প্রস্তাবিত বাজেট নব্য ফ্যাসিবাদী রাজনৈতিক দর্শনের প্রতিফলন: জিএম কাদের

প্রকাশিতঃ 8:50 pm | June 03, 2025

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক, কালের আলো:

প্রস্তাবিত বাজেটে ক্ষুধার্ত ও অভুক্ত মানুষের সংখ্যা বাড়বে- এমন দাবি করে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের বলেছেন, ‘বাজেট একটি সরকারের রাজনৈতিক দর্শনের প্রতিফলন ও বাস্তবায়নের অন্যতম প্রধান বাহন হিসেবে গণ্য করা যায়। সে হিসেবে সার্বিক মূল্যায়নে বর্তমান বাজেট ফ্যাসিবাদের দোসর ও নব্য ফ্যাসিবাদী রাজনৈতিক দর্শনের প্রতিফলন বলে আমাদের কাছে মনে হয়েছে।’

মঙ্গলবার (৩জুন) প্রস্তাবিত বাজেট প্রতিক্রিয়ায় এসব কথা বলেন জিএম কাদের।

তিনি বলেন, ‘পতিত ফ্যাসিবাদ সরকারের বিগত বছরের বাজেটকে মোটামুটি অনুসরণ করে ওই বাজেটের ধারাবাহিকতা রক্ষা করা হয়েছে বর্তমান বাজেটে। বিগত বাজেটকে বর্তমান বাস্তবতার নিরিখে কিছু কাটছাঁট করা হয়েছে ও কিছু বাড়িয়ে রাখা হয়েছে। মূল কাঠামো বা নীতির বা রাজনৈতিক দর্শনের তেমন কোনো নতুনত্ব লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। মূল্যবোধের জায়গা থেকে প্রাক্তন সরকারের ভাবধারার বাইরে তেমন কিছু চোখে পড়ছে না।’

জিএম কাদের বলেন, ‘রুটিন কাজ, বাজেট দিতে হবে তাই দেওয়া। গতানুগতিক ধারাবাহিকতা রক্ষা। গত বাজেট কাঠামো থেকে এবারের বাজেটে তেমন কোনো ব্যত্যয় বা সংস্কার লক্ষ্যণীয় নয়। তবে বর্তমান বাজেট বাস্তবায়নযোগ্য নয়। রাজস্ব আহরণের যে লক্ষ্যমাত্রা ধার্য্য করা হয়েছে, বর্তমান প্রেক্ষাপটে তা অবাস্তব এবং কাছাকাছি যাওয়াও সম্ভব নয়।

তিনি বলেন, ‘যতদিন রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা না আসে এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হয়, ততদিন বিদেশি ঋণ বা সাহায্য পাওয়া নিয়ে সংশয় আছে। ফলে বাজেট ঘাটতি আকার অনেক বড় হবে এবং অনেক প্রয়োজনীয় খরচ মেটানো সরকারের জন্য বড় ধরণের সমস্যা হবে বলে আমরা মনে করি।’

জাপা চেয়ারম্যান বলেন, ‘মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত মানুষের জন্য কোনো স্বস্তির ব্যবস্থা নেই। প্রবৃদ্ধির নিম্নগামী অবস্থানের কারণে কর্মসংস্থান ও ব্যবসা বাণিজ্যের মন্দাভাব দেখা দেবে। প্রাক্কলিত মূল্যস্ফীতি অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবসম্মত নয়। মূল্যস্ফীতির লাগাম টানা সম্ভব হবে মনে হয় না। ফলে সাধারণ মানুষ দরিদ্র থেকে দরিদ্রতর অবস্থায় পৌঁছাবে। দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতির কারণে অর্ধভুক্ত ও অভুক্ত মানুষের সংখ্যা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাবে বলে আশঙ্কা করছি। সার্বিকভাবে দেশের মানুষের জন্য এ বাজেট কোনো সুখবর বা স্বস্তি আনছে না বলা যায়।’

জিএম কাদের আরও বলেন, ‘এই বাজেটের প্রবৃদ্ধি নিম্নগামী। প্রবৃদ্ধি নিম্নগামী হলে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা সম্ভব হবে না। স্বাভাবিক ব্যবসা-বাণিজ্য ব্যাহত হবে এবং কম রাজস্ব আদায় হবে। মূল্যস্ফীতির হার ৬.৫ শতাংশ ধরা হয়েছে। এপ্রিল পর্যন্ত এই হার ৯.১৭ পর্যন্ত আনা সম্ভব হয়েছে। সামনের দিকে মূল্যস্ফীতির হার কমবে এর কোনো লক্ষণ আমরা দেখছি না। এই বাজেটে ক্ষুধার্ত ও অভুক্ত মানুষের সংখ্যা বাড়বে।’

তিনি বলেন, ‘বর্তমান সরকার বিদ্যুৎখাতের কোনো উন্নয়ন করতে পারেনি। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ২২ হাজার ৭০৫ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে, যার বেশিরভাগই ভর্তুকি। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে বিদ্যুতের দাম না বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হবে তা বোঝা যাচ্ছে। ডলারের বিপরীতে টাকার মূল্যমান কমলেই সবকিছুর দাম বেড়ে যাবে, তখন সরকার বিদ্যুতের দাম বাড়াবে।’

জিএম কাদের বলেন, ‘ফ্যাসিস্ট সরকার ও বর্তমান সরকারের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। গ্যাসের বিষয়ে বাজেটে বায়োবীয় কথা বলা হয়েছে। ভবিষ্যতে গ্যাসের দামও বাড়ানো হবে। কালো টাকা সাদা করতে দেওয়া নীতি বহির্ভূত বা গর্হিত কাজ। বর্তমান সরকারও দূর্নীতিবাজদের উৎসাহিত করতে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ রেখেছে। বিদেশে পাচার হওয়া টাকা দেশে ফিরিয়ে আনার কোনো পরিকল্পনা পরিষ্কারভাবে বলা হয়নি বাজেটে।’

তিনি বলেন, ‘রাজস্ব দিয়ে সরকার পরিচালনা করতে হবে, উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালিত হবে কিভাবে? সামাজিক নিরাপত্তাখাতে যেসব কথা বলা হয়েছে, তা কিভাবে বাস্তবায়ন করবে? বৈষম্যহীন সমাজ গঠনে এই বাজেট দিয়ে সরকার কিভাবে কাজ করবে তা পরিস্কার নয়। উদ্যোক্তা তৈরির বিষয়টি আগেও ছিল।’

জিএম কাদের বলেন, ‘এবার বাজেট দেখে মনে হচ্ছে ছাত্ররা সবাই লেখাপড়া বাদ দিয়ে উদ্যোক্তা হবেন। ছাত্ররা ব্যবসার পাশাপাশি রাজনীতিতে যোগ দেবেন তাই মনে হচ্ছে। উদ্যোক্তা তৈরির পাশাপাশি আমরা শিক্ষিত জাতি গড়ে বিশ্বের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় যাবো, এই পরিকল্পনা থাকা উচিত। ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের বাজেট অনুকরণে এই বাজেট তৈরি হয়েছে। কোথাও বাড়ানো হয়েছে, কোথাও কমানো হয়েছে। বৈষম্য হ্রাস ও সামাজিক নিরাপত্তা এড়িয়ে গেছে।’

তিনি বলেন, ‘আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকার বিভিন্ন ব্যাংক ও সংস্থা থেকে ধারকর্য করে দেশ চালাতে পেরেছে, কিন্তু বর্তমান সরকার তা করতে পারবে কিনা সন্দেহ আছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা না থাকলে দেশি-বিদেশি কোনো প্রতিষ্ঠানই ধার দেবে না বর্তমান সরকারকে। সাধারণ মানুষের জন্য এই বাজেটে কোনো সুখবর বা স্বস্তি নেই।’

কালের আলো/এএএন