১১৭৪ কোটি টাকার ঋণ জালিয়াতি, সালমান এফ রহমানসহ আসামি ৩৯

প্রকাশিতঃ 7:01 pm | June 03, 2025

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:

অস্তিত্বহীন কোম্পানির নামে ঋণ দেখিয়ে প্রায় এক হাজার ১৭৪ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান, তার ছেলে ও আইএফআইসি ব্যাংকের এমডিসহ ৩৯ জনের বিরুদ্ধে পৃথক দুই মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

মঙ্গলবার (৩ জুন) দুদকের উপপরিচালক মো. মুস্তাফিজুর রহমান ও মো. ইয়াছির আরাফাত বাদী হয়ে মামলা দুইটি দায়ের করেছেন বলে সংস্থাটির মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন জানিয়েছেন।

যার মধ্যে প্রথম মামলায় আইএফআইসি ব্যাংক থেকে প্রায় ৬৭৮ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ২২ জন ও ৪৯৬ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে দ্বিতীয় মামলায় ১৭ জনকে আসামি করা হয়েছে।

প্রথম মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, আইএফআইসি ব্যাংকে প্রায় ৬১৮ কোটি টাকা জালিয়াতি, ঋণ জালিয়াতি ও অর্থ আত্মসাতের ঘটনা ঘটেছে। কোনো সহায়ক জামানত বা সঠিক মূল্যায়ন ছাড়াই ২০২৪ সালের ২০ মার্চ এবং ১২ জুন পরিচালনা পর্ষদের দুটি সভায় মোট ৬১৮ কোটি ৯ লাখ ৩১ হাজার ৭৫ টাকা ৮৫ পয়সা বিতরণ করা হয়। ওই সব অর্থ উত্তোলন করে আত্মসাৎ করা হয়েছে। যা সুদ-আসলে ৬৭৭ কোটি ৭৫ লাখ ১৬ হাজার টাকা হয়েছে।

এ মামলার আসামিরা হলেন- সাবেক সংসদ সদস্য ও প্রধানমন্ত্রীর সাবেক বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান, আইএফআইসি ব্যাংকের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ও সালমান এফ রহমানের ছেলে আহমেদ শায়ান ফজলুর রহমান, সাবেক পরিচালক শাহ মনজুরুল হক, সুধাংশু শেখর বিশ্বাস, আর এম নাজমুস সাকিব, কামরুন নাহার আহমেদ, গুলাম মোস্তফা ও মো. জাফর ইকবাল।

এছাড়া আসামিদের তালিকায় রয়েছেন আইএফআইসি ব্যাংকের বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ মুনসুর মোস্তফা, সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শাহ আলম সারোয়ার, উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম এবং তৎকালীন চিফ বিজনেস অফিসার মো. নুরুল হাসনাত।

ব্যাংকের আইটি ও ট্রেজারি বিভাগ থেকেও আসামি করা হয়েছে- ব্যাংকটির তৎকালীন চিফ ইনফরমেশন অফিসার মনিতুর রহমান, হেড অব ট্রেজারি মোহাম্মদ শাহিন উদ্দিন, হেড অব ক্রেডিট অ্যাডমিনিস্ট্রেশন সৈয়দ হাসনুজ্জামান, সাবেক হেড অব অপারেশন হেলাল আহমেদ, সাবেক ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও চিফ রিস্ক অফিসার ইকবাল পারভেজ চৌধুরী এবং তৎকালীন চিফ ম্যানেজার হোসাইন শাহ আলী।

এছাড়া শীর্ষ ঋণগ্রহীতা হিসেবে নাম এসেছে গ্রোয়িং কনস্ট্রাকশন অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলমগীর আলম চৌধুরী এবং চোয়া কনস্ট্রাকশনের পরিচালক সৈয়দা মুনিমা হোসেন. আইএফআইসির প্রিন্সিপাল শাখার অ্যাকটিং ইনচার্জ তাছলিমা আক্তার এবং তৎকালীন রিলেশনশিপ ম্যানেজার সরদার মো. মমিনুল ইসলামকেও এ মামলায় আসামি করা হয়েছে।

অন্যদিকে দ্বিতীয় মামলায় ঋণসুবিধা অপব্যবহার করে জালিয়াতি ও প্রতারণার মাধ্যমে ৪৯৬ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে। এর মধ্যে ৪৩৪ কোটি ৬৪ লাখ টাকা আসল। বাকিটা সুদ। এ মামলায় সালমান এফ রহমান ও তার ছেলেসহ মোট ১৭ জন প্রভাবশালী ব্যক্তি ও ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে আসামি করা হয়েছে।

এজাহারভুক্ত আসামিরা হলেন– সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সাবেক উপদেষ্টা, বেক্সিমকো গ্রুপ ও আইএফআইসি ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান সালমান ফজলুর রহমান; আইএফআইসি ব্যাংকের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ শায়ান ফজলুর রহমান; আইএফআইসি ব্যাংকের সাবেক পরিচালক ও সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী; সার্ভ কনস্ট্রাকশন অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিডি নামের কাগুজে প্রতিষ্ঠঅনের পরিচালক সুলতানা মনামী ও ওই প্রতিষ্ঠানের এমডি মো. মনিরুল ইসলাম; আইএফআইসি ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ শাহ আলম সারোয়ার; সাবেক পরিচালক রাবেয়া জামালী; আর.এম নাজমুস সাকিব; কামরুন নাহার আহমেদ ও মো. জাফর ইকবাল; তৎকালীন চিফ ম্যানেজার ও বর্তমানে উপব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম; সাবেক উপব্যবস্থাপনা পরিচালক ও হেড অব আইডি শাহ মো. মঈনউদ্দিন; সাবেক চিফ বিজনেস অফিসার ও উপব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. নূরুল হাসনাত; বর্তমান উপব্যবস্থাপনা পরিচালক ও চিফ অব আইটি মো. মনিতুর রহমান; হেড অব ট্রেজারি মোহাম্মদ শাহিন উদ্দিন; তৎকালীন রিলেশনশিপ ম্যানেজার ও বর্তমানে ম্যানেজার, নারায়ণগঞ্জ শাখা আবদুর রহমান এবং বেক্সিমকো গ্রুপের ডেপুটি ম্যানেজার (কর্পোরেট ফাইন্যান্স) কৌশিক কান্তি পণ্ডিত।

পট পরিবর্তনের পর ব্যাংক খাতে নানা অনিয়ম, দুর্নীতি আর লুটপাটের অভিযোগে বেক্সিমকো গ্রুপের কর্ণধার সালমান এফ রহমানের বিরুদ্ধে গত আগস্ট মাসে পৃথক পৃথক অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। অভিযোগ রয়েছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা ও বেক্সিমকো গ্রুপের চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান ও অন্যদের বিরুদ্ধে শেয়ারবাজারে জালিয়াতি, প্লেসমেন্ট শেয়ার কারসাজি ও প্রতারণার মাধ্যমে শেয়ারহোল্ডারদের হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট, অবৈধ প্রভাব খাটিয়ে দেশের সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন ব্যাংক থেকে প্রায় ৩৬ হাজার কোটি টাকা ঋণ গ্রহণপূর্বক আত্মসাৎসহ হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচারের অভিযোগ রয়েছে।

কালের আলো/এএএন