব্যবধানে খেলাপি ঋণ বেড়েছে পৌনে এক লাখ কোটি টাকা। আবার ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ–ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ীদের অনেক ঋণ অনিয়মিত হয়ে পড়ছে। এতে গত মার্চ শেষে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ বেড়েছে।

রোববার (১৫ জুন) বাংলাদেশ ব্যাংক জানায়, তিন মাস আগে ২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর খেলাপি ঋণের হার ছিল ২০ দশমিক ২০ শতাংশ। সে সময় খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৩ লাখ ৪৫ হাজার ৭৬৫ কোটি টাকা। আর মোট ঋণের পরিমাণ ছিল ১৭ লাখ ১১ হাজার ৪০২ কোটি টাকা। তিন মাসের ব্যবধানে খেলাপি ঋণ বাড়ল ৭৪ হাজার ৫৭০ কোটি টাকা। যা মোট ঋণের ৩ দশমিক ৯৩ শতাংশ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ব্যাংক থেকে নামে–বেনামে যে অর্থ বের করে নেওয়া হয়েছে, তা এখন খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত হতে শুরু করেছে। আবার ঋণখেলাপির নিয়ম আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করায় খেলাপি ঋণ বাড়ছে। যেসব ঋণ নবায়ন করা হয়, তার অনেকগুলো আদায় হচ্ছে না। অনিয়মের কারণে অনেক ঋণ খেলাপি করে দিচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এতেই খেলাপি ঋণ বাড়ছে, যা সামনে আরও বাড়তে পারে।

জানা গেছে, গত মার্চ শেষে ব্যাংক খাতে মোট ঋণ বেড়ে হয়েছে ১৭ লাখ ৪১ হাজার ৯৯২ কোটি টাকা। এর আগে ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকব্যবস্থায় মোট ঋণ ছিল ১৭ লাখ ১১ হাজার ৪০২ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত মার্চ রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকে মোট বিতরণ করা ঋণের মধ্যে খেলাপি ঋণের হার বেড়ে হয়েছে ৪৫ দশমিক ৭৯ শতাংশ, যা ডিসেম্বরে ছিল ৪২ দশমিক ৮৩ শতাংশ। বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকে ঋণের ২০ দশমিক ১৬ শতাংশ খেলাপি হয়ে পড়েছে, যা ডিসেম্বরে ছিল ১৫ দশমিক ৬০ শতাংশ। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ যখন সরকার গঠন করে, তখন মোট খেলাপি ঋণ ছিল ২২ হাজার ৪৮১ কোটি টাকা। এর পর থেকে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়েই চলছে। অর্থনীতিবিদেরা অনেক দিন ধরেই অভিযোগ করছেন, তৎকালীন সরকারের ঘনিষ্ঠ ও প্রভাবশালীরা নানা অনিয়মে ব্যাংক থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ বের করে নিয়েছেন, যার একটা বড় অংশই বিদেশে পাচার হয়েছে।

২০২৪ সালে আওয়ামী লীগের পতন পরবর্তী নতুন গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেছিলেন, বিগত সরকার খেলাপি ঋণ নানাভাবে লুকিয়ে রেখেছিল। এসব খেলাপি ঋণ অনুসন্ধান করা হচ্ছে। এটা বেড়ে ৩০ শতাংশ হতে পারে। সেই হিসেবে প্রতি তিন মাসে খেলাপি ঋণ পরিস্থিতির চিত্র তুলে আনার সময় এর পরিমাণ বাড়ছে।

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ যখন সরকার গঠন করে, তখন মোট খেলাপি ঋণ ছিল ২২ হাজার ৪৮১ কোটি টাকা। এরপর থেকে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়েই চলছে। অর্থনীতিবিদেরা অনেক দিন ধরেই অভিযোগ করছেন, তৎকালীন সরকারের ছত্রচ্ছায়ায় ব্যাংক থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ লুটপাট হয়েছে, যার একটা বড় অংশই বিদেশে পাচার হয়েছে।

ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের ঘনিষ্ঠ ও সমালোচিত ব্যবসায়ী গোষ্ঠী এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণমুক্ত হওয়া ব্যাংকগুলোর ঋণের প্রকৃত চিত্র বের হতে শুরু করে। তাদের মধ্যে ইসলামী ব্যাংকে খেলাপি ঋণ বেশি বেড়েছে। একইভাবে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক ও সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংকের খেলাপি ঋণও বেশ বেড়েছে। পাশাপাশি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের মালিকানাধীন বেক্সিমকো গ্রুপ, বসুন্ধরা গ্রুপ, এস আলমসহ আরও কিছু বড় ব্যবসায়ী গোষ্ঠী ঋণখেলাপি হয়ে পড়েছে। এতেও বেড়েছে খেলাপি ঋণ।

কালের আলো/এমএএইচএন